“শ্রমিকদের অবরোধের কারণে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের উভয়পাশে দীর্ঘ যানজট সৃষ্টি হয়েছে।”
Published : 11 Mar 2025, 10:21 AM
বকেয়া বেতনের দাবিতে গাজীপুর নগরীর টঙ্গী এরশাদনগর এলাকার বিএইচআইএস অ্যাপারেলস লিমিটেড কারখানার শ্রমিকরা ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করেছেন।
গাজীপুর মহানগর পুলিশের টঙ্গী জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার মো. মেহেদী হাসান জানান, মঙ্গলবার সকাল ৮টা থেকে বকেয়া বেতন-ভাতার দাবিতে শ্রমিকরা আন্দোলন শুরু করেন। এক পর্যায়ে পাশের ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে অবস্থান নিয়ে অবরোধ করেন তারা।
শিল্প পুলিশ ও কারখানার শ্রমিকরা জানায়, টঙ্গীর এরশাদ নগর (হোসেন মার্কেট) এলাকায় বিএইচআইএস অ্যাপারেলস লিমিটেড কারখানা শ্রমিকদের ফেব্রুয়ারি মাসের বেতন গত ৯ মার্চ দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু নির্ধারিত ওই তারিখের মধ্যে বেতন না পেয়ে শ্রমিকরা সোমবার সকাল থেকে কাজ বন্ধ করে কারখানার ভেতরে অবস্থান করে বিক্ষোভ করে। কিন্তু কারখানা কর্তৃপক্ষ সারাদিন শ্রমিকদের বেতন না দিয়ে নানা ধরনের টালবাহানা শুরু করেন। পরে বিকালে শ্রমিকরা বাড়ি ফিরে যায়।
মঙ্গলবার সকালে শ্রমিকরা কাজে যোগ দিতে গিয়ে দেখেন কারখানার সামনে অনির্দিষ্টকালের জন্য কারখানা বন্ধের নোটিশ সাঁটিয়ে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। ওই নোটিশ দেখে শ্রমিকরা সকাল ৭টা থেকে কারখানার সামনে বিক্ষোভ শুরু করে। এক পর্যায়ে সকাল ৮টার দিকে শ্রমিকরা হোসেন মার্কেট ইম্পেরিয়াল হাসপাতালের সামেনের ঢাক-ময়মনসিংহ মহাসড়কে অবস্থান নিয়ে অবরোধ করে।
এতে ওই মহাসড়কের উভয়দিকে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। প্রায় আড়াই ঘণ্টা গাড়ি চলাচল বন্ধ থাকায় উভয়দিকে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েন ওই মহাসড়কে চলাচলকারীরা। খবর পেয়ে শিল্প পুলিশ ও থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে শ্রমিকদের বুঝিয়ে শান্ত করার চেষ্টা করে।
এরশাদনগর এলাকার স্থানীয় ব্যবসায়ী নুরুল ইসলাম বলেন, “শ্রমিকদের অবরোধের কারণে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের উভয়পাশে দীর্ঘ যানজট সৃষ্টি হয়েছে। এতে অফিসগামী যাত্রীরা চরম বিপাকে পড়েছেন।”
টঙ্গী পূর্ব থানার ওসি ফরিদুল ইসলাম বলেন, শ্রমিকদের বুঝিয়ে মহাসড়ক থেকে সরানোর চেষ্টা করছেন তারা।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দপ্তরে পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) মো. মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, তিনি গাজীপুর অফিসে যাওয়ার পথে টঙ্গী ঢোকার আগে আব্দুল্লাহপুর ফ্লাইওয়ের ওপর যানজটে পড়েন। সকাল সাড়ে ৮টা থেকে পৌনে ১০টা পর্যন্ত তিনি সেখানেই বসে ছিলেন।
ভাওয়াল বদরে আলম সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ ছানোয়ারা সুলতানা বলছিলেন, “আমি ঢাকার উত্তরা থেকে গাজীপুরে অফিস করি। ঢাকা ময়মনসিংহ-মহাসড়ক অবরোধ করে শ্রমিকদের বিক্ষোভের খবর শুনে বিকল্প পথে টঙ্গীর বনমালা রোড হয়ে রওনা হই। কিন্তু তাতে লাভ হয়নি, ধীরাশ্রম এলাকায় পৌঁছানোর পর তীব্র যানজটে বসে থাকতে হয়।”
এ প্রসঙ্গে মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে কথা হয় গাজীপুর মহানগর পুলিশের এডিসি (ট্রাফিক) অশোক কুমার পালের সঙ্গে।
তিনি বলেন, “যানজট নিরসনে ঢাকা-ময়মনসিংহ চলাচলকারী যানবাহনগুলোকে শাখা রোড দিয়ে চলাচলের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তবে এখনও গাড়ি চলাচল স্বাভাবিক হয়নি।”
অপরদিকে গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার মৌচাক এলাকায় গ্লোবাস নামে একটি কারখানার শ্রমিককে মারধরের ঘটনায় ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন শ্রমিকরা।
মঙ্গলবার সকাল ৯টা থেকে ১০টা পর্যন্ত শ্রমিকরা মহাসড়ক অবস্থান নিয়েছিল। পরে যৌথবাহিনী ঘটনাস্থলে গেলে শ্রমিকরা মহাসড়ক ছেড়ে আশপাশে অবস্থান নেয়।
বিক্ষোভে অংশ নেওয়া শ্রমিক ও পুলিশ জানায়, শনিবার মৌচাকের গ্লোবাস কারখানায় কয়েকজন শ্রমিককে ডেকে নিয়ে মারধর করে স্টাফরা। এর জেরে শ্রমিকরা কারখানার ভেতর আন্দোলন শুরু করে। পরে ঝামেলা মিটে গেলেও কর্তৃপক্ষ কারখানা বন্ধ রেখেছে। এর কারণেই বিক্ষোভ শেষে মহাসড়ক অবরোধ করে।
গ্লোবাস কারখানার শ্রমিকরা বলছেন, কারখানার শ্রমিককে অফিসে ডেকে নিয়ে স্টাফরা মারধর করে। এ সময় সব শ্রমিকরা কর্মবিরতি করে ও কয়েকটি দাবি জানায়করা হয়। সেদিন দাবিগুলো মানলেও এরপর থেকে কারখানা খুলছে না এবং গায়ে তোলার বিচারও করছে না।
কালিয়াকৈর থানার ওসি মোহাম্মদ রিয়াদ মাহমুদ বলেন, গ্লোবাস কারখানার শ্রমিকদের দাবি, মারধরের বিচার না পেয়ে তারা সড়ক অবরোধ করে করে। তাদের বুঝিয়ে ঘণ্টখানেক পর ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কদের সরিয়ে দেওয়া হয়েছে।