পৌর কর্তৃপক্ষের এমন উদ্যোগের প্রশংসা করছেন স্থানীয়রা।
Published : 24 Feb 2025, 09:16 PM
ছিল ময়লার ভাগাড়। আবর্জনার দুর্গন্ধে অতিষ্ঠ ছিল সড়ক দিয়ে চলাচল করা পথচারী ও স্থানীয়রা।
পৌর কর্তৃপক্ষের ছোঁয়ায় এখন প্রকৃতিতে সামান্য বাতাসেই দুলছে হলুদের আভায় হাজারো সূর্যমুখী।
পৌর কর্তৃপক্ষের উদ্যোগে পুরোনো ময়লার ভাগাড় আর ঝোপঝাড় পরিষ্কার করে শহরের প্রাণকেন্দ্রে করা হয়েছে সূর্যমুখীর আবাদ।
শরীয়তপুর পৌরসভার মূল গেইটে শহরের প্রধান সড়ক লাগোয়া স্থানটি ছিল পৌরসভার সেকেন্ডারি ডাম্পি জোন। এখানে শহরের বাসাবাড়ির ময়লার স্তুপ করে রাখার পর পৌরসভার গাড়ির মাধ্যমে নিয়ে যাওয়া হত প্রধান ডাম্পিং জোনে।
বছরের পর বছর ধরে জায়গাটিতে রাখা ময়লা আবর্জনার দুর্গন্ধে পৌরসভায় প্রবেশ কিংবা প্রধান সড়ক দিয়ে যাওয়া মুশকিল ছিল পথচারীদের।
কয়েক মাস আগে শরীয়তপুর জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক পিংকি সাহাকে পৌর প্রশাসক নিযুক্ত করা হলে তিনি উদ্যোগ নিয়ে ময়লার ডাম্পি জোনকে সরিয়ে গড়ে তুলেন গ্রিন স্পেস।
প্রায় ৪৪ শতক জমিতে সূর্যমুখী আবাদের পর নিবিড় পরিচর্যায় একে একে ফোটতে থাকে ফুল।
এখন হলুদ ফুলের নয়নাভিরাম দৃশ্য যেকোনো বয়সের মানুষকে টানছে।
কেউ আসছেন বন্ধু-বান্ধব নিয়ে। আবার কেউ আসছেন পরিবার পরিজনদের নিয়ে।
অনেকে হাজির হচ্ছেন ক্যামেরা-ফটোগ্রাফার নিয়েও। সময় ক্ষেপণ না করে সূর্যমুখী ফুলের সংস্পর্শে এসে সুন্দর মুহূর্ত করে ফেলছেন ফ্রেমবন্দি।
শহরের প্রাণকেন্দ্রে সূর্যমুখী ফুলের এমন সৌন্দর্যে প্রতিনিয়ত সকাল-বিকাল ভিড় করছেন নানা বয়সি শ্রেণি-পেশার মানুষ।
পৌর কর্তৃপক্ষের এমন উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন তারা।
রোজানা ইসলাম রোজী নামে এক দর্শণার্থী বলেন, “পৌরসভা সামনে দিয়ে একটা সময় হেঁটে যাওয়া যেত না ময়লার দুর্গন্ধে। শহরের মধ্যে এত সুন্দর একটা পরিকল্পনা নিয়ে ময়লা সরিয়ে সূর্যমুখী আবাদ করা যায় যা আমরা চিন্তা করিনি। বর্তমানে জায়গাটি একটি বিনোদন কেন্দ্রের মত হয়ে উঠেছে। সবাই আসে, ঘুরে ছবি তুলে। পৌরসভা কর্তৃপক্ষের এমন উদ্যোগে আমরা সবাই খুব খুশি।”
সৌরভ নামের আরেক যুবক বলেন, “পৌরসভার এই জায়গাটি ময়লা আবর্জনা পড়েছিল। পৌরসভা উদ্যোগ নিয়ে সেই ময়লা আবর্জনা সরিয়ে সুন্দর সূর্যমুখীর আবাদ করেছে। এই সূর্যমুখী থেকে তেলও পাওয়া যাবে আবার আমরা সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারছি। অনেকের পরিত্যক্ত জায়গা রয়েছে, পৌরসভার এমন উদ্যোগ দেখে তারাও এই উদ্যোগ নিতে পারে।”
আয়েশা নামের এক কলেজ শিক্ষার্থী বলেন, “কয়েকদিন ধরে এইদিক দিয়ে যাওয়ার সময় দেখি অনেক সুন্দর সূর্যমুখী ফুল ফুটেছে। আজ বন্ধুদের নিয়ে এখানে ঘুরতে এসেছি। ফুলের সঙ্গে ছবি তুলে বেশ ভালো লাগল। আমরা সেই আগামীতেও এখানে সূর্যমুখীর চাষ করা হোক।”
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক ও পৌর প্রশাসক পিংকি সাহা বলেন, “দীর্ঘদিন ধরে জায়গাটি সেকেন্ডারি ডাম্পিং জোন হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছিল। পৌরসভা যেহেতু একটি নাগরিক সেবাকেন্দ্র তাই আমি প্রথমেই জায়গাটিকে গ্রিনস্পেস হিসেবে গড়ে তুলতে উদ্যোগ নিই। পরে সূর্যমুখী আবাদ এবং নিবিড় পরিচর্যা করা হয়। বর্তমানে খুব সুন্দর ফুল ফুটেছে। আমাদের পৌরবাসীসহ অন্য এলাকা থেকেও এই সৌন্দর্য উপভোগ করতে ছুটে আসছেন। পৌরবাসীর জন্য বিনোদনের সুযোগ করতে পারায় আমরা অনেক খুশি।”
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোস্তফা কামাল হোসেন বলেন, “সূর্যমুখী তেল মানুষের স্বাস্থ্যের পক্ষে উপকারী। অন্য তেলের পাশাপাশি এই সূর্যমুখী তেলও আমাদের কাজে আসে। তাই আমরা সব সময় কৃষকদের সূর্যমুখী আবাদ করার পরামর্শ দিই।”