অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রফিকুল আলম বলেন, “পুলিশ ও বিজিবি দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।”
Published : 31 Dec 2023, 10:28 PM
রাজশাহী-৪ আসনে আওয়ামী লীগ ও স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে হামলা, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনায় আবার রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে বাগমারা উপজেলা। এতে অন্তত ৩০ জন আহত হয়েছেন।
রোববার বিকাল সাড়ে ৪টা থেকে ৫টা পর্যন্ত উপজেলার গণীপুর ইউনিয়নের মাদিরাগঞ্জ বাজারে স্বতন্ত্র প্রার্থী প্রকৌশলী এনামুল হক এবং আওয়ামী লীগের প্রার্থী আবুল কালাম আজাদের সমর্থকদের মধ্যে এ ঘটনা ঘটে বলে রাজশাহী জেলা পুলিশের মুখপাত্র ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রফিকুল আলম জানান।
আহতদের মধ্যে বেশ কয়েকজনকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠানো হয়েছে। যাদের বেশীর ভাগের ইটের আঘাতে মাথা ফেটে গেছে। এ ছাড়া স্বতন্ত্র প্রার্থী এনামুল হকের শীরেরও ইটের আঘাত লেগেছে।
আহতরা হলেন- শাহাদত হোসেন, আশরাফুল ইসলাম, হৃদয়, নাইম ইসলাম, আতিক বাশার সবুজ, ফাইসাল, আবু বাক্কার সিদ্দিক, মিঠু, এনামুল হক, আজাদ, মাসুদ রানা, মিজানুর রহমান, তানভিরুল আলম তোহা, আব্দুর রশিদ, জাহাঙ্গীর আলম, আবু সাঈদ, মেহের আলী, সোলাইমান আলী, মরিয়ম বেগম, আবেদা বেগম, জাহানারা, ছবেদা।
এর মধ্যে নয়জনকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে থেকে রাজশাহী মেডিকের কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে। এরা হলেন- মিঠু (২৬), শাহাদত (৫৯), নাইম (২৮), আতিক (৩০), মেহের আলী (৪৫), ফায়সাল (২১), মিজানুর (২৬), আবু বক্কর সিদ্দিক (৪৫), মাসুদ রানা (২৫)।
রাত পৌনে ৯টার দিকে তারা রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে আসেন। তখন সেখানকার চিকিৎসক তাদের ৮, ৩১ ও ৫ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি করেন।
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে মাদারিগঞ্জ বাজারের উত্তর পাশ থেকে গণসংযোগ শুরু করেন স্বতন্ত্র প্রার্থী এনামুল হক। গণসংযোগ শুরু পর সেটি প্রচার মিছিলে রূপ নেয়।
স্লোগান দিতে দিতে প্রার্থী ও তার সমর্থকরা প্রায় ২০০ গজ যাওয়ার পর নৌকার নির্বাচনি ক্যাম্প থেকে হামলা করা হয় বলে অভিযোগ করেন কাঁচি প্রতীকের সমর্থকরা।
এ সময় মিছিলে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করা হয়। এতে মিছিল ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। এ সময় ইটের আঘাত পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী এনামুল হক একটি দোকানে ঢুকে নিজেকে রক্ষা করেন।
পরে উভয় পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও ইট-পাটকেল নিক্ষেপ শুরু হয়। প্রায় আধা ঘণ্টা ধরে চলে এ সংঘর্ষ। খবর পেয়ে বিজিবি ও পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান আসাদ বলেন, আহতরা সবাই আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও সমর্থক। তার স্বতন্ত্র প্রার্থী ও টানা তিনবারের সংসদ সদস্য এনামুল হকের কর্মী হিসেবে নির্বাচনি প্রচারে অংশ নিয়েছিলেন। হামলায় স্বতন্ত্র প্রার্থীও ইটের আঘাত পেয়েছেন।
স্বতন্ত্র প্রার্থী এনামুল হক বলেন, “প্রচার শুরুর পর থেকে নৌকার প্রার্থী বাগমারাজুড়ে সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করার চেষ্টা করে আসছেন। যাতে সাধারণ ভোটাররা ভোটকেন্দ্রে যেতে না পারেন। এর অংশ হিসেবে আমার গণসংযোগ ও প্রচার মিছিলে নৌকার প্রার্থীর সমর্থকরা দুই দফায় হামলা করেছে।
“হামলায় কয়েকজন নারীসহ অন্তত ৩০ জন আহত হন। আমি এ ঘটনার বিচার চাই এবং ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের চিহ্নিত করে তাদের গ্রেপ্তারের দাবি জানাই।”
তবে এ ঘটনার পাল্টা অভিযোগ তুলেছেন নৌকার প্রার্থী আবুল কালাম আজাদ।
তিনি বলেন, “গণীপুর ইউনিয়ন নৌকার প্রচার কমিটির আহ্বায়ক আব্দুর রাজ্জাক বাবুসহ আমার কর্মীরা মাদারিগঞ্জ বাজারের প্রচার অফিসে বসে ছিলেন। এ সময় স্বতন্ত্র প্রার্থী প্রচার মিছিল থেকে আমার অফিসে হামলা করে।
“আমার সমর্থকরাও পাল্টা হামলা করে। এতে উভয় পক্ষে মধ্যে সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষে তাদের ১০ থেকে ১৩ জন কর্মী আহত হয়েছেন”, দাবি করেন আওয়ামী লীগ প্রার্থী।
রাজশাহী জেলা পুলিশের মুখপাত্র ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রফিকুল আলম বলেন, “পুলিশ ও বিজিবি দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। ঘটনাস্থলে পুলিশের পাশাপাশি বিজিবি মোতায়েন রয়েছে। এ ঘটনায় জড়িতদের শনাক্ত আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”