এ নিয়ে দুই ধরনের বক্তব্য পাওয়া গেছে।
Published : 11 Jan 2023, 09:30 PM
চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রারের ওপর হামলার প্রতিবাদে কর্মবিরতির ডাক দিয়েছে বাংলাদেশ রেজিস্ট্রেশন সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন।
মঙ্গলবার বিকালে অফিস চলাকালী সাব-রেজিস্ট্রার ইউসুফ আলীর ওপর হামলার ঘটনা ঘটে। তাকে প্রথমে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়।
বুধবার থেকে কর্মবিরতি শুরু হয় দেশের বিভিন্ন সাব-রেজিস্ট্রি কার্যালয়ে। এতে ভোগান্তিতে পড়েন জমি ক্রয়-বিক্রয় করতে আসা মানুষেরা।
হামলার বিষয়ে জানতে চাইলে ইউসুফ আলীর ব্যক্তিগত মোবাইল নম্বরে ফোন দিয়ে তা বন্ধ পাওয়া যায়।
তবে হামলার বিষয়ে শিবগঞ্জ উপজেলা প্রশাসন ও বাংলাদেশ রেজিস্ট্রেশন সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে দুই ধরনের বক্তব্য পাওয়া গেছে।
এ ব্যাপারে শিবগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবুল হায়াত সাংবাদিকদের বলেন, “গতকাল (মঙ্গলবার) বিকাল ৪টার দিকে ভুক্তভোগী কিছু মানুষ তর্কাতর্কির এক পর্যায়ে ইউসুফ আলীকে মারধর শুরু করেন। পরে আমি বিষয়টি পুলিশকে জানালে তারা গিয়ে তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়।“
ইউএনও আরও বলেন, “তার বিরুদ্ধে অতিরিক্ত অর্থ আদায়, সেবাগ্রহীতাদের হয়রানি করার অভিযোগ রয়েছে। গত নভেম্বর মাসে উপজেলা সমন্বয় কমিটির সভায় তাকে ডেকে সতর্কও করা হয়েছিলো। কিন্তু এরপরও অতিরিক্ত অর্থ আদায়, হয়রানী অব্যহত ছিলো বলে ভুক্তভোগীরা নানা সময় অভিযোগ করেছেন।”
“এ সব অভিযোগের ক্ষোভ থেকেই তাকে মারধর করা হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে”, যোগ করেন ইউএনও।
তবে বাংলাদেশ রেজিস্ট্রেশন সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. অহিদুল ইসলাম বুধবার সন্ধ্যায় বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “তিনি (ইউএনও) মিথ্যা বলছেন। ঘটনাস্থলের অডিও পেয়েছি সেখানে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে উচ্চস্বরে চিৎকার করতে শোনা যাচ্ছে।”
সাব-রেজিস্ট্রারের অতিরিক্ত অর্থ আদায় ও গ্রাহকদের হয়রানির ব্যাপারে জানতে চাইলে অহিদুল ইসলাম বলেন, “ইউসুফ আলীর কোনো দোষ-ত্রুটি থাকলে সেটা ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বলতে পারতেন।”
এ ব্যাপারে শিবগঞ্জ থানার ওসি জোবায়ের আহমেদ বলেন, মারধরের বিষয়টি তাদের জানালে দ্রুত তারা সাব- রেজিস্ট্রারের কার্যালয়ে গিয়ে তাকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যান।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা রেজিস্ট্রার আফসানা খাতুন বলেন, “কী কারণে এমন ঘটনা ঘটেছে তা এখনই বলা সম্ভব না।”
কর্মবিরতির ঘোষণা
এদিকে বাংলাদেশ রেজিস্ট্রেশন সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন বুধবার এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে কর্মবিরতির ঘোষণা দিয়েছে।
সংগঠনটির সভাপতি অহিদুল ইসলাম ও মহাসচিব এস এম শফিউল বারী স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে বলা হয়, “সরকারি দায়িত্ব পালনকালে শিবগঞ্জ উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আবুল হায়াত শরীরিকভাবে লাঞ্ছিত ও মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেওয়া এবং তার উসকানি ও নির্দেশে কতিপয় দুষ্কৃতকারী পরিকল্পিতভাবে হকিস্টিক ও দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে হামলা করে মারাত্বক আহত ও জখম করেছে।”
ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, এর সুষ্ঠু বিচার না হওয়া পর্যন্ত নিবন্ধন অধিদপ্তরের আওতাধীন সারাদেশে জেলা রেজিস্ট্রার ও সাব-রেজিস্ট্রার অফিসে অনির্দিষ্টকালের জন্য কর্মবিরতি ঘোষণা করা হলো।”
চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি: শিবগঞ্জ উপজেলার সাব-রেজিস্ট্রারের ওপর হামলাকারীদের গ্রেপ্তার ও শাস্তির দাবিতে চুয়াডাঙ্গা সদর, আলমডাঙ্গা, দামুড়হুদা ও জীবননগর উপজেলা রেজিস্ট্রি কার্যালয়ে কর্মবিরতি পালন করা হয়েছে।
চুয়াডাঙ্গা জেলা রেজিস্ট্রার মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, জেলার চার অফিসেই দুপুর ১২টা থেকে কর্মবিরতি চলছে।
চুয়াডাঙ্গা সদর সাব-রেজিস্ট্রার নূরে তোজাম্মেল হোসেন বলেন, “আমাদের অ্যাসোসিয়েশন কর্মবিরতির ঘোষণা দিয়েছে। সকাল থেকে আমরা কাজ করছিলাম। বেলা ১২টায় খবর পাওয়ার পর কর্মবিরতি শুরু করেছি। এই কর্মবিরতি কতোদিন চলবে বলতে পারবো না। কেন্দ্রীয়ভাবে সিদ্ধান্ত হবে।”
বুধবার দুপুরে চুয়াডাঙ্গা সদর সাব-রেজিস্ট্রি কার্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, প্রধান গেটে ব্যানার টাঙানো হয়েছে। তাতে লেখা আছে, “চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার সাব-রেজিস্ট্রার ইউসুফ আলীর দপ্তরে এখতিয়ারবর্হিভূত হস্তক্ষেপণকারী ও বর্বরোচিত হামলাকারী সন্ত্রাসীদের অনতিবিলম্বে গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই, রেজিস্ট্রেশন পরিবার, চুয়াডাঙ্গা সদর, চুয়াডাঙ্গা।”
কর্মসূচির কারণে জমি কেনাবেচা এবং অন্যান্য দাপ্তরিক কাজে জেলার সাব-রেজিস্ট্রি কার্যালয়ে এসে ভোগান্তিতে পড়েছেন অনেকে।
জমি বিক্রি করতে আসা চুয়াডাঙ্গা সদরের সরোজগঞ্জ শাহপুর গ্রামের ওসমান আলী বলেন, “আমি জমি বিক্রি করতে এসে শুনছি ধর্মঘট চলছে। আমার কোনো কাজ হলো না। কবে হবে অফিস থেকে তা-ও বলছে না। আমার জরুরি টাকার দরকার ছিল।”
সদর সাব-রেজিস্ট্রি কার্যালয়ে জমি সংক্রান্ত দাপ্তরিক কাজ করতে আসা ডিঙ্গেদহ সুবদিয়া গ্রামের সোলেমান হোসেন বলেন, “আমি এসেছিলাম আমার একটি পুরোনো দলিলের খোঁজ নিতে। শুনলাম কোনো কাজই হবে না। ধর্মঘটে সব বন্ধ। আমার কোনো কাজ হলো না।”