সীমিত পরিসরে জরুরি বিভাগ ছাড়া বন্ধ রয়েছেন সদর হাসপাতালের কার্যক্রম।
Published : 12 Sep 2024, 08:38 PM
কক্সবাজার সদর হাসপাতালে এক রোগীর মৃত্যুর জেরে চিকিৎসক ও নার্সদের মারপিটের ঘটনায় মামলায় হয়েছে। এ ঘটনায় দুইজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
এ ছাড়া হাসপাতাল ভাঙচুর ও মারপিটের প্রতিবাদে সর্বাত্মক কর্মবিরতি পালন করেছেন চিকিৎসক, নার্স ও কর্মকর্তা-কর্মচারী। সেবা না পেয়ে হাসপাতালে ভর্তি থাকা রোগীরা অন্যত্র চলে যাচ্ছেন।
সীমিত পরিসরে জরুরি বিভাগে সেবা ছাড়া হাসপাতালের কার্যক্রম বন্ধ রয়েছেন বলে জানান কক্সবাজার সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মং টিং ঞো।
কর্মবিরতি দ্বিতীয় দিন বৃহস্পতিবার চিকিৎসকদের কর্মসূচির পক্ষে মাঠে নেমেছেন কক্সবাজার মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীরাও। এ ছাড়া সংহতি জানিয়ে প্রাইভেট চেম্বারে রোগী দেখা বন্ধ রেখেছেন অনেক চিকিৎসক।
বুধবার রাতে আহত চিকিৎসক সজীব কাজী বাদী হয়ে কক্সবাজার সদর থানায় মামলা করলে দুইজনকে গ্রেপ্তার করা হয় বলে জানান কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মিজানুর রহমান।
গ্রেপ্তাররা হলেন- কক্সবাজার পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডের নতুন বাহারছড়া এলাকার তাহসিন মোহাম্মদ রেজা (২৫) এবং তামিম মোহাম্মদ রেজা (২২)।
সকালে হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেছে, হাসপাতালে চিকিৎসাধীন পাঁচ শতাধিক রোগী অন্যত্র চলে গেছেন। প্রায় রোগীশূন্য হাসপাতালে সীমিত পরিসরে জরুরি বিভাগ খোলা রাখা হয়েছে। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন রোগী ও স্বজনরা।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান বলেন, হাসপাতালের ভেতর চিকিৎসক ও ওয়ার্ড কর্মীদের ওপর হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনায় ২০ থেকে ২৫ জনকে আসামি করা হয়েছে। ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের আইনের আওতায় আনা হবে।
গ্রেপ্তার দুইজনকে সাত দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করা হলে আদালত শুনানির জন্য পরবর্তী দিন নির্ধারণ করেছে বলে জানান তিনি।
চার দফা দাবিতে বেলা ১১টায় চিকিৎসক, নার্স, হাসপাতালের কর্মকর্তা-কর্মচারী, মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীরা মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করছেন।
দাবি মানা না হলে জরুরি বিভাগের চিকিৎসা সেবাও বন্ধ করে দেবেন হুঁশিয়ারি দেন আন্দোলনকারীরা।
চিকিৎসকদের দেওয়া দাবিগুলো হলো-
১. প্রকৃত আসামিদের দ্রুত গ্রেপ্তার এবং শাস্তি নিশ্চিত করতে প্রশাসনের যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ এবং গ্রেপ্তারদের নাম-পরিচয় ছবিসহ সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ করতে হবে।
২. সব চিকিৎসক, নার্স, কর্মকর্তা-কমচারীসহ সর্বোপরি হাসপাতালের নিরবচ্ছিন্ন নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।
৩. ভাঙচুরের ঘটনায় হাসপাতাল প্রশাসনের পক্ষ থেকে মামলা করতে হবে।
৪. আহত চিকিৎসককে পরিপূর্ণ চিকিৎসা ও ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।
কক্সবাজার সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল কর্মকর্তা আশেকুর রহমান জানান, মঙ্গলবার রাতে হাসপাতালের সিসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আবদুল আজিজ মারা যান। তিনি শহরের নুনিয়ারছড়া এলাকার বাসিন্দা।
এ ঘটনার জেরে রোগীর স্বজনরা কর্তব্যরত চিকিৎসক সজীব কাজীকে মারধর করেন। এ ছাড়া আইসিইউ, সিসিইউসহ হাসপাতালের বিভিন্ন কক্ষে ভাঙচুর চালানো হয়।
এ ঘটনার প্রতিবাদে সেবা বন্ধ রেখে কর্মবিরতিতে যান হাসপাতালের সব চিকিৎসক ও কর্মীরা। তবে জরুরি বিভাগ খোলা থাকলেও আবাসিক চিকিৎসা বন্ধ রয়েছে।
কক্সবাজার সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মং টিং ঞো বলেন, ভাঙচুরের ঘটনা তদন্তে কমিটি করা হয়েছে। হাসপাতালের পক্ষে মামলা করা হবে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।
তবে কর্মস্থলে নিরাপত্তা নিশ্চিত না করলে চিকিৎসক, নার্সসহ কর্মচারীরা জরুরি বিভাগ ছাড়া আর কোথাও চিকিৎসা সেবা দিতে রাজি হচ্ছে না বলে জানান তিনি।
রোগীর মৃত্যুর পর ডাক্তারকে পিটুনি, কক্সবাজার হাসপাতালে চিকিৎসা বন্ধ