পুলিশ যে ২৪টি মরদেহ উদ্ধার করেছে, এর মধ্যে আটটি এখনও শনাক্ত হয়নি। এর বাইরে একটি লাশ অজ্ঞাত হিসেবে দাফন করা হয়েছে।
Published : 06 Sep 2024, 07:58 PM
ফেনীতে ভয়াবহ বন্যায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৯ জনে। এর মধ্যে ১৮ জন পুরুষ, সাতজন নারী ও চারটি শিশু রয়েছে।
মারা যাওয়াদের মধ্যে ২০ জনের পরিচয় শনাক্ত হয়েছে, অপর নয় জনের পরিচয় শনাক্তের চেষ্টা চলছে। অজ্ঞাত হিসেবেই দাফন হয়েছে ওই নয় জনের।
বৃহস্পতিবার রাতে জেলা প্রশাসক মোসাস্মৎ শাহীনা আক্তার স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বন্যায় মৃতের বিষয়টি জানানো হয়েছে।
জেলায় বন্যার ভয়াবহতা এতটাই বিস্তৃত ছিল যে, নিহত অনেককে কবর দেওয়ার মাটি পাওয়া যায়নি। চিরকুট লিখে কিছু মরদেহ ভাসিয়ে দেওয়া হয়েছিল কলাগাছের ভেলায়।
পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (এসবি) বরাত দিয়ে জেলা প্রশাসক জানান, বন্যায় ফেনী সদরে আটজন, ফুলগাজীতে সাতজন, সোনাগাজীতে ছয়জন, দাগনভূঞায় তিনজন, ছাগলনাইয়ায় তিনজন ও পরশুরামের দুজন মারা গেছে।
তাদের মধ্যে সোনাগাজীতে চারজন, ফেনী সদরে তিনজন এ ছাগলনাইয়ায় একজন অজ্ঞাত রয়েছে। এর বাইরেও একটি লাশ অজ্ঞাত হিসেবে দাফন করা হয়েছে।
ফেনী মডেল থানার ওসি রুহুল আমীন বলেন, “বন্যায় এখন পর্যন্ত ফেনী সদরে আটজন মারা গেছেন। তাদের মধ্যে পাঁচজনের পরিচয় মিলেছে। তিন জনের মরদেহ অজ্ঞাত হিসেবেই দাফন করা হয়েছে।”
ফেনীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার দ্বীন মোহাম্মদ বলেন, “সাধারণত মরদেহের সন্ধান পেলে থানায় খবর দেওয়া হয়। তখন পুলিশ এ মরদেহগুলো উদ্ধার করে। বন্যায় এ পর্যন্ত পুলিশ ২৪টি মরদেহ উদ্ধার করেছে। যার মধ্যে আটটি এখনও শনাক্ত করা হয়নি।”
জেলা প্রশাসক মোসাম্মৎ শাহীনা আক্তার বলেন, “বন্যায় জেলাজুড়ে অনেক মৃত্যুর তথ্য পাওয়া যায়। তবে মৃত্যুর সঠিক কারণ এখনো জানা যায়নি। আবার সবার পরিচয়ও পাওয়া যায়নি। মৃত্যুর কারণ ও পরিচয় নিশ্চিতে আরও সময় ও তদন্ত হবে। তবে উদ্ধার হওয়া সবগুলো লাশই দাফন করা হয়েছে। বন্যায় নিহতের পরিবারকে সহায়তা দেওয়ার জন্য স্ব স্ব উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।”
তিনি জানান, যাদের পরিচয় পাওয়া গেছে তাদের পরিবারকে নগদ ২০ হাজার টাকা ও শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে।
টানা বর্ষণ ও ভারতীয় পাহাড়ি ঢলে গত ২১ অগাস্ট সকাল থেকে ফেনীতে বন্যার ভয়াবহতা শুরু হয়।
সীমান্তবর্তী পরশুরাম ও ফুলগাজীতে মুহুরী-কহুয়া-সিলোনিয়া নদীর বেড়িবাঁধের অর্ধশতাধিক স্থানে ভাঙন ধরে প্রায় ১০ ফুট পানিতে প্লাবিত হয় জেলার ৬ উপজেলা।
ভয়াবহ বন্যায় ১১ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হন। ঘরের মধ্যে আটকা পড়েন কয়েক লাখ মানুষ। বের হতে না পারায় ঘরেই মারা যান কয়েকজন। শুধু সড়ক যোগাযোগ নয়, জেলায় মোবাইল যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন ছিল পাঁচদিন। বন্যার ভয়াবহতায় শুধু মানুষের মৃত্যু নয় জেলাজুড়ে ঘর-বাড়ি, কৃষি, মৎস্য, গবাদি পশু-পাখি, সড়ক, শিক্ষা, ব্যবসা-বাণিজ্যে কয়েক হাজার কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।