ভুট্টা চাষে আগ্রহ বেড়েছে মানিকগঞ্জের কৃষকদের

জেলায় এ বছর ১৭ হাজার দুই হেক্টর জমিতে ভুট্টা চাষ হয়েছে।

মানিকগঞ্জ প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 Jan 2023, 08:44 AM
Updated : 21 Jan 2023, 08:44 AM

কম খরচে, কম পরিশ্রমে ফসল ঘরে তোলা যায় বলে মানিকগঞ্জের জেলায় ভুট্টা চাষে আগ্রহ বেড়েছে কৃষকদের। জেলার সাতটি উপজেলায় চাষ বাড়লেও হরিরামপুর, শিবালয়, দৌলতপুরে এবার ভুট্টা চাষ অনেক বেশি হয়েছে। 

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর মানিকগঞ্জ জেলা কার্যালয়ের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক মো. আফতাব উদ্দীন মাহমুদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, অনুকূল আবহাওয়া, কম খরচে অধিক ফলন, অন্য ফসলের চেয়ে পরিচর্যা খরচ ও রোগবালাই কম হওয়ায় ভুট্টা চাষে আগ্রহ বাড়ছে কৃষকদের। 

তিনি জানান, ভুট্টা চাষে কৃষকদের সহায়তা অব্যাহত থাকায় আগের চেয়ে উৎপাদনও বেড়েছে। গত বছর জেলায় ১৫ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে ভুট্টা চাষ হয়েছিল। এ বছর চাষ হয়েছে ১৭ হাজার দুই হেক্টর জমিতে। এবার মিরাকল জাত, ৯৮২ এবং ৯৮৩ জাতের ভুট্টা বেশি চাষ করা হয়েছে। 

মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার বারইল এলাকার ভুট্টা চাষি রাজ্জাক বলেন, “পাঁচ বিঘা জমিতে ভুট্টা চাষ করেছি। ফলন ভাল হয়েছে। সামনে বছর ১০ বিঘা জমিতে চাষ করার ইচ্ছে আছে।” 

ঘিওর উপজেলার নালী ইউনিয়নের ভুট্টা চাষি সেলিম বলেন, দুই বিঘা জমিতে ভুট্টা চাষ করেছি। খরচ হয়েছে ২০ হাজার টাকা। ফলনও অনেক ভাল হয়েছে। 

হরিরামপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আব্দুল গাফ্ফার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, আটার সাথে মিশ্রিত হয়ে আমাদের পুষ্টি নিরাপত্তা এবং পোল্ট্রি শিল্পে উৎপাদন অব্যাহত রাখতে দিন দিন ভুট্টার চাহিদা বাড়ছে। 

আর কম পরিচর্যায় উৎপাদন বেশি হওয়ায় কৃষকও লাভবান হয়ে ভুট্টা চাষে ঝুঁকছে বলে জানান তিনি। 

এই কৃষি কর্মকর্তা বলেন,  “আমরা চর এলাকায় ভুট্টা আবাদ বৃদ্ধির পরিকল্পনা নিয়েছিলাম। পরিকল্পনা মাফিক চাষ বৃদ্ধিও পেয়েছে। এ বছর উপজেলায় তিন হাজার ২৮২ হেক্টর জমিতে ভুট্টা চাষ হয়েছে এবং গতবছর চাষ হয়েছিল দুই হাজার ৩৮৫ হেক্টর জমিতে।” 

হরিরামপুরে গত ছয় বছরে ভুট্টার চাষ বেড়ে প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। বিশেষ করে চরাঞ্চলের লেছড়াগঞ্জ, আজিমনগর ও সুতালড়ি ইউনিয়নে ভুট্টা চাষ কয়েক গুণ বেড়েছে।

সুতালড়ি ইউনিয়নের বসন্তপুর গ্রামের কৃষক লিয়াকত মিয়া জানান, তিনি গত বছর ৬০০ শতাংশ জমিতে ভুট্টা চাষ করেছিলেন। সকল খরচ বাদে এক লাখেরও বেশি টাকা আয় হয়েছে। লাভ বেশি, খরচ কম হওয়ায় এবারো তিনি আরো বেশি জমিতে ভুট্টা চাষ করেছেন।

আজিমনগর ইউনিয়নের কলেজ পড়ুয়া, নাসির নামের এক ভুট্টাচাষী জানান, গত বছর ২৮০ শতাংশ জমিতে ভুট্টা চাষ করে ৭৫ হাজারের মতো লাভ হয়েছে। এবছরও তিনি ভুট্টা চাষ করেছেন, চমৎকার গাছও হয়েছে। লাভ বেশির আশা করছেন। 

বয়ড়া ইউনিয়নের যাত্রাপুর গ্রামের আজমত আলী, আবু সাঈদ, গোপীনাথপুর ইউনিয়নের গোপীনাথপুর গ্রামের ফারুক সহ অনেকে তারা গত বছর ভুট্টা চাষে লাভবান হয়ে এবার আরো বেশি জমিতে ভুট্টার আবাদ করেছেন। 

হরিরামপুর উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে উপজেলায় এক হাজার ৪৯৬ হেক্টর জমিতে ভুট্টা চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিল। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১০ হাজার ৬৯৫ মেট্রিক টন। 

ওই অর্থবছরে উপজেলায় এক হাজার ৮২৮ হেক্টর জমিতে ভুট্টা চাষ হয়েছিল, উৎপাদন হয়েছিল ১১ হাজার ৮৮২ মেট্রিক টন। 

২০২০-২১ অর্থবছরে উপজেলায় দুই হাজার ৩৫০ হেক্টর জমিতে ২৩ হাজার ৭৭ মেট্রিক টন ভুট্টা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। 

গত বছর দুই হাজার ৩৮৫ হেক্টর জমিতে ভুট্টা চাষ হলেও এ বছর চাষ হয়েছে তিন হাজার ২৮২ হেক্টর জমিতে। 

উপজেলা কৃষি অফিস আরও জানায়, উপজেলায় দুই মৌসুমে ভুট্টার আবাদ করা হয়। ভুট্টা চাষের জন্য কৃষকদের বীজ, সারসহ যাবতীয় পরামর্শ—সহযোগিতা দেয়া হয়। এ বছরও দুই হাজার ৫০০ কৃষককে নানাভাবে সহায়তা দেয়া হয়েছে।