নদীর পানিতে খাঁচা তৈরি করে মাছ চাষ করা মৎস্যচাষিরা কোটি কোটি টাকা ক্ষতির মধ্যে পড়েছেন বলে দাবি।
Published : 03 Jun 2023, 05:51 PM
সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জ উপজেলায় ফুলজোড় নদীতে কারখানার বিষাক্ত বর্জ্য ফেলায় দূষণ ছড়িয়ে পড়েছে। নদীটির প্রায় ২৫ কিলোমিটারজুড়ে মাছসহ জলজপ্রাণী মরে ভেসে উঠছে।
কোটি কোটি টাকা ক্ষতির মধ্যে পড়েছেন বলে দাবি নদীর পানিতে খাঁচা তৈরি করে মাছ চাষ করা দুই শতাধিক মৎস্যচাষির।
স্থানীয়রা জানান, দূষণে মানুষ ও গবাদিপশুও আক্রান্ত হচ্ছে।
রায়গঞ্জের ভরত চন্দ্র সাহা, আল মামুন ও লোকমান হোসেন জানান, ফুলজোড় নদীতে রায়গঞ্জ উপজেলার চান্দাইকোণা থেকে নলকা পর্যন্ত প্রায় ২৫ কিলোমিটার এলাকায় খাঁচা পদ্ধতিতে মাছ চাষ করেন তারা। দুই হাজারের বেশি খাঁচার প্রতিটিতে ৩০ থেকে ৪০ মণ করে মাছ ছিল।
এ অবস্থায় কয়েকদিন আগে নদীর উজানে বগুড়ার শেরপুরে অবস্থিত মজুমদার ফুড প্রডাক্টস ও এস.আর কেমিক্যাল কারখানার বর্জ্য নদীতে ফেলায় পানি বিষাক্ত হয়ে নীল রং ধারণ করেছে। গত কয়েকদিনে খাঁচায় থাকা সব মাছ মরে ভেসে উঠেছে।
চাষিরা আরও জানান, মাছ মরে যাওয়ায় তাদের ১৪ কোটি টাকার বেশি ক্ষতি হয়েছে। ঋণ করে মাছ চাষ করে তারা এখন নিঃস্ব।
এসব চাষি সরকারের আর্থিক সহযোগিতার পাশাপাশি দূষণকারী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।
নলকা ইউপির চেয়ারম্যান আবু বক্কার সিদ্দিক জানান, নদীর পানি বিষাক্ত হওয়ায় শুধু খাঁচায় চাষ করা মাছ নয়, নদীর গভীরে দেশীয় মাছ ও অন্য জলজপ্রাণীও মরে যাচ্ছে। পানির দুর্গন্ধে নদী পাড়ের মানুষ অতিষ্ট হয়ে পড়েছেন।
তিনি জানান, ক্ষতিগ্রস্থ মাছ চাষিরা ক্ষতিপূরণের দাবিতে এবং কারখানা দুটির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে গত বুধবার মানববন্ধন করেছেন।
সিরাজগঞ্জ জেলা মৎস্য কর্মকর্তা শাহিনুর রহমান জানান, নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার পর ফুলজোড় নদীতে কারখানার বিষাক্ত বর্জ্য ফেলার প্রাথমিক প্রমাণ মিলেছে। কারখানা দুটির বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।
বর্তমান পরিস্থিতিতে কিছুদিন ওই নদীর পানি ব্যবহার না করার জন্য স্থানীয়দের বলা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক মীর মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান বলেন, “বগুড়ার শেরপুরের দুটি প্রতিষ্ঠানের বিষাক্ত বর্জ্য নদীতে ফেলার কারণে খাঁচায় থাকা মাছ মরে গেছে। গবাদিপশুর মৃত্যু ও অসুস্থ হওয়ার খবর পেয়েছি। পানি ব্যবহার করায় কয়েকজন মানুষও অসুস্থ হয়েছেন।
“এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বগুড়ার জেলা প্রশাসকের সঙ্গে পরামর্শ করেছি; পরিবেশ অধিদপ্তরকেও ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।”
জেলা প্রশাসক আরও বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত মাছ চাষিদের তালিকা তৈরি করার জন্য মৎস্য অফিসকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
পরে ওই তালিকা অনুযায়ী সরকারি সহায়তা দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন তিনি।
পরিবেশ অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয়ের উপপরিচালক (এনফোর্সমেন্ট উইং) সৈয়দ আহমদ কবির বলেন, গত বৃহস্পতিবার পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের নির্দেশে তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। সঙ্গে রাজশাহী বিভাগীয় কার্যালয়, বগুড়া জেলা কার্যালয়ের কর্মকর্তা এবং রায়গঞ্জের ইউএনও ছিলেন।
“নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে, প্রাথমিকভাবে দূষণের সত্যতা পাওয়া গেছে। সংগৃহীত নমুনা আরও পরীক্ষার জন্য ল্যাবে পাঠানো হয়েছে।”
এ দিকে নদীতে বর্জ্য ফেলার অভিযোগ অস্বীকার করে বগুড়ার শেরপুর উপজেলার এস. আর কারখানার মহা-ব্যবস্থাপক শামসু উদ্দিন সেন্টু শনিবার দুপুরে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ফুলজোড় নদীতে বর্জ্য ফেলার ঘটনার সাথে আমাদের কারখানা জড়িত নয়। ইটিপি প্লান্টের মাধ্যমে আমাদের কারখানার বর্জ্য নিয়ন্ত্রণ করা হয়ে থাকে।”
তিনি আরও বলেন, “নদীতে মাছ মরে যাওয়ার ঘটনার পর পরিবেশ অধিদপ্তর ও শেরপুর উপজেলা প্রশাসন গত মঙ্গল, বুধ ও বৃহস্পতিবার পর পর তিনদিন আমাদের কারখানা পরিদর্শন করেছেন।”
তবে বগুড়া জেলার শেরপুরে অবস্থিত মজুমদার ফুড প্রডাক্টসের কর্তৃপক্ষের কাছে ফোন কল ও এসএমএস করা হলেও তাদের কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।