টাঙ্গাইল জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জোয়াহেরুল ইসলামের শহরের ছোট কালীবাড়ি রোডের ছয়তলা ভবনটি দখল হয়েছে।
Published : 08 Mar 2025, 07:35 PM
টাঙ্গাইল শহরে ছাত্রপ্রতিনিধি পরিচয়ে আওয়ামী লীগের সাবেক এক সংসদ সদস্যের বহুতল ভবন দখলে নিয়ে সেখানে ‘মানসিক ভারসাম্যহীন’ ব্যক্তিদের রাখা হয়েছে।
পুলিশ ও স্থানীয়রা বলছেন, শনিবার সকালের দিকে সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট জোয়াহেরুল ইসলামের (ভিপি জোয়াহের) শহরের ছোট কালীবাড়ি রোডের ছয়তলা ভবনটি দখল করা হয়েছে। ছাত্রপ্রতিনিধি পরিচয়ে মারইয়াম মুকাদ্দাস মিষ্টি নামে এক তরুণী বাসার তালা ভেঙে সেটি দখলে নেতৃত্ব দেন।
এ ব্যাপারে টাঙ্গাইল সদর থানার ওসি তানভীর আহম্মেদ জানান, বিষয়টি তিনি লোকমুখে শুনেছেন। যেহেতু ছাত্র-জনতার আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী শিক্ষার্থীরা নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করে ফেলেছেন সেখানে ছাত্রপ্রতিনিধি বা সমন্বয়ক বলতে আর কিছু থাকে বলে তার মনে হয় না।
ভবন দখল করা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ছাত্রপ্রতিনিধি মারইয়াম মুকাদ্দাস মিষ্টি সাংবাদিকদের বলেন, “ভবন দখল করার বিষয়ে ফেইসবুকে আগেই ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল। আওয়ামী লীগের সব নেতাদের বাড়িতে পাগলদের জন্য আশ্রম গড়ে তোলা হবে। তারই অংশ হিসেবে সকালে তালা ভেঙে জেলা জোয়াহেরুল ইসলামের ছয়তলা ভবনে প্রবেশ করা হয়েছে। ওই বাসায় আল মুকাদ্দাস ফাউন্ডেশনের ২০ জন পাগলকে রাখা হয়েছে।”
তিনি বলেন, “এটাকে জবরদখল বলা যাবে না, কারণ কোনো ব্যক্তিবিশেষের ব্যবহারের জন্য ভবনটি নেওয়া হয়নি। সমাজের অবহেলিত পাগলদের জন্য আশ্রম করা হচ্ছে।”
এ ঘটনায় অন্য সমন্বয়করাও সমর্থন দিয়েছেন দাবি করেন মিষ্টি বলেন, “জোয়াহেরুল ইসলামের পক্ষ থেকে একজন লোক এসে জানিয়েছেন, বাসা না ভেঙে সেখানে যেন আশ্রম করা হয়। তার প্রস্তাব অনুযায়ী, পাগলদের আশ্রমই তৈরি করা হয়েছে।”
তবে সেই ব্যক্তির নাম-পরিচয় বলতে পারেননি মারইয়াম মুকাদ্দাস মিষ্টি।
এদিকে আবাসিক এলাকায় ‘মানসিক ভারসাম্যহীনদের’ আশ্রম তৈরি করায় স্থানীয় কেউ কেউ অস্বস্তি প্রকাশ করেছেন। তবে বিষয়টির সঙ্গে ছাত্ররা জড়িত থাকায় তারা প্রকাশ্যে কিছু বলতে চাচ্ছেন না।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে মারইয়াম মুকাদ্দাস মিষ্টি বলেন, “আবাসিক এলাকার মানুষের জীবনযাত্রায় যদি পাগলদের কোনো প্রভাব পড়ে তাহলে যারা বেশি পাগল তাদেরকে অন্যকোনো আওয়ামী লীগের নেতার বাসায় স্থানান্তর করা হবে। এখানে কম পাগলদের রাখা হবে।”
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের টাঙ্গাইলের সমন্বয়ক আল আমিন বলেন, মারইয়াম মুকাদ্দাস মিষ্টি একজন ছাত্রপ্রতিনিধি পরিচয়ে আওয়ামী লীগ নেতার বাসায় ‘পাগলের আশ্রম’ করেছেন বলে তিনি শুনেছেন।
“আমরা এটাকে কোনোভাবেই সমর্থন করি না। তাছাড়া মিষ্টি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ভূমিকা রেখেছিলেন, তাই বলে তিনি বিশেষ সুবিধা নেবেন এটা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। এটা ফ্যাসিস্টবিরোধী আন্দোলনের মূল স্পিরিটের সঙ্গে যায় না।”
আল আমিন বলেন, “বর্তমানে কেউ সমন্বয়ক পরিচয় দিতে পারবে না। কারো বাড়ি দখল করার কোনো কার্যক্রম তারা হাতে নেননি। যে কেউ এ রকম কাজ করলে অবশ্যই তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।”
৫ অগাস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে সাবেক এমপি ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জোয়াহেরুল ইসলাম (ভিপি জোয়াহের) সপরিবারে আত্মগোপনে রয়েছেন।