ঢাকা থেকে ময়মনসিংহগামী সব যানবাহন এই লেন ব্যবহার করতে পারবে।
Published : 05 Mar 2024, 06:00 PM
‘যানজট কমাতে’ বাস র্যাপিড ট্রানজিট-বিআরটি প্রকল্পের গাজীপুর চান্দনা চৌরাস্তা এলাকার উড়াল সড়কের একটি লেন খুলে দেওয়া হয়েছে।
গাজীপুর মহানগর পুলিশের উপকমিশনার (ট্রাফিক) মো. আলমগীর হোসেন জানান, মঙ্গলবার সকালে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায় ঢাকা-ময়মনসিংহ লেনের নিচের অংশ এবং গাজীপুর বাসস্ট্যান্ড (শিববাড়ী) এলাকা থেকে ঢাকামুখী লেনটি (শহরে প্রবেশের) খুলে দেওয়ার পর যানবাহন চলাচল শুরু হয়েছে।
গাজীপুরের প্রাণকেন্দ্র চান্দনা চৌরাস্তায় চলছে বিআরটি প্রকল্পের সবচেয়ে বড় কাজ। ময়মনসিংহ, টাঙ্গাইল, উত্তরবঙ্গ, কিশোরগঞ্জ থেকে গাজীপুর শহরেও প্রবেশ করতে হয় এ পথ ধরে।
প্রকল্পের কাজ চলায় দীর্ঘদিন ধরে ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা গাড়িগুলোকে ভোগড়া বাইপাস হয়ে নাওজোর দিয়ে প্রবেশ করতে হত। ফলে দীর্ঘ যানজট এবং চরম ভোগান্তি পোহাতে হত যাত্রী ও পরিবহন চালকদের।
প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিআরটি প্রকল্পের ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের ভোগড়া থেকে চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায় নির্মিত ফ্লাইওভারের নিচের অংশের ময়মনসিংহমুখী একটি লেন খুলে দেওয়ায় ঢাকা থেকে ময়মনসিংহগামী সব যানবাহন এই লেন ব্যবহার করতে পারবে। এতে ভোগড়া ও চান্দনা চৌরাস্তার দীর্ঘ যানজট এড়িয়ে যাওয়া যাবে।
ফ্লাইওভার ব্যবহার করে ঢাকা থেকে জয়দেবপুরগামী যানবাহন চন্দনা চৌরাস্তার যানজট এড়িয়ে জয়দেবপুরের দিকে যেতে পারবে। তাছাড়া জয়দেবপুর থেকে ঢাকার দিকে চলাচলের ক্ষেত্রেও এই ফ্লাইওভারের লেন ব্যবহার করা যাবে বলে জানান তারা।
উপকমিশনার আলমগীর বলছেন, “ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে নির্মাণাধীন বিআরটি প্রকল্পের ভোগড়া থেকে চান্দনা চৌরাস্তা পর্যন্ত একটি ফ্লাইওভারের নির্মাণকাজ সমাপ্ত হয়েছে। এর মধ্যে ময়মনসিংহমুখী একটি লেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী মহোদয়ের মৌখিক নির্দেশে খুলে দেওয়া হয়েছে।
“এই ফ্লাইওভার নির্মাণকাজ চলার কারণে দীর্ঘদিন ধরে ভোগড়া থেকে চান্দনা চৌরাস্তা পর্যন্ত (ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের ময়মনসিংহমুখী লেন) যানবাহন চলাচলের জন্য বন্ধ ছিল। এ কারণে ঢাকা থেকে সব যানবাহনকে নাওজোর হয়ে কয়েক কিলোমিটার ঘুরে ময়মনসিংহ ও গাজীপুরের জয়দেবপুর রোডে চলাচল করতে হত।”
এই দুর্ভোগ লাঘবের জন্য ফ্লাইওভারের একটি লেন খুলে দেওয়া হলো বলে জানান তিনি।
ঢাকার সঙ্গে গাজীপুরের যোগাযোগে মানুষের ভোগান্তি দূর করতে শুরুতে এই প্রকল্পের কাজ শেষ করার কথা ছিল চার বছরের মধ্যে, যদিও তা গড়িয়েছে ১২ বছরে। প্রকল্পের সময় আর অর্থ বেড়ে যাওয়ার সঙ্গে মানুষের ভোগান্তিও বেড়েছে অনেক।
এ প্রকল্পে অব্যবস্থাপনার অভিযোগ রয়েছে শুরু থেকেই। প্রকল্পের কাজ চলাকালে যানজট, দুর্ঘটনা আর ধুলাবালির কারণে পরিবেশ দূষণ নিয়েও সমালোচনা হয়েছে।
২০১১ সালে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক প্রকল্পের প্রাথমিক সম্ভাব্যতা সমীক্ষা করে। ২০১২ সালের ১ ডিসেম্বর একনেক বিআরটি প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়। শুরুতে ব্যয় ধরা হয় ২ হাজার ৩৯ কোটি ৮৪ লাখ ৮৯ হাজার টাকা। কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে। এরপর কয়েক দফা সময় বাড়িয়ে ২০২৩ সালের ডিসেম্বর নির্ধারণ করা হয়েছিল।
বিআরটি প্রকল্পের সারসংক্ষেপে বলা হয়েছে, বিআরটি বাস্তবায়িত হলে ১০০টি আর্টিকুলেটেড বাসের মাধ্যমে প্রতি ঘণ্টায় ২৫ হাজার মানুষ যাতায়াত করবে। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে যানজট অনেকটাই কমে যাবে।
চীনের তিনটি এবং বাংলাদেশের একটি কোম্পানি এই প্রকল্পের ঠিকাদার হিসেবে কাজ করছে। এর মধ্যে উড়াল সড়ক ও নিচের সড়ক নির্মাণের কাজ পেয়েছে চায়না গ্যাঝুবা গ্রুপ করপোরেশন (সিজিজিসি), জিয়াংশু প্রভিনশিয়াল ট্রান্সপোর্টেশন ইঞ্জিনিয়ারিং গ্রুপ এবং ওয়েহেই ইন্টারন্যাশনাল ইকোনমিক অ্যান্ড টেকনিক্যাল কো–পারেটিভ। আর গাজীপুরে বিআরটির ডিপো নির্মাণের দায়িত্বে রয়েছে দেশীয় কোম্পানি সেল-ইউডিসি।