কাকডাকা ভোর থেকে কুয়াশার মধ্যেই চলছে আমন ধান কাটা আর মাড়াই।
Published : 21 Nov 2024, 11:39 AM
হেমন্তের অগ্রহায়ণেই সীমান্তবর্তী জেলা শেরপুরে জেঁকে বসতে শুরু করেছে শীত। সকাল ও সন্ধ্যায় বইছে মৃদু হিমেল হাওয়া। রাতে ঘন কুয়াশার সঙ্গে ঝরে পড়ছে শিশির।
শেরপুরে আবহাওয়া অফিস না থাকায় তাপামাত্রা ও শীতের বিষয় বা আবহাওয়ার গতি প্রকৃতি সম্পর্কে তথ্য জানা সম্ভব হয়নি।
তবে স্থানীয়রা বলছেন, এবার অগ্রহায়ণের শুরু থেকেই পুরোদমে শীতের আমেজ বিরাজ করছে শেরপুরে। মধ্যরাত থেকে সকাল ৮টা পর্যন্ত থাকছে কুয়াশার দাপট। সামান্য দূরের বস্তুও ঝাপসা দেখা যাচ্ছে।
পৌষ মাসের দেরি থাকলেও শহরাঞ্চলসহ গ্রামে, চরাঞ্চলে ও পাহাড়ি অঞ্চলে শীতের প্রকোপ ও অনুভূতি দুটোই ক্রমেই বাড়ছে। দিনের তাপমাত্রাও ধীরে ধীরে কমছে।
তবে কৃষি শ্রমিক ও নিম্ন আয়ের সঙ্গে যুক্ত শ্রমজীবীদের ঠান্ডা আর ঘন কুয়াশার মধ্যেও কাজ করতে দেখা যাচ্ছে। কাকডাকা ভোর থেকে কুয়াশার মধ্যেই চলছে আমন ধান কাটা আর মাড়াই।
এদিকে হঠাৎ করে আবহাওয়ার পরিবর্তনে অনেকেই আক্রান্ত হচ্ছেন সর্দি, কাশি আর জ্বরে। ঠাণ্ডাজনিত রোগ-বালাই বাড়ায় অনেকেই ছুটছেন হাসপাতালে।
শেরপুর পৌর শহরের শেখহাটি মহল্লার বাসিন্দা ব্যবসায়ী নজরুল ইসলাম বলেন, “অগ্রান মাস চলছে। পৌষ মাসের মতো অহন প্রতিদিনই কুয়াশা পড়ছে। আগে-ভাগেই শীতও লাগছে। অহন আবহায়ার পরিবর্তনের কারণে ঘরে ঘরে মানুষের জ্বরসহ নানা ধরনের রোগ লাইগাই রইছে।”
খরমপুর মহল্লার বাসিন্দা জাহিদ হাসান খোকন বলেন, “শেরপুরে এবার আগেভাগেই শীত পড়তে শুরু করেছে। প্রতিদিনই ঘন কুয়াশার দেখা মিলছে। আবহাওয়ার পরিবর্তনে শহর ও গ্রামাঞ্চলে প্রায় পরিবারেই দেখা দিয়েছে সর্দি, জ্বর ও কাশি।”
এবার বৃষ্টি আর পাহাড়ি ঢলের কারণে সাম্প্রতিক বন্যায় শেরপুর জেলায় ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় কৃষকের মুখের হাসি উবে গেলেও বন্যা বহির্ভূত এলাকায় মাঠের পাকা সোনালি ধানে চাষির মনে আনন্দ খেলা করছে।
হেমন্তের রূপের অনুষঙ্গ হিসেবে কৃষকের ধান ঘরে তোলার, কৃষক-কৃষাণির আনন্দ সবই প্রকৃতিতে রয়েছে।যা ক্ষণিকের জন্য সবার মনে দোলা দিয়ে যাচ্ছে।
শেরপুরের প্রবীণ শিক্ষাবিদ বীর মুক্তিযোদ্ধা ড. সুধাময় দাস বলেন, “ঋতু পরিবর্তনের খেলায় এখন হেমন্ত কাল চলছে। ঋতু পরিবর্তনে প্রকৃতির যেমন পরিবর্তন হয় তেমনি মানুষের মনেরও পরিবর্তন ঘটে।
“বৃহস্পতিবার হেমন্তের সকালে ঘন কুয়াশা আর শিশির ভেজা প্রকৃতি শীতের আগমনি বার্তার কথাই আমাদের মনে করিয়ে দিয়েছে। ষড়ঋতুর এই দেশে হেমন্তে ফসল কাটা শেষে নবান্নের উৎসবসহ এ সময়ের বিভিন্ন ফুলের সৌরভ মাখানো প্রকৃতির রূপ রসে অবগাহন করে সুখ-দুঃখের মাঝেও মানুষ স্বপ্ন দেখে সুন্দর আগামীর।”
শেরপুরের বিশিষ্ট কবি রবিন পারভেজ বলেন, “ঋতু বৈচিত্র্যের দেশ আমাদের বাংলাদেশ। আমাদের মন ও মননের বিকাশে ঋতু পরিবর্তনের ছোঁয়া নীরব এবং নিবিড় ভূমিকা রাখে। বর্ষার পর ধীরে ধীরে শীত এখন কড়া নাড়ছে।
“এখন হেমন্ত। ভোরের কুয়াশা, রাস্তার মোড়ে পিঠাওয়ালার ব্যস্ততা। নবান্নের আগমন, সবকিছুতেই এক সরব শিহরণে যেন প্রাণবন্ত হয়ে উঠে জীবন। এসবের ভিতর দিয়েই হাজার বছরের কৃষ্টির ফল্গুধারায় ঋদ্ধ হয় বাঙালি মন।”