চলতি মৌসুমে মৌমাছির সংকট থাকায় হাত দিয়ে পেঁয়াজ ফুলের পরাগায়ন করতে হচ্ছে বলে জানান এক চাষি।
Published : 08 Mar 2025, 09:42 AM
পেঁয়াজ চাষের পাশাপাশি ফরিদপুর জেলাজুড়ে পেঁয়াজ বীজ উৎপাদনেরও খ্যাতি রয়েছে। পেঁয়াজ বীজ উৎপাদনে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম জেলার স্থানটি দখল করে রেখেছেন এ জেলার চাষিরা।
চলতি মৌসুমে এ জেলায় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি জমিতে পেঁয়াজ বীজের আবাদ হয়েছে; যেখান থেকে অন্তত ৫০০ কোটি টাকার বীজ উৎপাদনের আশা করেছে কৃষি বিভাগ।
ফরিদপুরে এক যুগ ধরে পেঁয়াজ বীজের বাম্পার ফলন হচ্ছে। দেশের চাহিদার মোট ৫০ শতাংশের বেশি বীজ সরবরাহ হয় এ জেলা থেকে। আর এই পণ্য উৎপাদন করে অর্থনৈতিকভাবে জীবন মানের উন্নয়ন ঘটিয়েছেন এ জেলার চাষিরা।
ফলে ধান ও পাটের পর দিন দিন পেঁয়াজ চাষ ও বীজ উৎপাদনে আগ্রহ বাড়ছে চাষিদের। আর তাইতো এ অঞ্চলের মানুষ পেঁয়াজ বীজের নাম দিয়েছেন ‘কালো সোনা’। এখন সেই বীজ উৎপাদনে ক্ষেত পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন চাষি।
জেলা সদরসহ বোয়ালমারী, ভাঙ্গা, মধুখালী ও সদরপুর উপজেলার মাঠগুলোতে যেদিকে চোখ যায় সেদিকেই শুধু সাদা কদমের মত ফুলের সমারোহ। এখন কৃষক-কৃষানিরা পরিবারের সদস্য ও শ্রমিক নিয়ে পেঁয়াজ ক্ষেতে এসব সাদা কদমে হাত দিয়ে পরাগায়নের কাজ করছেন। কোথাও আবার আগাছা পরিষ্কার ও কদম পচা রোগ দমনে ওষুধ স্প্রে করা হচ্ছে।
সরজমিনে সদর উপজেলার অম্বিকাপুর ইউনিয়নে দেখা যায় বিভিন্ন মাঠজুড়ে পেঁয়াজ বীজের বাম্পার ফলন হয়েছে। এখন চলছে শেষ মুহূর্তের পরিচর্যা।
নিজ ক্ষেতে কাজ করতে করতে অম্বিকাপুরের কৃষানি শাহেদা বেগম বলেন, “ছোট শিশুর মত যত্ন করতে হয় বীজ উৎপাদনে। নভেম্বর-ডিসেম্বরে চাষ শুরু হয়েছে। আর ফলন উঠবে এপ্রিল-মে মাসে। এরপর এক বছর বীজ সংরক্ষণ করে পরের বছর আবার চাষ ও বিক্রি হবে। তবে চলতি মৌসুমে মৌমাছির সংকট থাকায় হাত দিয়েই পরাগায়ন করতে হচ্ছে।”
এ সময় দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে পেঁয়াজ বীজের ক্ষেতে কাজ করতে আসেন শ্রমিকরা। তারা জানান, বীজের ক্ষেতে কাজ করেই চলে তাদের সংসার ও সন্তানদের পড়ালেখার খরচ।
পাবনা থেকে পেয়াঁজ বীজ ক্ষেতে কাজ করতে এসেছেন আনোয়ার, আব্দুর রহমান পরামানিকসহ অনেকেই। তারা জানান, গত এক যুগের বেশি সময় ধরে বিভিন্ন জেলার শ্রমিকরা পেঁয়াজ চাষাবাদের কাজে যুক্ত হতে ফরিদপুর অঞ্চলে আসছেন।
পেঁয়াজ বীজ ঘরে তোলা পর্যন্ত দিনরাত পরিশ্রম করেন তারা। ভালো দানা উৎপাদন করতে পারলে মালিকের যেমন লাভ হয়, তেমনি আর্থিক পরিবর্তন আসে তাদের জীবনেও।
কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, দেশের চাহিদার অর্ধেক বীজ উৎপাদন হয় ফরিদপুরে। এ বছর এক হাজার ৮৫৪ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ বীজের আবাদ হয়েছে। যেখান থেকে উৎপাদিত বীজের বাজার মূল্য ৫০০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
ফরিদপুর সদর উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ আনোয়ার হোসেন বলেন, “গুণগত মান ভালো হওয়ায় ফরিদপুরের বীজের চাহিদা সর্বত্র। প্রকার ভেদে এর বাজার মূল্য মণপ্রতি দুই থেকে পাঁচ লাখ পর্যন্ত ওঠে। এই পণ্যটির বাজার মূল্য অধিক হওয়ায় স্থানীয়রা একে ‘কালো সোনা’ বলে থাকেন।”
ফরিদপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মো. শাহাদুজ্জামান বলেন, এ বছর জেলায় পেঁয়াজ বীজ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৯৬৪ টন। তবে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি জমিতে পেঁয়াজ বীজের আবাদ হওয়ায় উৎপাদনও বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে; যার বাজার মূল্য ৫০০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে।