পঞ্চগড়ে আহমদিয়া সম্প্রদায়ের সালানা জলসাকে কেন্দ্র করে নিহত হন আরিফুর রহমান (২৭) নামের এক যুবক।
তার বড় বোন ফরিদা ইয়াসমিন (৩০) বলেন, জুমার নামাজ পড়ে বাসায় এসে খাবে বলেছিল আরিফ। এ কথা বলে কান্নায় ভেঙে পড়েন ফরিদা ইয়াসমিন।
আরিফুর রহমানের নিহতের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন পঞ্চগড়ের পুলিশ সুপার সিরাজুল।
আরিফুর রহমান পঞ্চগড় শহরের ইসলামবাগ এলাকায় ভাড়া বাসায় তার মা-বাবার সঙ্গে থাকতেন।
আরিফের বাবা ফরমান আলী (৬০) পুরোনো কাপড়ের ব্যবসা করেন। মা আলেয়া বেগম (৫৫) বাড়িতে কাপড় সেলাইয়ের কাজ করেন। আরিফ নিজেও সংসারে অর্থের জোগান দিতে একটি প্রিন্টিং প্রেসে কাজ নিয়েছিলেন।
শনিবার আরিফের বাসায় গেলে প্রতিবেশী ও এলাকাবাসীর ভিড় দেখা যায়।
ছেলে মারা যাওয়ার পর থেকে তসবি নিয়ে নির্বাক বসে আছেন আলেয়া বেগম।
জানতে চাইলে কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি জানান, আরিফ কৃষি ডিপ্লোমা করে চাকরির চেষ্টায় ছিলেন। বসে না থেকে শহরের একটি প্রিন্টিং প্রেসে কাজ নেন।
“শুক্রবার সে আমাকে বলে যায়, জুমার নামাজ পড়ে এসে ভাত খাবে। আমি ভাত নিয়ে অপেক্ষায় ছিলাম। কিন্তু আরিফ আসল না, ওর লাশ আসল। এখন আমরা কিভাবে ভাত খাব ওকে ছেড়ে?”
আরিফের বাবা ফরমান আলী বলেন, “আমরা নিদারুণ কষ্টে দিন কাটাই। কষ্ট করে ওদের পড়ালেখাও শিখিয়েছি। মেয়েকে বিয়ে দেওয়ার পর ও-ই ছিল আমাদের একমাত্র অবলম্বন। ওর স্বপ্নও ছিল অনেক। কিন্তু ও না থাকায় আমাদের ঘুমও হারিয়ে গেল।”
কথা হয় আরিফের বন্ধু কৌশিকের সঙ্গে।
তিনি বলেন, “কাজ ছাড়া সামান্য যে সময় পেত, সে সময়টুকু আমাদের সঙ্গে কাটাত আরিফ। কোনো রাজনীতিতে সে জড়িত ছিল না। ঘটনার সময় সে জুমার নামাজ শেষে আমাদের সঙ্গেই তেতুলিয়া রোডের এক পাশে আড্ডায় ছিল। হঠাৎ মাথায় কী যেন এসে লাগে, সঙ্গে সঙ্গে লুঠিয়ে পড়ে। দ্রুত তাকে পঞ্চগড় আধুনিক হাসপাতালে ও পরে রংপুর মেডিকেলে নেওয়ার পথে তার মৃত্যু হয় ।“
কৌশিক আরও বলেন, “সবার সঙ্গেই সে মিশত। শুধু বলত, একটা চাকরি খুব দরকার পরিবারকে ভালো রাখতে।”
শনিবার দুপুরে পঞ্চগড় কেন্দ্রীয় গোরস্থানে তার দাফন সম্পন্ন হয়।
এর আগে আরিফুর রহমানের জানাজায় জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার সাদাত, সহসভাপতি নাঈমুজ্জান মুক্তা ও ইসলামী সংগঠনগুলোর নেতা-কর্মীরা ছিলেন।
খতমে নবুয়াত সংরক্ষণ পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ বলেন, “আরিফ আমাদের সংগঠনের কর্মী না হলেও একজন মুসলিম হিসেবে সে আমাদেরই লোক। তার শহিদি মৃত্যু হয়েছে।”
এ ঘটনায় সংগঠনের পক্ষ থেকে মামলা বা কোনো কর্মসূচি আপাতত নেই বলে তিনি জানান।
এদিকে, শনিবার বিকালে পঞ্চগড় শহরের আহমদনগরে জলসা মাঠে এক সংবাদ সম্মেলন ডাকে আহমদিয়া মুসলিম জামাত।
সেখানে সালানা জলসার আহ্বায়ক আহমদ তবশির চৌধুরী বলেন, “আমাদের একজন নিহত হওয়ায় আমরা থানায় লিখিত অভিযোগ দিলেও আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো রিসিভ কপি দেওয়া হয়নি।”