সংগঠনের অবস্থানের বিরোধিতা করার অভিযোগ এনে কুমিল্লা মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদের দুই নেতার পদ স্থগিত করা হয়েছে।
Published : 13 Oct 2023, 09:16 PM
কুমিল্লা নগরীতে বিক্ষোভ মিছিলে যুবলীগ ও ছাত্রলীগের হামলা ‘পূর্বপরিকল্পিত’ বলে অভিযোগ করেছেন হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের নেতারা।
শুক্রবার সকালে সমাবেশ শেষে মিছিলে হামলার পর নগরীর ঠাকুরপাড়া এলাকায় শ্মশান কালী মন্দিরে এক সংবাদ সম্মেলনে এই অভিযোগ করেন পরিষদের জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক তাপস বকশী।
এ সময় লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, “কুমিল্লা সদর আসনের সংসদ সদস্য আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহারের পূর্বঘোষিত হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সমাবেশ ও মিছিল প্রতিহতের অংশ হিসেবে যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা পুলিশের বাধা উপেক্ষা করে এই হামলা চালিয়েছে।”
“হামলায় চারজন আহত হয়েছে। তারা হলেন- পরিষদের কর্মী সুশীল দাস, আদিত্য দাস, তন্ময় দাস ও কালিপদ শীল। এর মধ্যে আদিত্য দাসের মাথা ফেটে গেছে।
লিখিত বক্তব্যে চার দফা দাবি জানানো হয়। এগুলো হচ্ছে- অনতিবিলম্বে হামলাকারীদের গ্রেপ্তার করতে হবে, এমপি বাহাউদ্দিন বাহার দেওয়া শারদীয় দুর্গাপূজা সংক্রান্ত বক্তব্য প্রত্যাহার করতে হবে, দুর্গা পূজার আগে ও পরে ঐক্য পরিষদের নেতাদের ওপর চোরাগোপ্তা হামলা যাতে না হয়, সেই ব্যবস্থা করতে হবে এবং শান্তিপূর্ণভাবে পূজা উদযাপনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে ঐক্য পরিষদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বিকাশ চন্দ সাহাসহ যুব ও ছাত্র ঐক্য পরিষদের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
ঐক্য পরিষদের বক্তব্যের ব্যাপারে জানতে কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সংসদ সদস্য আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহারের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি তা রিসিভ করেননি।
ঐক্য পরিষদের নেতাকর্মী ও পুলিশের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কুমিল্লা-৬ আসনের সংসদ সদস্য আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার গত ৪ অক্টোবর জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে শারদীয় দুর্গাপূজার প্রস্তুতি উপলক্ষে আয়োজিত এক সভায় বক্তব্য দেন।
এ সময় হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের পূজা চলাকালে মদ খেয়ে মণ্ডপে নাচানাচি না করে ‘মাদকমুক্ত পূজা আয়োজনের আহ্বান জানিয়ে মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বাহার বলেন, “পূজা চলাকালে মদ খেয়ে নাচানাচি বন্ধ করতে হবে। আসুন, কুমিল্লা থেকেই শুরু হোক মাদকমুক্ত পূজা আয়োজন। মণ্ডপে লিখে দেবেন ‘মাদকমুক্ত পূজা’।”
তার এই বক্তব্য নিয়ে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া হয়। ওই বক্তব্যের প্রতিবাদে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ শুক্রবার সকালে কর্মসূচি ঘোষণা করে। বাহারের বক্তব্যের প্রতিবাদ ছাড়াও এর সঙ্গে চারণ কবি রাধাপদ রায়ের ওপর হামলাকারীদের শাস্তির দাবিটি যুক্ত করা হয়।
