বৃহস্পতিবার বিকালে ১২টি দোকানে সয়াবিন তেলের খোঁজ করলে নয়জনই জানান, তাদের কাছে বোতলজাত সয়াবিন নেই।
Published : 27 Feb 2025, 11:20 PM
নারায়ণগঞ্জ শহরের সবচেয়ে বড় পাইকারি ও খুচরা বাজার দিগুবাবুর বাজার। এ বাজারে বোতলজাত সয়াবিন তেলের সংকট দেখা দিয়েছে। কয়েকটি দোকানে তেল বিক্রি হলেও তা অতিরিক্ত দামে কিনতে হচ্ছে ক্রেতাদের।
বৃহস্পতিবার বিকালে এ বাজারের অন্তত ১২টি দোকানে সয়াবিন তেলের খোঁজ করলে নয়জনই জানান, তাদের কাছে বোতলজাত সয়াবিন নেই। বাকি তিনটি দোকানে লিটারপ্রতি অন্তত ২০ টাকা বেশি দলে বিক্রি হতে দেখা গেছে।
বিক্রেতাদের দাবি, কোম্পানির ডিলাররা কয়েকদিন ধরেই সয়াবিন তেল সরবরাহ করছেন না। ফলে তাদের দোকানে তেলের কোনো মজুদ নেই।
যদিও ক্রেতাদের অভিযোগ, রজমান মাসকে সামনে রেখে অসাধু ব্যবসায়ীরা তেলের মজুদ করে বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরি করেছেন। যারা তেল বিক্রি করছেন তারাও বোতলে লেখা মূল্যের চেয়েও অধিক দাম রাখছেন।
ক্রেতারা বলছিলেন, পাঁচ লিটার সয়াবিন তেলের মূল্য বোতলে লেখা আছে ৮৫০ টাকা। কিন্তু দোকানিরা দাম চাইছেন এক হাজার ২০ টাকা। এক লিটার ও দুই লিটারের বোতলগুলোও একইভাবে অতিরিক্ত দামে বিক্রি হচ্ছে।
সাধারণ ক্রেতা হিসেবে, একটি দোকানে পাঁচ লিটারের তেল কিনতে গিয়েও এর সত্যতা পাওয়া যায়।
পরে সংবাদকর্মী পরিচয় দিয়ে অতিরিক্ত দাম চাওয়ার কারণ জানতে চাইলে ওই বিক্রেতা বলেন, “বাজারে তেলের সরবরাহ নেই। ডিলারদের কাছ থেকেও অতিরিক্ত মূল্যে তাদের তেল কিনতে হচ্ছে। ফলে বাধ্য হয়ে তারা বেশি দামে বিক্রি করছেন।”
দিগুবাবুর বাজারের লিয়াকত সুপার মার্কেটের সততা ভ্যারাইটিজ স্টোরের বিক্রেতা বলেন, “বাজারে এখন তেল নেই। কয়েকমাস ধরে কোম্পানিগুলো তেলের সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছে।”
দিগুবাবুর বাজারের মীর জুমলা সড়ক সংলগ্ন বাবা শাহ্ জালাল স্টোরের বিক্রেতা বলেন, “বাজারে তেল নেই। বেশি দাম নিলেও মানুষ যে তেল পাচ্ছে, এইটাও তো বেশি।”
যদিও তেল সরবারহকারী প্রতিষ্ঠানের এক বিক্রয় প্রতিনিধির সঙ্গে কথা বলে জানা গেল ভিন্ন কথা। তার ভাষ্য, বাজারে তেলের সরবরাহ কমিয়ে দিচ্ছে কোম্পানি, এ কথা সত্য। তবে যা সরবারহ হচ্ছে সেগুলোও মজুদ রেখে বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরি করছেন।
ওই বিক্রয় প্রতিনিধি বলেন, “তেল সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছে কোম্পানি। তবে যেটুকু সরবরাহ করা হচ্ছে, সেটিও কিছু দোকানি মজুত করে দাম বেশি নিচ্ছেন। দুই লিটার বোতলজাত সয়াবিন বিক্রয়কর্মীরা দিচ্ছেন ৩৩২ টাকা দরে। যেটি বিক্রি করার কথা ৩৫০ টাকায় কিন্তু দোকানিরা নিচ্ছে ৪১০ টাকা করে।”
নৈশ প্রহরী হিসেবে চাকরি করেন জামাল হোসেন। রমজান মাসকে সামনে রেখে বাজারে তেলের সংকট তৈরি করে দাম বেশি রাখায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন এ ভোক্তা।
জামাল বলেন, “দুইদিন পর রমজান মাস। এ মাসে সব থেকে বেশি চাহিদা থাকে সয়াবিন তেলের। কিন্তু আজকে বাজারে এসে দেখি দোকানিরা বলছে, তেল নেই। কিন্তু কোনো কোনো দোকানে তেল থাকলেও তা অনেক বেশি দামে বিক্রি করছে।”
২৪ ফেব্রুয়ারি শহরের নিতাইগঞ্জে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের এক অভিযানে অতিরিক্ত দামে তেল বিক্রি করায় মনির স্টোর নামে একটি পাইকারি দোকানের মালিককে তিন লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। একইদিন ফতুল্লারও দুটি দোকানিকে জরিমানা করা হয়।
রমজান মাসকে ঘিরে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য স্থিতিশীল রাখার আহ্বান জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞা। অতিরিক্ত দাম আদায়ের জন্য বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরি করা ব্যবসায়ীদের প্রতি হুঁশিয়ারি উচ্চারণও করেন তিনি।
বুধবার আসন্ন রমজানের বাজার নিয়ে জেলা টাস্কফোর্স কমিটির এক মতবিনিময় সভায় তিনি বলেন, “রমজান মাসে কেউ যদি কৃত্রিম সংকট তৈরি করে, তাহলে তার কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করা হবে। ব্যবসায়ীদের প্রতি আমাদের অনুরোধ থাকবে, তারা যেন এ ধরনের অনৈতিক কাজ থেকে বিরত থাকেন। কেউ যদি এমন কাজের তথ্য পান, তাহলে প্রশাসনকে জানান।”