খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র অর্ণব হত্যা: বন্ধুকে গ্রেপ্তার দেখাল পুলিশ

নিহত অর্ণব

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী অর্ণব কুমার সরকার হত্যার ঘটনায় গোলাম রাব্বানী নামে তার এক বন্ধুকে গ্রেপ্তার দেখিয়েছে পুলিশ।

সোনাডাঙ্গা মডেল থানার ওসি মো. শফিকুল ইসলাম জানান, রোববার দুপুরের দিকে তাকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে খুলনা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-১ এ তোলা হয়। এ সময় সাত দিনের রিমান্ড আবেদন করেন তদন্ত কর্মকর্তা সোনাডাঙ্গা থানার এসআই আশরাফুল আলম।

আদালতের বিচারক রাকিবুল ইসলাম রাব্বানীকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।

গ্রেপ্তার গোলাম রাব্বানী খুলনা নগরীর গোবরচাকা এলাকার রবিউল ইসলামের ছেলে।

এর আগে শুক্রবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে নগরীর তেঁতুলতলা মোড় এলাকায় অর্ণবকে গুলি করে হত্যা করা হয়। হত্যাকাণ্ডের রাতেই রব্বানীকে তার বাড়ি থেকে আটক করা হয়েছিল।

পুলিশ বলছে, গোলাম রব্বানী অর্ণবের ঘনিষ্ঠ বন্ধু। তারা একসঙ্গে পড়াশোনা করেছেন। ঘটনার পর তথ্যপ্রযুক্তির সাহায্য নিয়ে দেখা গেছে, রব্বানীর ফোন পেয়েই তেঁতুলতলার ওই স্থানে গিয়েছিলেন অর্ণব। এর কিছুক্ষণের মধ্যে সন্ত্রাসীরা সেখানে গিয়ে তাকে গুলি করে হত্যা করে।

ওই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে রব্বানীর যোগসূত্র রয়েছে বলে ধারণা করছে পুলিশ। এ কারণেই তার রিমান্ডের আবেদন করা হয়েছে।

ওসি শফিকুল বলেন, “খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র অর্ণব হত্যার ঘটনায় শনিবার রাত ১০টার দিকে খুলনার সোনাডাঙ্গা মডেল থানায় অজ্ঞাত পরিচয় ২৫ থেকে ৩০ জনকে আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করেন অর্ণবের বাবা নীতিশ কুমার সরকার।

“এ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সন্দেহজনক হিসেবে যে তিনজনকে আটক করা হয়েছিল রোববার সকালে তাদের দুজনকে ছেড়ে দেওয়া হয়। আর গোলাম রব্বানী নামে অর্ণবের এক বন্ধুকে ওই মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে তোলা হয়।”

এ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সোনাডাঙ্গা থানার এসআই আশরাফুল আলম বলেন, “অর্ণব ও গোলাম রব্বানী আগে নর্থ ওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটিতে একসঙ্গে লেখাপড়া করতেন। তারা বন্ধু। রব্বানীর সঙ্গেই অর্ণবের সবশেষ ফোনে কথা হয়েছিল। সেই অর্ণবকে তেঁতুলতলা মোড়ে ডেকে নিয়ে আসেন। সেখানে অর্ণব খুন হন।

“রব্বানীকে আরও জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য আদালতের কাছে সাত দিনের রিমান্ডের আবেদন জানানো হয়েছে। তবে এখনও শুনানি হয়নি। বিচারক রব্বানীকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন। সোমবার তার রিমান্ডের শুনানি হতে পারে।”

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ঘটনার রাতে তেঁতুলতলা মোড়ে একটি চায়ের দোকানের সামনে মোটরসাইকেলে হেলান দিয়ে চা পান করছিলেন অর্ণব। এ সময় কয়েকটি মোটরসাইকেলে কয়েকজন এসে তাকে গুলি করে পালিয়ে যায়। এর মধ্যে একটি গুলি অর্ণবের মাথা ভেদ করে বেরিয়ে যায়।

স্থানীয় লোকজন তাকে উদ্ধার করে বেসরকারি সিটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা অর্ণবকে মৃত ঘোষণা করেন।

এদিকে অর্ণব হত্যার সঙ্গে তার বন্ধু গোলাম রব্বানী জড়িত থাকার বেশ কিছু প্রমাণ পুলিশের হাতে এসেছে এবং এসব বিষয়ে বিস্তারিত জানার জন্যই তার রিমান্ডের আবেদন করা হয়েছে বলে খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের উপকমিশনার (দক্ষিণ) মো. মনিরুজ্জামান মিঠু জানিয়েছেন।

মিঠু বলছেন, “অর্ণব হত্যার ব্যাপারে প্রেম-সংক্রান্ত কোনো বিরোধ ছিল কি-না, তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ। এ ছাড়া কোনো বন্ধু কিংবা কোনো সন্ত্রাসী গ্রুপের সঙ্গে তার দ্বন্দ্ব ছিল কিনা, তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

“পাশাপাশি আশপাশের এলাকাগুলোর ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করে সেগুলো পর্যালোচনা করা হচ্ছে।”

অর্ণবদের গ্রামের বাড়ি বাগেরহাটের রামপাল উপজেলার রাজনগর গ্রামে। খুলনার বেসরকারি নর্থ ওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটি থেকে বিবিএ শেষ করে ২৬ বছর বয়সী অর্ণব মাস্টার্সে ভর্তি হয়েছিলেন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে।

পেশায় ঠিকাদার নীতীশ চন্দ্র সরকারের দুই ছেলের মধ্যে বড় অর্ণব। ছোট ভাই অনিক এবার বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দিচ্ছেন। তারা ১৫ বছর ধরে খুলনা নগরের বানরগাতি ইসলাম কমিশনারের মোড় এলাকার করতোয়া লেনে বাড়ি করে বসবাস করছেন।

এদিকে রোববার বেলা ১২টার দিকে নগরের তেঁতুলতলা এলাকায় নর্থ ওয়েস্টার্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা অর্ণব হত্যার প্রতিবাদে ও আসামিদের গ্রেপ্তারের দাবিতে মানববন্ধন করেন। নগরের রয়্যাল মোড়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন করা হয়।

অর্ণবদের কয়েকজন প্রতিবেশী বলেন, অর্ণব খুবই ‘ভদ্র’ ছিল। এলাকায় কারও সঙ্গে তাকে কোনো খারাপ আচরণ করতে দেখা যায়নি। পড়াশোনার পাশাপাশি বাবার ব্যবসাও দেখতো। হঠাৎ তার খুন হওয়ার খবর শুনে এলাকার সবাই অবাক হয়েছেন।

তাদের ভাষ্য, নগরের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হচ্ছে না কিছুতেই। বিশেষ করে সন্ধ্যা হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সন্ত্রাসী কার্যকলাপে আতঙ্কের নগরীতে পরিণত হচ্ছে খুলনা। ঘটছে কোপাকুপি ও গোলাগুলির ঘটনা। এতে চরমভাবে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন নগরবাসী।

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র অর্ণব হত্যা: অজ্ঞাতদের আসামি করে মামলা

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র হত্যা: তিনজনকে জিজ্ঞাসাবাদ, কারণ খুঁজছে