“ঢাকায় খেলতে গিয়ে কজ্বিতে আঘাত পেয়ে মাঠ থেকে ছিটকে যাই। কিন্তু ক্রিকেট আমার রক্তে। ২০২০ সালে ঢাকা থেকে ফিরে ক্রিকেটার তৈরির কাজে মন দেই।”
Published : 05 Feb 2024, 09:50 AM
কুড়িগ্রামে নদীর বুকে জেগে ওঠা চরে তিন একর জমি লিজ নিয়ে ব্যক্তিগত উদ্যোগে একটি ক্রিকেট একাডেমি প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। সেখানে ক্রিকেট টুর্নামেন্ট শুরুও হয়েছে।
সদর উপজেলার ভোগডাঙ্গা ইউনিয়নে ধরলা নদী তীরবর্তী পাঙ্গারচরে ‘প্রত্যয় ক্রিকেট একাডেমি’ গড়ে তুলেছেন জেলার নাজমুল হুদা লাকু নামের এক ব্যক্তি।
শুক্রবার ওই একাডেমির উদ্যোগে প্রথম টুর্নামেন্টের উদ্বোধন করেন জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক রেদওয়ানুল হক দুলাল। এতে চারটি ক্লাব অংশ নিয়েছে। উদ্বোধনী ম্যাচে ‘সৃজন স্মৃতি ক্রিকেট একাডেমির’ বিপক্ষে ৩৩ রানে জয় পায় আয়োজক দল ‘প্রত্যয় ক্রিকেট একাডেমি’।
কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার ভোগডাঙ্গা ইউনিয়নের পরম আলী গ্রামের শিল্পী নুরুল আমিনের চার সন্তানের মধ্যে সবার বড় ৩৪ বছর বয়সী লাকু। ছোট থেকেই ক্রিকেটার হওয়ার স্বপ্ন থাকলেও চার ভাই-বোনের সংসারের দায়িত্ব সামলে তা পূরণ করা ছিলো বেশ কষ্টের। তারপরও থেমে থাকেননি লাকু; স্বপ্ন পুরণের লক্ষ্যে বড় ক্লাবে খেলার জন্য ঢাকায় পলিটেকনিক ইনিস্টিটিউটে ভর্তি হন।
সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ডিপ্লোমা শেষ করে ঢাকার রামপুরায় পাওনিয়ার ক্রিকেট স্কুলে ২০১১ সালে কোচ হিসাবে যোগ দেন পড়ালেখার খরচ চালাতে। এরপর কাকরাইল বয়েজ ক্লাবে দ্বিতীয় বিভাগে ক্রিকেট খেলার সুযোগ আসে। ২০১৫ সালে প্রাক্টিস গেম খেলতে গিয়ে বাম হাতের জয়েন্ট খুলে গেলে এক বছরে খেলা বন্ধ থাকে।
চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়ে সুযোগ পান ঢাকার মোহাম্মদপুর স্পোটিং ক্লাবে প্রথম বিভাগে খেলার। সেখানে দুই বছর খেলার পর ইনজুরির ভোগান্তির কারণে ২০২০ সালে সবকিছু ছেড়ে কুড়িগ্রাম ফিরে আসেন। কিন্তু নিজে যা করতে পারেননি, সে স্বপ্ন খেলোয়াড়দের দিয়ে করানোর স্বপ্ন দেখেন। সুযোগ-সুবিধা বঞ্চিত কুড়িগ্রামে প্রথমবারের মতো ক্রিকেট একাডেমি গড়ে তারই বাস্তবায়ন করেন।
সেই যাত্রার গল্পে লাকু বলেন, “ঢাকায় খেলতে গিয়ে কজ্বিতে আঘাত পেয়ে মাঠ থেকে ছিটকে যাই। কিন্তু ক্রিকেট আমার রক্তে। ২০২০ সালে ঢাকা থেকে ফিরে ক্রিকেটার তৈরির কাজে মন দেই। কিন্তু প্রধান সমস্যা খেলার মাঠ নেই। স্টেডিয়ামে সব সময় প্রাক্টিসের সুযোগও পাওয়া যায় না। তাই স্বপ্ন দেখেন নতুন একটি খেলার মাঠ তৈরির।
“সেই লক্ষ্যে অনেক খোঁজাখুঁজির পর বাবা ও ভাইয়ের সহযোগিতায় সদর উপজেলার পাঙ্গারচরে ধরলা নদীর তীর ঘেঁষে উঁচু এলাকা খুঁজে পাই। পরে গ্রামবাসীকে আমার স্বপ্নের কথা জানালে, তারাই আগ্রহ হয়ে আমাকে সাড়ে ৩ একর জমি ৫ বছরের জন্য লিজে দেন। এভাবে প্রত্যয় ক্রিকেট একাডেমির কার্যক্রম শুরু করি।”
এই একাডেমি গড়ে তুলতে পরিবারসহ নিজের জমানো ১৭ লাখ টাকা ব্যয় করেছেন জানিয়ে লাকু বলেন, এখন তার স্বপ্ন একটি আন্তর্জাতিক মানের ক্রিকেট একাডেমি গড়ে তোলা। তার জন্য সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও বৃত্তবানদের সহায়তা দরকার।
সফি খান নামের স্থানীয় এক সাংবাদিক বলেন, শারীরিক ও মানসিক বিকাশে শিশুদের খেলাধুলার প্রয়োজনীয়তা বাবা-মাকে বুঝতে হবে। এই মাঠে আসার মাঝখানে ধরলা নদীর ছোট শাখাটি যদি বন্ধ করা যায়, তাহলে যাতায়াতে কোনো বিড়ম্বনা থাকবে না।
জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক রেদওয়ানুল হক দুলাল বলেন, ব্যক্তিগতভাবে ক্রিকেট একাডেমি গড়ে তোলা অনেক কঠিন। সেই কাজ শুরু করেছে লাকু।
“আমাদের উচিত লাকুর পাশে দাঁড়ানো। স্থানীয় লোকজন ছাড়াও সব পর্যায়ের লোকজনকে এই কাজে এগিয়ে আসা দরকার।”
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি সাবেক সিভিল সার্জন আমিনুল ইসলাম বলেন, এই মাঠে আসার জন্য একটি সুন্দর রাস্তা দরকার। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে এগিয়ে আসতে হবে।