এর মধ্যে বৃহস্পতিবার দুপুরে কুমিল্লা টাউন হল অডিটোরিয়ামে মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদের ব্যানারে এক অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন সংসদ সদস্য বাহার। ‘শান্তিপূর্ণ কুমিল্লাকে অশান্ত করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত কিছু স্বার্থন্বেষী মহল শারদীর দুর্গাপূজা নিয়ে সনাতন ধর্মাবলম্বী সম্প্রদায়ের সঙ্গে বিভ্রান্তি ছড়ানোর’ প্রতিবাদে এই মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয়।
ওই সভায় বাহার দাবি করেন, তার বক্তব্যকে ‘বিকৃতভাবে’ উপস্থাপন করা হয়েছে। তবে আবারও তিনি ‘মদমুক্ত পূজা’ করার আহ্বান জানান এবং ঘোষণা দেন, “কুমিল্লায় মদ ও মাদকমুক্ত পূজা হবেই।”
এ সময় তিনি শুক্রবারের জন্য দুটি কর্মসূচি ঘোষণা দিয়ে বলেন, কান্দিরপাড়ে সকালে মহানগর ছাত্রলীগ ও যুবলীগ এবং বিকালে স্বেচ্ছাসেবক লীগ, শ্রমিকলীগ ও কৃষকলীগ শান্তি সমাবেশ করবে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, চাপা ক্ষোভ, অস্থিরতা ও উত্তেজনার মধ্যেই সকালে নগরীর নজরুল এভিনিউ এলাকার রাজস্থলী মন্দিরের সামনে জড়ো হতে থাকেন ঐক্য পরিষদের নেতাকর্মীরা। সেখান থেকে প্রায় আধা কিলোমিটার দূরে কান্দিরপাড়ে জড়ো হন ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতাকর্মীরা।
সমাবেশ শেষে ঐক্য পরিষদের নেতাকর্মীরা বিক্ষোভ মিছিল বের করে। সে সময় পুলিশ নজরুল এভিনিউ সড়কের কর ভবনের সামনে মিছিলকারীদের বাধা দেয়। প্রায় কাছাকাছি সময়ে কান্দিরপাড় পূবালী চত্বর থেকে যুবলীগ ও ছাত্রলীগের কয়েকশ নেতাকর্মী মিছিলকারীদের ওপর হামলা করে বলে অভিযোগ করেন ঐক্য পরিষদের নেতারা।
এ প্রসঙ্গে কুমিল্লার পুলিশ সুপার মো. আব্দুল মান্নান বলেন, “আমরা আহতদের বাড়িতে গিয়ে তাদের খোঁজ-খবর নিয়েছি। হামলার ঘটনায় জড়িতদের আইনের আওতায় আনাসহ হিন্দু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তায় সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।”
পূজা উদযাপন পরিষদের দুই নেতার পদ স্থগিত
এমপি বাহারের বক্তব্যের ইস্যুতে সংগঠনের অবস্থানের বিরোধিতা করার অভিযোগ এনে কুমিল্লা মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদের দুই নেতার পদ স্থগিত করা হয়েছে।
শুক্রবার বিকালে উদযাপন পরিষদের সভাপতি জে এল ভৌমিক ও সাধারণ সম্পাদক ড. চন্দ্রনাথ পোদ্দার স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে কুমিল্লা মহানগরের সভাপতি শিব প্রসাদ রায় ও সাধারণ সম্পাদক অচিন্ত্য দাস টিটুর পদ স্থগিত করার তথ্য জানানো হয়ে।
“একই সঙ্গে কুমিল্লা মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদের প্রথম সহসভাপতি অমল দত্তকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এবং প্রথম যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সঞ্জয় কুমার রায় ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
পাশাপাশি শিব প্রসাদ রায় ও সাধারণ সম্পাদক অচিন্ত্য দাস টিটুকে কারণ দর্শানোর নোটিশও দেওয়া হয়েছে সংগঠনের পক্ষ থেকে। আগামী ১৫ দিনের মধ্যে তাদের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
আরও পড়ুন:
কুমিল্লায় হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের মিছিলে যুবলীগ-ছাত্রলীগের হামলা