উপজেলার দশজন কৃষক পরীক্ষামূলক ভাবে ৩০০ শতাংশ জমিতে ‘বিষমুক্ত' ও নিরাপদ’ ফুলকপির আবাদ করেছেন।
Published : 17 Feb 2023, 10:46 AM
ফুলকপির ক্ষেত জুড়ে হলুদ, নীল ও সাদা ফাঁদ; তাতে যুক্ত করা হয়েছে আঠা। সবজি ক্ষেতের ক্ষতিকর সব পোকা সেই ফাঁদের আঠায় আটকা পড়ে মারা যাচ্ছে।
সেই সঙ্গে বসানো হয়েছে ‘সেক্স ফেরোমেন’ ফাঁদ। এ ফাঁদে পুরুষ পোকা দমন করা হচ্ছে। ফলে ক্ষেত বিনষ্টকারী পোকা বংশবিস্তার করতে পারছে না।
এছাড়া ক্ষেতে কেমিক্যাল সারের বদলে ‘ভার্মিকম্পোস্ট’ বা কেঁচো সার ব্যবহার করা হচ্ছে। আর জৈব বালাইনাশক (তামাকের পাতা ও নিমা পাতার গুঁড়া দিয়ে তৈরি) দিয়ে পোকামাকড় নিধন করা হচ্ছে।
এইসব পদ্ধতি ব্যবহার করে গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় মানবদেহের জন্য ‘নিরাপদ’ ও ‘বিষমুক্ত’ ফুলকপি উৎপাদন করা হচ্ছে বলে উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা দেবাশীষ দাস বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান।
কোটালীপাড়া উপজেলার কুশলা ইউনিয়নের লাখিরপাড় গ্রামে দশ জন কৃষক পরীক্ষামূলক ভাবে ৩০০ শতাংশ জমিতে ‘বিষমুক্ত নিরাপদ’ ফুলকপির আবাদ করেছেন।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ‘বালইনশকের ঝুঁকি হ্রাস প্রকল্পের’ আওতায় এই সবজির আবাদ হচ্ছে। ক্ষেত থেকে ফুলকপি তোলার পর সেখানে একই পদ্ধতিতে চিচিঙ্গার আবাদ হবে বলে জানালেন কৃষি কর্মকর্তা।
দেবাশীষ বলেন, “প্রতি হেক্টরে ফুলকপির গড় ফলন ১৮ মেট্রিকটন। অর্গানিক এই পদ্ধতে চাষ করেও হেক্টরে প্রায় ১৮ মেট্রিকটন ফলন পাওয়া গেছে। ভবিষ্যতে ক্যান্সার, কিডনীরোগ, লিভার সিরোসিস, হৃদরোগ ও ডায়াবেটিসসহ জটিল রোগ থেকে সুরক্ষা দিতে নিরাপদ সবজি উৎপাদন বৃদ্ধি করা হবে।
“নতুন এই পদ্ধতিতে সবজির চাষাবাদ সম্প্রসারিত হলে আমাদের নিরাপদ সবজি উৎপাদন বাড়বে।”
লাখিরপাড় গ্রামের কৃষকরা নতুন এ পদ্ধতিতে ফুলকপির চাষাবাদ দেখে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।
লাখিরপাড় গ্রামের কৃষক পুনুরদান ফলিয়া বলেন, “এই পদ্ধতি আমাদের কাছে নতুন। ফুলকপি চাষে ক্ষেতে কেমিক্যাল সারের পরিবর্তে ভার্মিকম্পোস্ট বা জৈব সার ব্যবহার করেছি। পোকামাকড় দমনেও কোনো বিষ প্রয়োগ করা হয়নি। এখানে চার রকমের ফাঁদ ব্যবহার করা হয়েছে।
“তাছাড়া কোটালীপাড়া কৃষি অফিস থেকে জৈব বালইনাশক তৈরি ও ব্যবহার করা শিখিয়েছে; সেগুলো প্রয়োগ করেছি।”
‘কম খরচে’ উৎপাদিত এই ফুলকপি মানব দেহের জন্য নিরাপদ, খেতেও ‘সুস্বাদু’ বলে জানান এ কৃষক।
ওই গ্রামের কৃষক আনন্দ বিশ্বাস বলেন, “এই বছর কোটালীপাড়া কৃষি অফিসের কর্মকর্তাদের পরামর্শে কৃষির এই নতুন প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে ফুলকপিতে সাফল্য পেয়েছি। আমি ৫০ শতাংশ জমিতে ফুলকপি আবাদ করছি। এতে খরচ হয়েছে প্রায় ৪০ হাজার টাকা।
“এই পর্যন্ত দুইশ মণ ফুলকপি বিক্রি করেছি। আরও দশ মণ ফুলকপি বিক্রি করতে পারব। উৎপাদন খরচ বাদে এই ফুলকপি থেকে আমি ৫০ হাজার টাকা আয় করব।”
একই পদ্ধতিতে চিচিঙ্গাও চাষ করছেন জানিয়ে আনন্দ বলেন, “এই পদ্ধতির চাষাবাদে কীটনাশকের খরচ নেই; ফলে লাভ বেশি হয়।”
ওই গ্রামের কৃষাণি সুষমা বিশ্বাস বলেন, “আমাদের ফুলকপি চাষাবাদ দেখে আশপাশের কৃষকরাও এইভাবে ফুলকপি চাষ করতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন।”
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কোটালীপাড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নিটুল রায় জানান, সরকার নিরাপদ সবজি চাষের ওপর গুরুত্ব দিয়েছে। তাই তারা নতুন পদ্ধতি ব্যবহার করে নিরপদ সবজি আবাদ ও উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য প্রকল্প গ্রহণ করেছেন।
তিনি বলেন, “নিরাপদ সবজির ফলনও ভাল হয়েছে। তাই নিরাপদ সবজির আবাদ ও উৎপাদন বৃদ্ধি পেলে মানুষ এটি নিশ্চিন্তে গ্রহণ করতে পারবেন। এর মাধ্যমে জটিল রোগে আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতাও কমবে।”