অক্সিজেনের নল লাগিয়ে রিকশা চালানো সেন্টু পেলেন বিকল্প কাজের আশ্বাস

অক্সিজেন ছাড়া চলতে পারছিলেন না। পরে দুই দিন নাকে অক্সিজেনের নল নিয়েই নগরীতে অটোরিকশা চালিয়েছেন সেন্টু।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 May 2023, 04:38 AM
Updated : 19 May 2023, 04:38 AM

রাজশাহীতে নাকে অক্সিজেনের নল লাগিয়ে রিকশা চালানো মাইনুজ্জামান সেন্টুকে কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন জেলা প্রশাসক। 

বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তার খোঁজখবর নিতে গিয়ে এই আশ্বাস দেন জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ। 

শামীম আহমেদ বলেন, “দীর্ঘদিন ধরেই ফুসফুসের সমস্যার কারণে শ্বাসকষ্টজনিত রোগে ভুগছেন মাইনুজ্জামান। সংসার চালানোর জন্য তাকে আর রিকশা চালাতে হবে না। সুস্থ হলে তার কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হবে। জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে অটোরিকশার পরিবর্তে তার বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে দেওয়া হবে।”

এ সময় জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. সালাহ উদ্দীন আল ওয়াদুদ, সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট (গোপনীয় শাখা) মো. শামসুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।

মাইনুজ্জামানের মেজ মেয়ে আঁখি খাতুন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “জেলা প্রশাসক আমার বাবার চিকিৎসার খোঁজখবর নিয়েছেন। কিছু টাকাও দিয়ে গেছেন। এছাড়াও বলে গেছেন, সুস্থ হলে আর তাকে রিকশা চালাতে হবে না।” 

হাসপাতালের ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের দায়িত্বরত চিকিৎসক রাজশাহী মেডিকেল কলেজের অধ্যাপক হাসান তারিক জানান, সিওপিডি ও যক্ষ্মার কারণে মাইনুজ্জামানের ফুসফুস দুর্বল হয়ে গেছে। হৃদ্‌যন্ত্রের সমস্যা আছে। এ জন্য তিনি ঠিকমতো অক্সিজেন টেনে নিতে পারছেন না। 

বৈদ্যুতিক ‘কনসেনট্রেটর’ নামের যন্ত্র ব্যবহার করে তিনি বাতাস থেকে স্বাভাবিকভাবে অক্সিজেন টেনে নিতে পারবেন বলে জানান এই চিকিৎসক।

রাজশাহী নগরের কলাবাগান মহল্লার বাসিন্দা মাইনুজ্জামান সেন্টু নগরীতে অটোরিকশা চালান। ওই এলাকায় দুই হাজার টাকা ভাড়ায় একটি বাসায় স্ত্রী চম্পা বেগমকে নিয়ে থাকেন। এই দম্পতির দুই মেয়ে ও এক ছেলের বিয়ের পর আলাদা থাকে। 

গত পাঁচ বছর ধরে সেন্টু ফুসফুসের সমস্যায় ভুগছিলেন। সেই সমস্যা নিয়েই তিনি ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালিয়ে সংসার চালাচ্ছেন। পাঁচ বছর আগে একটি বেসরকারি সংস্থা থেকে ৮০ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে একটি অটোরিকশা কিনেছিলেন মাইনুজ্জামান। দুই বছরের মাথায় নগরের ঘোষপাড়ার মোড়ে রিকশাটি চুরি হয়ে যায়। 

পরে আবার ঋণ করে আরেকটি অটোরিকশা কিনে সেটি চালাতেন। এরই মধ্যে হার্নিয়ার অস্ত্রোপচারের জন্য আরও ৫০ হাজার টাকা ঋণ করতে হয় তার। প্রতি সপ্তাহে দুই জায়গায় এক হাজার ৩৫০ টাকা করে কিস্তি দিতে হয়। দিনে তিনটি অক্সিজেন সিলিন্ডার লাগে। ওষুধ ও অক্সিজেন মিলে তার দিনে ৬০০ টাকা খরচ হয়। 

দুই মাস ধরে তিনি বেশি অসুস্থ হয়ে পড়েন। অক্সিজেন ছাড়া চলতে পারছিলেন না। পরে দুই দিন নাকে অক্সিজেনের নল নিয়েই রিকশা চালিয়েছেন। 

তাও আর সম্ভব না হওয়ায় রোববার হাসপাতালে ভর্তি হন। 

তখন তার শারীরিক অবস্থা বিবেচনা করে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, তিনি আর রিকশা চালাতে পারবেন না।  ‘কনসেনট্রেটর’ লাগিয়ে ঘরে বসে করার মতো কোনো কাজের পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকরা।