বিজয় উল্লাস করেছেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার হাজার হাজার সাধারণ মানুষ।
Published : 05 Aug 2024, 08:55 PM
সাড়ে ১৫ বছর বাংলাদেশের রাষ্ট্রক্ষমতায় অধিষ্ঠিত আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা তুমুল গণআন্দোলনের পদত্যাগ করে দেশ ছেড়েছেন।
সরকারের পতনের পর সারাদেশে ছাত্র-জনতার উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে বিজয় মিছিল করছেন।
বিভিন্ন জেলা থেকে পাঠানো খবর-
ময়মনসিংহ নগরজুড়ে উল্লাস
শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছাড়ার খবর জানার পর পরই ময়মনসিংহ নগরে আনন্দ উল্লাস শুরু হয়ে যায়।
সোমবার বেলা সাড়ে ৩টার কিছু পর ছাত্র-জনতা নগরের টাউন হল মোড়ে খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে জড়ো হন। সেখান থেকে আনন্দ মিছিল নিয়ে নগরেজুড়ে উল্লাস করেন তারা। এতে নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ অংশ নেন। জাতীয় পতাকা জড়িয়ে ও বাদ্য বাজিয়ে আনন্দ মিছিল করা হয়। বিভিন্ন স্থানে মিষ্টিও বিতরণ করা হয়েছে।
নারায়ণগঞ্জে জনতার বিজয় মিছিল
শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশত্যাগের খবরে শহরের সড়কে, অলিগলিতে নেমে আসেন হাজারো মানুষ৷ সময় বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মানুষের সংখ্যা বাড়তে থাকে৷ লাখো মানুষ বিজয় উল্লাসে ফেটে পড়ে৷
কারও হাতে জাতীয় পতাকা, কারও কপালে বাঁধা, কেউ উড়াচ্ছেন আবির, লাগিয়ে দিচ্ছেন একে-অপরকে৷ কেউ কেউ দীর্ঘদিনের ক্ষোভ ঝেড়ে সদ্য সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও তার দলের বিরুদ্ধে নানা স্লোগান দিচ্ছেন৷ নারী-পুরুষ নির্বিশেষে এই বিজয় উল্লাসে অংশ নেন৷
নওগাঁয় বিজয় উল্লাস
শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশত্যাগের খবরে নওগাঁয় রাস্তায় নেমে বিজয় উল্লাস করেছেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার হাজার হাজার সাধারণ মানুষ। শহরের অলিতে-গলিতে ছোট ছোট মিছিল করে তারা উল্লাস প্রকাশ করেন।
ফেনীতে ছাত্রজনতার আনন্দ উল্লাস
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতা ছেড়ে দেশত্যাগের খবরের পর ফেনীতে বিজয় উল্লাস করেছে ছাত্র-জনতা, সাধারণ মানুষ ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা।
প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয়রা জানান, সোমবার দুপুর ৩টার পর বিজয় উল্লাসে ফেটে পড়েন ফেনীর সর্বস্তরের মানুষ। তারা মিছিল নিয়ে শহরের জিরো পয়েন্টে এসে আনন্দ উল্লাস করেন। পটকা ফুটিয়ে, রং ছিটিয়ে, মিষ্টিমুখ করে বিজয় উদযাপন করেন। এ সময় কারো হাতে ছিল জাতীয় পতাকা, কারো মাথায় জাতীয় পতাকার পট্টি ছিল। অনেকেই হাতে ফুল নিয়ে একে অপরের সঙ্গে কোলাকুলি করেন।
সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজনের ফেনী জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ শাহাদাত হোসেন বলেন, “বিজয় উল্লাসের পাশাপাশি রাষ্ট্রীয় সম্পদ রক্ষা করা আমাদের সবার দায়িত্ব। সেটি সবার মাথায় রেখে আনন্দ উল্লাস করতে হবে।”
কুমিল্লায় বিজয়োল্লাসে মাতে ছাত্র-জনতা
প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর দেশত্যাগ এবং দেশবাসীর উদ্দেশে সেনাপ্রধানের দেওয়া বক্তব্য শুনেই কুমিল্লার ছাত্র-জনতা রাস্তায় নেমে আসেন। নগরীর প্রতিটি এলাকায় মানুষ রাস্তায় নেমে বিজয়োল্লাসে মেতে ওঠেন।
নগরীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মিছিল নিয়ে কান্দিরপাড়ে এসে জড়ো হন কয়েক হাজার মানুষ। এ সময় তারা স্লোগান দিতে থাকেন ‘পালাইল রে পালাইল, হাসিনা পালাইল, ছি-ছি হাসিনা, লজ্জায় বাঁচি না।’ এই মিছিলকে ‘বিজয় মিছিল’ নাম দিয়েছে জনতা।
কুড়িগ্রামে মানুষের আনন্দ মিছিল-শোভা যাত্রা
শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পরপরই সারাদেশের ন্যায় কুড়িগ্রামেও আনন্দ মিছিল ও শোভাযাত্রা করেছেন কোটা আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী, অভিভাবকসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল।
সোমবার বিকেল সাড়ে ৫টার পর শহরের কলেজ মোড় এলাকা থেকে একটি বিশাল আনন্দ মিছিল বের হয়ে পৌরবাজার ঘুরে শাপলা চত্বর হয়ে শহর প্রদক্ষিণ করে এবং শাপলা চত্বরে জমায়েত হয়। এছাড়াও খণ্ড খণ্ড মিছিল বের হয়ে শহর প্রদক্ষিণ করতে দেখা যায় আনন্দ উল্লাস করা সাধারণ শ্রেণি পেশার মানুষকে।
আনন্দ উল্লাসের পাশাপাশি জাতীয় সঙ্গীত ও দেশাত্মবোধক গান পরিবেশন করা হয়।
অন্যদিকে, সেনাবাহিনী ও বিজিবিসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা জেলার গুরুত্বপূর্ণ স্থান এবং মোড়ে মোড়ে টহল জোরদার করেছেন।
এ সময় আনন্দ উৎসবে মেতে ওঠা শিক্ষার্থী এবং অন্যরা তাদের ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান।
চাঁদপুরে ছাত্র-জনতার বিজয় উল্লাস
শেখ হাসিনার পদত্যাগের খবর পাওয়ার পর থেকে চাঁদপুরে জাতীয় পতাকা হাতে নিয়ে বিজয় উল্লাসে সড়কে নেমে আসে ছাত্র জনতা। সব বয়সি লোকজন এ আনন্দে শামিল হন।
সোমবার বিকাল ৩টার পর থেকেই সড়কে নেমে আসে ছাত্র-জনতা।
তারা শহরের বাবুরহাট থেকে শুরু করে, ওয়ারলেছ, ষোলঘল, বাসস্ট্যান্ড, ইলিশ চত্বর, স্টেডিয়াম রোড, মিশন রোড, শহীদ মুক্তিযোদ্ধা সড়ক, কালিবাড়ী, নতুন বাজার এলাকায় হাজার হাজার ছাত্রজনতা বিজয় মিছিল নিয়ে উল্লাস করেন। এ সময় অনেকেই মিষ্টি বিতরণ করতে দেখা যায়।
বিকাল ৪টার পরে শহরে প্রবেশ করে সেনাবাহিনী। তারা ছাত্র-জনতার আনন্দ মিছিলে শামিল হয়। পুরো শহরে সেনাবাহিনীর সদস্যরা টহল দিয়ে চলে যান।
বরিশালে আনন্দ মিছিল ও মিষ্টি বিতরণ
বিকাল তিনটা থেকে রাত পৌনে ১০টা পর্যন্ত চলছে বরিশাল নগরীতে আনন্দ মিছিল।
নগরীর বিভিন্ন এলাকা থেকে মিছিল নিয়ে হাজারো মানুষ সদর রোড, শহীদ মিনার ও বেলর্স পার্কে (বঙ্গবন্ধু উদ্যান) জড়ো হয়ে নানা শ্লোগান দেন।
এ সময় পালাইছে রে পালাইছে, শেখ হাসিনা পালাইছে শ্লোগানে শ্লোগানে মুখরিত হয়ে উঠে নগরী। এতে শিশু-নারীসহ বিভিন্ন বয়সিরা অংশগ্রহন করেন।
নগরীর বাসিন্দা আরিফুল হক বলেন, দেশ স্বাধীন হওয়ার পর কিভাবে আনন্দ করেছে, সেটা তো দেখিনি। এবার দেখলাম। দ্বিতীয়বারের মতো দেশ স্বাধীন হয়েছে। দুই সন্তানকে নিয়ে আনন্দ উপভোগ করেছেন তিনি।
তার মত আরো অনেকে স্ত্রী-সন্তান, মা, ভাই, বোনকে নিয়ে উৎসব করেছেন।
দুপুরের পর থেকে নগরীর প্রতিটা অলি-গলিতে মানুষ আনন্দ প্রকাশের পাশাপাশি মিষ্টি বিতরণ করেন।
টাঙ্গাইলে লাখো জনতার উল্লাস
শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও বোন শেখ রেহানাসহ দেশ ত্যাগের খবরে উচ্ছ্বসিত জনতার ঢল নেমেছে টাঙ্গাইলের সড়কে।
সোমবার বিকালে বিভিন্ন গণমাধ্যমে পদত্যাগের খবর পেয়ে রাস্তায় নামে জনগণ।
টাঙ্গাইলের বিভিন্ন স্থান থেকে ছোট বড় মিছিল এসে জমতে থাকে শহরে, মুহূর্তের মধ্যেই পুরো শহরজুড়ে লাখো মানুষের ঢল দেখা যায়।
পুরাতন বাস স্ট্যান্ড থেকে মিছিল নিয়ে ডিস্ট্রিক গেইট হয়ে বটতলা হয়ে শহরের পৌর উদ্যানে মিলিত হয়।
কারো হাতে লাল-সবুজের পতাকা, কারো হাতে বাঁশি, কেউ বা থালা-বাসন বাজিয়ে করছেন উল্লাস।
ঘর থেকে পথে বের হয়ে আনন্দ মিছিলে অংশ নিয়েছেন হাজারো মানুষ। ৭ বছরের শিশু থেকে ৭০ বছরের বৃদ্ধ, সবাই সড়কে নেমে উল্লাস করছেন। রং হাতে আনন্দ উল্লাসে মেতে উঠেছে অনেকেই। অনেকে খুশিতে মিষ্টি খাওয়াচ্ছেন।
রংপুরে ছাত্র-জনতার বিজয়োল্লাস
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এক দফার মুখে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছেড়েছেন। এ খবরে রংপুরের রাজপথে বিজয় উল্লাস করছেন ছাত্র-জনতা। এ সময় শিশু-কিশোর, তরুণ-তরুণী, যুবক, বৃদ্ধসহ সব বয়সি মানুষের ঢল নামে পথে পথে।
সোমবার বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে নগরীর শাপলা চত্বর, পায়রা চত্বর, লালবাগ চত্বর, পার্ক মোড়, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন শহীদ আবু সাঈদ চত্বর, মর্ডান মোড়, প্রেসক্লাব চত্বর, জাহাজ কোম্পানি মোড়, পায়রা চত্বর, টাউন হল চত্বর, জিলা স্কুল মোড়সহ বিভিন্ন এলাকায় আনন্দ মিছিল বের করে সাধারণ মানুষ।
এ সময় তাদের জাতীয় পতাকা নিয়ে বিভিন্ন স্লোগান দিতে দেখা গেছে।
দেখা যায়, হাসিনার দেশত্যাগের খবর ছড়িয়ে পড়লে বিকাল ৩টার দিকে নগরীর প্রধান সড়কগুলো লোকারণ্য হয়ে যায়। বিভিন্ন এলাকা থেকে পৃথক মিছিল নিয়ে সড়কে ওঠেন ছাত্র-জনতা। এসব মিছিলে শিশু, ছাত্র-জনতাকে উল্লাস করতে দেখা যায়।
এ ছাড়া নগরীতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা আনন্দ মিছিল নিয়ে বেরোবির প্রধান ফটকের সামনে শহীদ আবু সাঈদ চত্বরে পৌঁছান। সেখানে তারা বিজয় মিছিল করেন। তবে এসব আনন্দ উল্লাস চলাকালে নগরীতে কোনো আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়নি।
বিকালের পর থেকেই মানুষের ঢলে পুরো রংপুর নগরী যেন ছাত্র-জনতার দখলে যায়। এ সময় তারা বিভিন্ন স্লোগান দিয়ে রাজপথ মুখরিত করে রাখেন। নগরীর বিভিন্ন স্থানে বিএনপি, জাতীয় পার্টি ও জামায়াতে ইসলামীসহ সরকারবিরোধী সংগঠন ও তাদের অঙ্গ সহযোগী সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকেও মিছিল বের হয়। বিভিন্ন স্থানে মিছিল থেকে মিষ্টি বিতরণ করা হয়। কোথাও কোথাও শুকরিয়া আদায় দিতে নামাজও পড়েন ছাত্র-জনতা।
নীলফামারীতে আনন্দ মিছিল ও মিষ্টি বিতরণ
শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পরপরই নীলফামারী জেলাজুড়ে আনন্দ মিছিল পদযাত্রা ও মিষ্টি বিতরণ করেছে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী, অভিভাবক, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল।
বেলা তিনটা দিকে শহরের বিভিন্ন স্থান থেকে আন্দোলনকারী, সাধারণ মানুষ ও বিএনপি, জামায়াত, জাতীয় পার্টিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক এবং সামাজিক সংগঠন আনন্দ মিছিল নিয়ে শহরের চৌরঙ্গী মোড়ে স্বাধীনতা স্মৃতি অম্লান পাদদেশে জড়ো হন।
এসময় বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকারীরা ওই স্তম্ভে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন। তারা সেখানে আনন্দ-উল্লাস করেন। পরে শুরু হয় মিষ্টি বিতরণ। উল্লাস ও মিষ্টি বিতরণ চলে রাত ১০টা পর্যন্ত।