“অনেকদিন ধরেই আমরা সর্বনিম্ন বেতন ১২ হাজার ৫০০ টাকা করার দাবি জানিয়ে আসছি। তবে মালিকপক্ষ কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না।”
Published : 23 Sep 2024, 02:47 PM
গাজীপুরের কালিয়াকৈরে একটি খাদ্য উৎপাদন কারখানার বিক্ষোভের সময় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অভিযোগে ছয়জনকে আটক করা হয়েছে।
সোমবার সকালে উপজেলার মৌচাক এলাকায় ‘কোকোলা ফুড প্রোডাক্ট লিমিটেড কারখানা’ এলাকায় বিক্ষোভের সময় তাদের আটক করা হয় বলে গাজীপুর শিল্প পুলিশের (জোন-২) পরিদর্শক নিতাই চন্দ্র সরকার জানান।
আটক ছয়জন হলেন- সুনামগঞ্জ জেলার ধর্মপাশা উপজেলার রফিকের ছেলে শাকিল (২০), একই উপজেলার সাইফুলের ছেলে মোবারক (২০), গাইবান্ধা সদর উপজেলার আব্দুল গণির ছেলে নাজমুল মিয়া (২০), শেরপুর জেলার ঝিনাইগাতী উপজেলার ইব্রাহিমের ছেলে খোকন মিয়া (২১), টাঙ্গাইলের বাসাইল থানার কৃষ্ণর ছেলে উজ্জ্বল (২০) ও একই জেলার আব্দুল হালিমের ছেলে সোহাগ (২০)।
তবে তারা শ্রমিক না-কি বহিরাগত সে বিষয়ে তাৎক্ষণিকভাবে কিছু জানাতে পারেনি শিল্প পুলিশ।
এর আগে শ্রমিকরা আধা ঘণ্টা ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে অবরোধ করে রাখে। খবর পেয়ে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা শ্রমিকদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়।
এদিকে কালিয়াকৈর উপজেলার পৃথক এলাকায় তিনটি কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ।
শিল্প পুলিশ ও কারখানার শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রোববার সকালে কোকোলা ফুড প্রোডাক্ট লিমিটেড কারখানার শ্রমিকরা ন্যূনতম মজুরি সাড়ে ১২ হাজার টাকা, হাজিরা বোনাস ৮০০ টাকা, সাধারণ ও বার্ষিক ছুটিসহ ১২ দফা দাবিতে কারখানার ভেতর বিক্ষোভ করতে থাকেন।
এক পর্যায়ে শ্রমিকেরা কারখানার পাশে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন। পরে কারখানা কর্তৃপক্ষ ওই প্রতিষ্ঠান অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, কারখানা বন্ধ ঘোষণা করার পরও সকালে কোকোলা ফুডের শ্রমিকরা কারখানার সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করতে থাকেন। এরপর সকাল ৯টার দিকে তারা ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন। এক পর্যায়ে কিছু শ্রমিক কারখানার ভেতরে ঢুকে করে ভাঙচুর করার চেষ্টা করেন।
খবর পেয়ে শিল্প পুলিশ, থানা-পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা শ্রমিকদের ধাওয়া দেয়। কারখানার ভেতরে অবৈধভাবে প্রবেশ এবং বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অভিযোগে এ সময় ছয়জনকে আটক করা হয়। সেনাবাহিনীর সদস্যরা হ্যান্ডমাইকে শ্রমিকদের কারখানা এলাকা ছেড়ে যাওয়ার নির্দেশ দেন। এরপর সকাল সাড়ে ৯টার দিকে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।
কোকোলা ফুড প্রোডাক্ট কারখানার শ্রমিক আব্বাস উদ্দিন বলেন, তাদের কারখানায় পাঁচ হাজারের বেশি শ্রমিক কাজ করেন। তাদের সর্বনিম্ন বেতন দেওয়া হয় ৮ হাজার টাকা।
তিনি বলেন, “এই টাকায় ঘরভাড়া আর খাওয়া হয় না। তাই অনেকদিন ধরেই আমরা সর্বনিম্ন বেতন ১২ হাজার ৫০০ টাকা করার দাবি জানিয়ে আসছি। তবে মালিকপক্ষ কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না।”
এদিকে কয়েকদিন শ্রমিক আন্দোলনের কারণে কালিয়াকৈরের সফিপুর বাজার এলাকার মাহমুদ ডেনিম, বক্তারপুর এলাকার ইকু নিটসহ (সামহার) তিনটি কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে বলে শিল্প পুলিশ জানিয়েছে।
গাজীপুর শিল্প পুলিশের (জোন-২) পরিদর্শক নিতাই বলেন, “কারখানা বন্ধ ঘোষণার পরও কিছু উচ্ছৃঙ্খল শ্রমিক কারখানার ভেতরে জোর করে প্রবেশ করছিলেন। আটক শ্রমিকদের বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
“শ্রমিকেরা কিছু সময় ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে অবস্থান নিয়ে অবরোধ সৃষ্টি করেছিলেন। তবে এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।”
১২ দফা দাবি
এদিকে হাজিরা বোনাস বৃদ্ধিসহ ১২ দফা দাবিতে গাজীপুর সদর উপজেলার বাঘেরবাজার এলাকায় ‘গোল্ডেন রিফিট গার্মেন্টস লিমিটেড’ নামের একটি তৈরি পোশাক কারখানার শ্রমিকেরা আন্দোলন করেছেন।
সোমবার সকাল ৮টা থেকে ওই কারখানার শ্রমিকরা কাজে যোগ না দিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন। এক পর্যায়ে সকাল সাড়ে ৯টার দিকে তারা ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করেন।
কারখানার শ্রমিকেরা বলেন, তারা ১২ দফা দাবিতে কারখানার ভেতরে অবস্থান নেয়। কর্তৃপক্ষ এসব দাবির বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি। এরপর তারা মহাসড়ক অবরোধ করেন। পরে কারখানা কর্তৃপক্ষ হাজিরা বোনাস, টিফিন বিল, নাইট বিলসহ আটটি দাবি মেনে নেয়। তবে ১২টি দফা মেনে নেওয়ার দাবি জানিয়ে তারা মহাসড়ক অবরোধ কর্মসূচি অব্যাহত রাখেন।
এ প্রতিবেদন লেখার সময় বেলা আড়াইটা পর্যন্ত শ্রমিকেরা ওই সড়কে অবস্থান করছিলেন বলে জানা গেছে।
এদিকে এই কর্মসূচির কারণে সকাল থেকেই মহাসড়কের ওই অংশের আশপাশে কয়েক কিলোমিটার এলাকায় যানজটের সৃষ্টি হয়েছে।
গাজীপুর শিল্প পুলিশের বাঘের বাজার জোনের পরিদর্শক সুমন মিয়া বলেন, “সকাল থেকে শ্রমিকরা মহাসড়কে আন্দোলন করছেন। এতে চান্দনা চৌরাস্তা থেকে মাওনা পর্যন্ত তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। কারখানা কর্তৃপক্ষ ও শ্রমিকদের সঙ্গে আলোচনার ব্যবস্থা করা হয়েছে। আলোচনায় বেশির ভাগ দাবি মেনে নিলেও শ্রমিকেরা বিক্ষোভ করে যাচ্ছেন।”