রাষ্ট্র গঠনে গণপরিষদ ভোট স্বীকৃত পদ্ধতি বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।
Published : 15 Mar 2025, 08:36 PM
কবি ও রাষ্ট্র চিন্তক ফরহাদ মজহার বলেছেন, তাদের কথা শোনা বন্ধ করার পর থেকে বিএনপির ’পতন শুরু’ হয়েছে।
বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া আপোষহীনভাবে আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে না থাকলে জুলাই গণঅভ্যুত্থান কখনও সফল হত না বলেও মনে করেন তিনি।
শনিবার দুপুরে যশোর শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন যশোরের আয়োজনে ‘জুলাই বিপ্লবোত্তর বাংলাদেশে তরুণদের করণীয়’ শীর্ষক আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখছিলেন তিনি।
তিনি বলেন, “আমাদের কথা শোনা যখন থেকে বন্ধ করে দিয়েছে তখন থেকে বিএনপির পতন শুরু হয়েছে। যারা ইতিহাস থেকে শিক্ষা নেয়নি, আজ হোক কাল হোক তারা হারিয়ে যাবে।“
তবে এ বিষয়ে বিস্তারিত ব্যাখ্যা করেননি তিনি।
বর্তমান সরকারকে নির্বাচিত সরকার দাবি করে ফরহাদ মজহার বলেন, “ড. ইউনুসকে গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে বসানো হয়েছে। রক্ত দিয়ে তাকে নির্বাচিত করা হয়েছে। তাহলে ভোট গুরুত্বপূর্ণ না কি রক্ত গুরুত্বপূর্ণ?”
আলোচনা সভায় তিনি বলেন, “একাত্তরে আমরা বিপ্লব করিনি, স্বাধীনতা অর্জন করেছি। একাত্তর পরবর্তী সময়ে শেখ মুজিবুর রহমান জনঅভিপ্রায় বাস্তবায়ন করেননি। তাছাড়া গণপরিষদ ভোটও হয়নি। ফলে রাষ্ট্র গঠন করাও সম্ভব হয়নি। অথচ রাষ্ট্র গঠনে গণপরিষদ ভোট স্বীকৃত পদ্ধতি।”
বাহাত্তরের সংবিধান কখনো বাংলাদেশের জনগণের সংবিধান ছিল না মন্তব্য করে তিনি বলেন, “এটা ছিল পাকিস্তানের সংবিধান। কারণ, সেটা যারা প্রণয়ন করেছে, তারা পাকিস্তানের সংবিধান প্রণয়নের জন্য নির্বাচিত হয়েছিল। তারা যুদ্ধের সময় ছিল না। যে কয়েকজন ছিল, তারা দিল্লির সাথে সহযোগিতা করে বাংলাদেশকে তাদের হাতে তুলে দেওয়ার ষড়যন্ত্রে যুক্ত ছিলেন।”
তরুণদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “আমরা যদি দ্বিতীয় স্বাধীনতা বলি, তাহলে এ পর্বে আমরা রাষ্ট্র গঠন করতে না পারলে আবারো ৫০ বছর পিছিয়ে যেতে হবে। ফলে ছাত্রদের রাষ্ট্র গঠনে গণপরিষদ ভোটের দাবি সঠিক। কিন্তু তারা এটা ব্যাখ্যা করতে পারে না।”
ফরহাদ মজহার বলেন, “সাম্য মানবিকতা ও সামাজিক ন্যায় বিচার এই তিন নীতির ভিত্তিতে যে যুদ্ধ হয়েছিল সে যুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়েছেন মহান যোদ্ধা জিয়াউর রহমানের মত মানুষ, একটা নতুন ধরনের রাষ্ট্র গঠন করতেই যুদ্ধ করেছেন।
”এই তিন নীতি ইসলামের মর্মবাণী ধারণ করে। তাই ইসলামকে আধুনিক ধর্ম, সবশেষে ধর্ম হিসেবে ইসলাম এসেছে, এটা সব ধর্মকে মর্যাদাও দিয়েছে, তাই স্বাধীনতা যুদ্ধের সাথে ইসলামের সম্পর্ক ছিল। অথচ স্বাধীনতার পর তিনটি মূল ভিত্তিতে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র কায়েম করতে চাইলেও বাঙলা ভাষা সংস্কৃতির পরিবর্তে চাপিয়ে দেয়া হল বাঙালি জাতীয়তাবাদ, যা কখনোই ’৬৯ এর গণ আন্দোলন বা অন্য কোনো আন্দোলনের সময় উচ্চারিত হয়নি।”
বর্তমানে একটি গোষ্ঠি দিল্লির সহায়তায় যাদেরকে তাড়িয়ে দিয়েছি তাদের হাতে ক্ষমতা ফিরিয়ে দিতে চাচ্ছে দাবি করে তরুণ ও অন্য রাজনৈতিক দলের উদ্দেশে তিনি বলেন, “ভুল করলে আবারো ফ্যাসিবাদ চেপে বসবে, আবার কি আমরা ৫০ বছর পিছনে ফিরে যেতে চাই?”
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন যশোর শাখার আহ্বায়ক রাশেদ খানের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন প্রাচ্যসংঘ যশোরের প্রতিষ্ঠাতা লেখক, গবেষক বেনজীন খান, ’ভাববৈঠকির’ প্রধান সমন্বয়ক মোহাম্মাদ রোমেল, জাতীয় নাগরিক কমিটির কেন্দ্রীয় সদস্য খালেদ সাইফুল্লাহ, যশোরের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ফাহিম আল ফাত্তাহ, মারুফ কবীর, যশোর নাগরিক কমিটির নেতা আশালতা।