“রাস্তায় গাড়ি ভাঙচুর করেছে। এছাড়া আরও অনেক কারখানায় আগুনের খবর আসছে।”
Published : 04 Aug 2024, 08:18 PM
সাভারে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে সংষর্ষের মধ্যে গুলিবিদ্ধ হয়ে অজ্ঞাত পরিচয় এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে।
রোববার দুপুরে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের সাভারের আশুলিয়ার বাইপাইল এাকায় ওই যুবক গুলিবিদ্ধ হয় বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন। মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ধামরাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার আহমেদুল হক তিতাস।
এর আগে রোববার বেলা ১১টার দিকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা লাঠিসোঁটা নিয়ে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের ডেইরি গেট অবরোধ করেন। এ সময় তাদের সঙ্গে বিভিন্ন স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীরা যোগ দেয়। এতে মিছিল আর স্লোগানে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে অচলাবস্থা দেখা যায়। সেনাবাহিনীর দুটি গাড়ির কাঁচ ভাঙচুর করে আন্দোলনকারীরা।
বেলা সাড়ে ১১টার দিকে সাভার বাজার বাসস্ট্যান্ড এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল বের করেন আন্দোলনকারীরা। এ সময় তারা রাজ্জাক প্লাজার সামনে মাইকিং করে সাধারণ জনগণকে রাস্তায় নামার অনুরোধ করেন। পরে আন্দোলনকারীরা সাভার বাজার রোডের প্রবেশ পথ, রাজ্জাক প্লাজার সামনে, চৌরুঙ্গী মার্কেটের সামনে ও রেডিও কলোনিসহ গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে মহাসড়কে বসে অবরোধ করে রাখে।
দুপুরে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে যোহরের নামাজ আদায় করেন শিক্ষার্থীরা। দুপুরের পরে আন্দোলনকারীরা সাভার থানা রোডে হামলা চালিয়ে সাভার প্রেসক্লাবসহ বিভিন্ন দোনাক-পাটে ব্যাপক ভাঙচুর চালায়। পরে তারা সাভার মডেল থানার দিকে লাঠিসোঁটা নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে পুলিশ গুলি ও টিয়ারশেল ছুড়ে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়।
এরই মধ্যে আশুলিয়ার বাইপাইলে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে অজ্ঞাত পরিচয় যুবকের মৃত্যু হয়। এছাড়া বিপ্লব নামে ফুটপাতের এক পানি বিক্রেতা গুলিবিদ্ধ হয়।
আহত বিপ্লব বলেন, “আমি রাস্তার পাশে পানি বিক্রি করছিলাম। হঠাৎ করে মারামারি লাগছে। তখন একটা গুলি এসে আমার বুকে লাগে।”
ধামরাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার আহমেদুল হক তিতাস বলেন, “দুপুর দেড়টার দিকে মৃত অবস্থায় এক যুবকের মরদেহ রেখে যায় ৪-৫ জন তরুণ। মরদেহটি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রাখা হয়েছে।
“তার পিঠে একটি গুলির চিহ্ন রয়েছে। এছাড়া হাতে গুলিবিদ্ধ আরও একজনকে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।”
সাভার মডেল থানার এসআই হারুন অর রশিদ বলেন, “হামলাকারীদের দেখে মনে হয়নি তারা ছাত্র। তারা টোকাই, হকার এমন মনে হয়েছে। তবে তাৎক্ষণিক অ্যাকশনে যাওয়ায় হামলাকারীরা সামনের দিকে এগুতে পারেনি।”
এর আগে আন্দোলনকারীরা মিছিল নিয়ে বাইপাইল এলাকায় এসে ট্রাফিক পুলিশ বক্স ভাঙচুর করে। এ সময় আশপাশে থাকা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা সেখানে গিয়ে আন্দোলনকারীদের ধাওয়া দেয়। সেখানে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে।
এ সময় সেখানে ককটেল বিস্ফোরণ ও গুলি ছোড়ার ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনায় অন্তত আটজন আহত হন বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েন।
এছাড়াও হামলাকারীরা আশুলিয়া প্রেসক্লাবে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করে ক্লাবের সমস্ত মালামাল বাইরে বের করে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে বলে শফি মাহমুদ নামের স্থানীয় এক সংবাদকর্মী জানিয়েছেন।
আশুলিয়া থানায় হামলা করার চেষ্টা করলে সেখানে হামলাকারীদের সঙ্গে পুলিশের দফায় দফায় গুলি বর্ষনের ঘটনার কথা জানিয়েছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আশুলিয়া থানার এক পুলিশ কর্মকর্তা। সন্ধ্যায় সাভার উপজেলা ও উলাইল এলাকায় হামলার চেষ্টা হয়েছে বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েন। এছাড়া আশুলিয়ারর জিরানী সিনহা টেক্সটাইল ও বেক্সিমকো সিনথেটিক কারখানায় আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়।
ঢাকা ফায়ার সার্ভিস কন্ট্রোল রুমের ডিউটি অফিসার রকিবুল হাসান সন্ধ্যায় জানান, আগুনের খবর পেয়ে তাদের ফায়ার সার্ভিস টিম পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু যেতে পারেনি।
তিনি বলেন, “রাস্তায় গাড়ি ভাঙচুর করেছে। এছাড়া আরও অনেক কারখানায় আগুনের খবর আসছে।”
এদিকে একদফা দাবিতে অসহযোগ আন্দোলনের ডাকে সহিংসতার আশঙ্কায় সাভার ও আশুলিয়ার বিভিন্ন পোশাক কারখানা ছুটি ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ। এছাড়া আতঙ্কে বিভিন্ন সরকারি অফিসের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের উপস্থিতি অনেক কম দেখা গেছে।