প্রতিদিন বেচাকেনা হয় চার থেকে পাঁচ লাখ টাকার জলপাই।
Published : 13 Nov 2023, 11:14 AM
আচার হিসেবে সারা বছর পাওয়া গেলেও আশ্বিন, কার্তিক ও অগ্রহায়ণ এই তিন মাসেই বাজারে দেখা মেলে টক স্বাদের মৌসুমি ফল জলপাইয়ের। আর এ সময়ই জমে উঠে সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার বাগবাটিতে জলপাইয়ের হাট। প্রতিদিন বেচাকেনা হয় চার থেকে পাঁচ লাখ টাকার জলপাই।
জলপাইকেন্দ্রিক জেলার একমাত্র হাটটিতে আশপাশের কানগাতি, হরিনা বাগবাটি, ঘোড়াচড়া, খাগা, সুবর্ণগাতি, ফুলকোচা ও বাক্ষ্রমবাগ গ্রাম থেকে জলপাই নিয়ে আসেন বিক্রেতারা। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলে বেচাকেনা।
সিরাজগঞ্জের বিভিন্ন উপজেলার পাশাপাশি পাবনা ও ঢাকার পাইকারসহ দূর দূরান্ত থেকে আসা ব্যবসায়ীরা এখান থেকে জলপাই কিনে বিক্রি করেন রাজধানীসহ বিভিন্ন জেলায়।
জলপাই বিক্রেতা ঘোড়াচড়া গ্রামের নাসির উদ্দিন বলেন, বাগবাটিতে নিয়মিত হাট বসে সপ্তাহে দুইদিন- রোববার ও বৃহস্পতিবার। কিন্তু মৌসুমে প্রতিদিনই বসে জলপাইয়ের হাট। হাটবারে খাজনা বাবদ টাকা দেওয়া লাগলেও অন্যান্য দিনে বেচাকেনায় কোনো খাজনা দিতে হয় না। যে কারণে পাইকাররা এখানে বাড়তি খরচ ছাড়াই বেচা-কেনা করতে পারেন।
জলপাই গাছের তেমন পরিচর্যা করতে হয় না, দিতে হয় না কোনো প্রকার কীটনাশক। তাই জলপাই চাষিরা সহজেই লাভের মুখ দেখতে পান। সেজন্য বাড়ছে জলপাইয়ের চাষ।
বাগবাটি গ্রামের জহুরুল ইসলাম জানান, শুধু তিনি নন, আশপাশের অন্তত ৭ থেকে ৮টি গ্রামের প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই জলপাই গাছ লাগানো আছে। এছাড়াও এসব এলাকার সরকারি রাস্তার পাশেও কিছু কিছু জলপাই গাছ লাগানো হয়েছে।
এ বছর বৃষ্টি কম হওয়ায় ফলন একটু কম হয়েছে জানিয়ে এই চাষি বলেন, গাছে মুকুল আসার সময় বৃষ্টি হলে জলপাইয়ের ফলন ভাল হয়।
কানগাতি গ্রামের কৃষক হায়দার আলী জানান, গ্রামের তিন-চারটি স্থানে তার অন্তত ৪০টি জলপাই গাছ লাগানো আছে। গাছে মুকুল আসার আগেই স্থানীয় পাইকাররা গাছগুলো কিনে নেয়।
“প্রতি বছরই ফল আসে। ছোট থেকে মধ্যম সারির প্রতিটি গাছ এক থেকে পাঁচ হাজার টাকা এবং বড় আকারের গাছগুলো আরও বেশি দামে বিক্রি হয়ে থাকে।”
সিরাজগঞ্জের শাহানগাছা ডাকাতিয়া বাড়ি এলাকার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী মনিরুল ইসলাম জানান, গাছে মুকুল আসার পরই মালিকদের গাছ থেকে তারা গাছ ক্রয় করেন।
“আকার ভেদে প্রতিটি গাছে ৮ থেকে ১৫ মণ পর্যন্ত জলপাই ধরে। পাইকারি দরে প্রতি কেজি জলপাই ১৫ থেকে ২০ টাকায় বিক্রি হয়ে থাকে। প্রতিদিন এই হাটে ৪ থেকে ৫ লাখ টাকার জলপাই বেচাকেনা হয়।”
জলপাইয়ের ক্রেতা ঢাকা থেকে আসা পাইকারী ব্যবসায়ী মকবুল হোসেন বলেন, “এ অঞ্চলের জলপাই অনেক সু-স্বাদু। যোগাযোগ ব্যবস্থা ভাল থাকায় আসা যাওয়া ও কেনাকাটায়ও কোনো সমস্যা হয় না।”
সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া উপজেলার মোহনপুর গ্রামের পাইকারী ব্যবসায়ী কেরামত আলী জানান, “এই হাট থেকে পাইকারি দরে জলপাই কিনে আমরা বিভিন্ন হাট-বাজারের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করি। তারা সাধারণ ক্রেতাদের কাছে খুচরা মূল্যে বিক্রি করেন।”
সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আনোয়ার সাদাত জানান, আশ্বিন, কার্তিক ও অগ্রহায়ণ এই তিন মাস জলপাইয়ের মৌসুম। নানা পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ টক জাতীয় এই ফল সরাসরি খাওয়া গেলেও আচার হিসেবেই বেশি জনপ্রিয়। এর পাশাপাশি ডাল, ছোট মাছ অথবা সবজির তরকারি রান্নায়ও চমৎকার স্বাদ নিয়ে আসে ফলটি।
জেলায় ফলটির উৎপাদন বাড়াতে কৃষি বিভাগ থেকে কৃষকদের বিভিন্ন পরামর্শ দেওয়া হয়ে থাকে। এ বছর শুধুমাত্র সদর উপজেলাতেই ৩১ হেক্টর জমিতে জলপাইয়ের আবাদ হয়েছে। উৎপাদন লক্ষমাত্রা ধরা হয়েছে ৯১০ মেট্রিক টন।