পাবনা ‘প্রেস ক্লাবে বসে লুচি-লাবড়া’ খাওয়া হল না রাষ্ট্রপতির

প্রেস ক্লাবে বসে লুচি-লাবড়া খেতে না পেরে তার পরবর্তী সব কর্মসূচিতে বক্তব্য দিতে গিয়ে এ প্রসঙ্গটি তুলেছেন রাষ্ট্রপতি।

পাবনা প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 17 May 2023, 06:26 PM
Updated : 17 May 2023, 06:26 PM

দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রথমবারের মত নিজ জেলা পাবনায় চার দিনের সফরে আছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। 

সফরের দ্বিতীয় দিন গত মঙ্গলবার বেলা ১১টায় পাবনা প্রেস ক্লাবে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন রাষ্ট্রপতি। 

ইচ্ছে ছিল এ প্রেস ক্লাবে বসেই তার ও তার এক বাল্যবন্ধুর প্রিয় খাবার লুচি ও আলুর দম বা লাবড়া খাওয়ার। কিন্তু সেই ইচ্ছেতে বাধ সাধলেন রাষ্ট্রপতির দায়িত্বে থাকা নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা। 

পাবনা প্রেস ক্লাবে বসে লুচি-লাবড়া খেতে না পেরে তার পরবর্তী সব কর্মসূচিতে বক্তব্য দিতে গিয়ে এ প্রসঙ্গটি তুলেছেন।  

বুধবার দুপুরে পাবনা ডায়াবেটিক সমিতিতে এক মতবিনিময় সভায় পুরানো স্মৃতি রোমান্থন করতে গিয়ে তিনি বলেন, “আমার বাল্যবন্ধু রবিউল ইসলাম রবির প্রিয় লুচি-লাবড়া বা আলুর দম, পাবনা প্রেস ক্লাবে বসে খেতেও চেয়েছিলাম।” 

প্রেস ক্লাব আয়োজনের বিষয়টি নিশ্চিত করলেও নিরাপত্তা বাহিনী করতে দেয়নি। 

রাষ্ট্রপতি বলেন, “আমি বললাম, এটা খেলে কী হতো? তারাও তো এই খাবারের অংশীদার হতে পারত। আরে ভাই, নিরাপত্তার কী আছে? আমার কি ডিহাইড্রেশন বা ফুড পয়োজিং হয়ে যেত? যাই হোক, এটা রাষ্ট্রীয় ব্যাপার তো, সে বিষয়ে আমার আর প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করার সুযোগ নেই। সুযোগ একটাই–আই উইল হ্যাভ টু কন্ট্রোল মাইসেলফ।”

বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডার গল্প বলতে গিয়ে তিনি আরও বলেন, “জীবনে কোনো দিন একটিও সিগারেট খাইনি, এখানে আসলে একটা সিগারেট খাই, এমেচার। আসার সাথে সাথেই আমার বন্ধুরা বলেন, কী খাবি? আমি বলি, তোরা কী খাওয়াবি? তোরা তো কিপটা, পয়সা খরচ করিস না! তখন তারা জলযোগের সিঙ্গারা-চপ আনতো, খেয়ে আড্ডা দিতাম।”

রাষ্ট্রপতির বাল্যবন্ধু ও পাবনা প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি রবিউল ইসলাম রবি বলেন, “মহামান্য রাষ্ট্রপতি ছোটকাল থেকেই অত্যন্ত স্মার্ট আর বন্ধুবৎসল। আড্ডা ছিল আমাদের প্রাণ। 

“তিনি আমাকে বলেছিলেন, প্রেস ক্লাবে গেলে লুচি আর আলুর দম খাওয়ানোর জন্য। কিন্তু এবার আর সেটা সম্ভব হয়নি নিরাপত্তা বাহিনীর কড়াকড়ির জন্য।”

এ প্রসঙ্গে পাবনা প্রেস ক্লাবের সম্পাদক সৈকত আফরোজ আসাদ বলেন, “গত বছর তিনি (বর্তমান রাষ্ট্রপতি) পাবনা প্রেস ক্লাবে এলে ক্লাবেই লুচি-লাবড়া আর আলুর দম তৈরি করে তাকে পরিবেশন করা হয়েছিল। এ খাবারটি তার খুবই প্রিয়। 

“এর আগে যখনই তিনি এসেছেন, তখনই তাকে সিঙ্গারা, চপ বা লুচি-লাবড়া খাওয়ানো হতো। এবারে তিনি ক্লাবে তার প্রিয় খাবারটি খেতে না পেরে পরের সব অনুষ্ঠানে গিয়েই তার লুচি লাবড়া না খেতে পারার গল্পটি বলেছেন।” 

এর আগে গত সোমবার দুপুর ১২টা ২ মিনিটে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনকে বহনকারী একটি হেলিকপ্টার পাবনা শহীদ অ্যাডভোকেট আমিন উদ্দিন স্টেডিয়ামে অবতরণ করে। 

রাষ্ট্রপতির প্রটোকল অফিসার নবিরুল ইসলাম স্বাক্ষরিত সফরসূচি অনুযায়ী, রাষ্ট্রপতি দুপুর ১টা ৩৫ মিনিটে জেলা পরিষদে বঙ্গবন্ধু চত্বরের নামফলক উদ্বোধন ও বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। 

এরপর ১টা ৪৫ মিনিটে পাবনা সদরের আরিফপুর কবরস্থানে বাবা-মায়ের কবরে পুষ্পস্তবক অর্পণ শেষে মোনাজাতে অংশ নেন। 

দুপুর ২টায় স্কয়ার বাগানবাড়িতে পারিবারিক সমাধিস্থলে পুষ্পস্তবক অর্পণ এবং প্রার্থনায় অংশ নেন। সেখান থেকে সার্কিট হাউসে ফিরে রাত্রিযাপন করেন। 

সফরের দ্বিতীয় দিন মঙ্গলবার সকাল ১০টায় পাবনা বিসিক শিল্পনগরীতে স্কয়ার সায়েন্স অ্যান্ড লাইফ প্ল্যান্ট উদ্বোধন শেষে বেলা ১১টায় পাবনা প্রেস ক্লাবে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন।

বিকাল ৩টায় পাবনা সরকারি এডওয়ার্ড কলেজ মাঠে তাকে দেওয়া নাগরিক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগ দেন রাষ্ট্রপতি। 

তৃতীয় দিন, বুধবার বেলা ১১টায় পাবনা ডায়াবেটিক সমিতি পরিদর্শন ও মতবিনিময় করেন। 

বিকাল ৪টায় জেলা ও দায়রা জজ আদালতের জাদুঘর, বঙ্গবন্ধু কর্নার, বঙ্গবন্ধু ম্যুরাল উদ্বোধন এবং আইনজীবীদের সঙ্গে মতবিনিময় শেষে বিকাল ৫টায় ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা সাহাবুদ্দিন চুপ্পু বিনোদন পার্ক’ পরিদর্শন করেন তিনি। 

সফরের চতুর্থ দিন বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টায় সার্কিট হাউসে গার্ড অব অনার গ্রহণ শেষে ১১টা ৪০ মিনিটে ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেবেন রাষ্ট্রপ্রধান।