গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের প্রধান পদে পরপর দুজন সহকারী অধ্যাপককে নিয়োগ দেওয়া হলে তারা দায়িত্ব নিতে অপারগতা প্রকাশ করেন।
Published : 13 Mar 2024, 10:53 PM
রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে বিভাগীয় প্রধান নিয়োগে জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠেছে।
ওই পদের দাবিদার সহযোগী অধ্যাপক তাবিউর রহমান প্রধান বলছেন, ২০০৯ সালের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় আইন এর ২৮ (৩) ধারা ‘লঙ্ঘন’ করে প্রথমে একজন সহকারী অধ্যাপককে বিভাগীয় প্রধান করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
তবে সেই শিক্ষক ওই পদে যোগদান করতে অপারগতা প্রকাশ করায় ‘দ্বিতীয়বার আইন লঙ্ঘন করে’ অন্য একজন সহকারী অধ্যাপককে দায়িত্ব দেওয়া হয়। কিন্তু তিনিও যোগদান করতে অপারগতা প্রকাশ করেন।
এ অবস্থায় ওই আদেশ বাতিল চেয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে চিঠি দিয়েছেন গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক তাবিউর রহমান প্রধান।
তার অভিযোগে বলা হয়েছে, রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে ২০১২ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি প্রভাষক হিসেবে যোগদান করেন তিনি। এরপর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক পদোন্নতি নীতিমালা অনুযায়ী সহকারী অধ্যাপক এবং আপগ্রেডেশনের মাধ্যমে ২০২১ সালের ৭ মার্চ থেকে সহযোগী অধ্যাপক হন।
এ বিভাগে কর্মরত শিক্ষকদের মধ্যে তিনজন সহযোগী অধ্যাপক, চারজন সহকারী অধ্যাপক এবং দুজন প্রভাষক। সহযোগী অধ্যাপকদের মধ্যে জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে তাবিউর রহমানের অবস্থান দ্বিতীয়। জ্যেষ্ঠ সহযোগী অধ্যাপক মো. নজরুল ইসলাম ১০ মার্চ বিভাগীয় প্রধান হিসেবে তার মেয়াদ শেষ করেন।
তাবিউর রহমান বলছেন, বিশ্ববিদ্যালয় আইনের ২৮(৩) ধারা অনুযায়ী জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে পর্যায়ক্রমে বিভাগীয় প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পাওয়ার কথা তার। কিন্তু তাকে দায়িত্ব না দিয়ে সহকারী অধ্যাপক নিয়ামুন নাহারকে বিভাগীয় প্রধানের দায়িত্ব দেয় কর্তৃপক্ষ।
সহযোগী অধ্যাপক তাবিউর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আইন লঙ্ঘন করে একজন সহকারী অধ্যাপককে বিভাগীয় প্রধানের দায়িত্ব দেওয়া হয়। জ্যেষ্ঠতা নির্ধারণে আইনি জটিলতা থাকার কথা বলা হলেও বিভাগে কর্মরত শিক্ষকদের বিষয়ে কোনো আইনি জটিলতা নেই।
“নিয়ম অনুযায়ী সকল কার্যক্রম চলমান থাকলেও বিভাগীয় প্রধান নিয়ে কেন জ্যেষ্ঠতার প্রশ্ন তোলা হচ্ছে তা বোধগম্য নয়। এ বিষয়ে বিভাগের শিক্ষকদের পক্ষ থেকে উপাচার্যের সঙ্গে দেখা করে প্রতিকার চাওয়া হয়েছে।”
বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার বরাবর দেওয়া অভিযোগের অনুলিপি উপাচার্য, কোষাধ্যক্ষ, সকল অনুষদের ডিন, সকল বিভাগীয় প্রধান এবং শিক্ষক সমিতির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে পাঠানো হয়েছে বলে জানান তাবিউর রহমান।
এদিকে গত ১০ মার্চ গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে বিভাগীয় প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পাওয়া সহকারী অধ্যাপক নিয়ামুন নাহার দায়িত্ব পালনে অপারগতা প্রকাশ করে প্রশাসনকে লিখিত দেন।
এরপর ওই বিভাগের আরেক সহকারী অধ্যাপক সারোয়ার আহমাদকে বিভাগীয় প্রধান হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হলে তিনিও যোগদান করতে অপারগতা প্রকাশ করায় বর্তমানে পদটি শূন্য রয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি বিজন মোহন চাকী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “জ্যেষ্ঠতা নিয়ে আদালতে একটি মামলা চলমান থাকায় সহযোগী অধ্যাপক তাবিউর রহমানকে বিভাগীয় প্রধান হিসেবে নিয়োগ না দিয়ে একজন সহকারী অধ্যাপককে নিয়োগ দিয়েছে প্রশাসন।”
বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার প্রকৌশলী মোহাম্মদ আলমগীর চৌধুরীও আইনি ‘জটিলতার’ কথা বলছেন।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “আইনি জটিলতা শেষ না হলে কারো কিছু করার নাই। আমরা কেউ আইনের বাইরে না।”
তবে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সদ্য বিদায়ী বিভাগীয় প্রধান মো. নজরুল ইসলাম বলেন, “বিভাগে কর্মরত শিক্ষকদের মধ্যে জ্যেষ্ঠতা নির্ধারণে কোনো সমস্যা নেই। প্রশাসন মিথ্যা অজুহাতে আইন লঙ্ঘন করে বিভাগীয় প্রধান নিয়োগ দিতে চাচ্ছে।
“এ বিষয়ে প্রতিকার চেয়ে উপাচার্যের সঙ্গে সাক্ষাৎ করা হয়েছে; আশা করি তিনি আইন অনুযায়ী বিভাগীয় প্রধান নিয়োগ দেবেন।”
এ বিষয়ে জানতে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক হাসিবুর রশীদের মোবাইল নম্বরে কল করা হলে তিনি ধরেননি।