১৮ অক্টোবর দুপুরে গরু চোরেরা বাছুর নিয়ে পালাতে চাইলে তা ঠেকাতে চোরদের গাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে পড়েছিলেন পিংকী।
Published : 27 Oct 2024, 02:11 PM
কুমিল্লায় গরু চুরি ঠেকাতে প্রাইভেট কারের সামনে দাঁড়ানো কলেজ ছাত্রীকে চাপা দিয়ে হত্যার আট দিন পেরিয়ে গেলেও জড়িতদের শনাক্ত করতে পারেনি পুলিশ।
ওই তরুণীকে চাপা দিয়ে হত্যার পর পালানোর সময় চোরচক্রের গাড়িটি এলাকার কয়েকটি সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা গেছে।
এরপরও ঘটনায় জড়িতদের ধরতে না পারায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন নিহতের পরিবার, সহপাঠী, শিক্ষকসহ এলাকাবাসী। হত্যার বিচার চেয়ে মানববন্ধন-বিক্ষোভও করেছেন তারা।
নিহত ফারজানা আক্তার পিংকী কুমিল্লার নাঙ্গলকোট উপজেলার রায়কোট উত্তর ইউনিয়নের রায়কোট গ্রামের নতুন বাজার সংলগ্ন এলাকার আবদুল কাদেরের মেয়ে।
১৯ বছর বয়সী পিংকী বাঙ্গড্ডা বাদশা মিয়া আদর্শ স্কুল অ্যান্ড কলেজের বিজ্ঞান বিভাগের দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিলেন।
১৮ অক্টোবর দুপুরে জুমার নামাজের সময় রায়কোট তালতলা-আটগ্রাম সড়কের রায়কোট নতুন বাজার এলাকায় আয়েশা মেটাল ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কসপের সামনে ওই তরুণীকে গাড়ি চাপা দেওয়া হয়।
সেদিন পিংকীদের কালো রঙের বাছুরটি তাদের বাড়ি সংলগ্ন ওই ওয়ার্কসপের সামনে বাঁধা ছিল। দুপুর প্রায় দেড়টার দিকে এলাকার পুরুষদের সবাই জুমার নামাজে ব্যস্ত থাকার সুযোগে বাছুরটি চুরি করে প্রাইভেট কারে তুলে পালানোর চেষ্টা করছিল ৩ থেকে ৪ জনের চোরের দল।
বিষয়টি টের পেয়ে প্রথমে বাধা দেন পিংকীর মা আছমা বেগম। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে চোরেরা তাকে বেধড়ক মারধর করে। মায়ের চিৎকারে ছুটে এসে চোরদের গাড়ির সামনে গিয়ে দাঁড়ান কলেজ ছাত্রী পিংকী।
কিন্তু চোরের দল ওই তরুণীকে প্রাইভেট কার চাপা দিয়ে হত্যা করে বাছুরটি নিয়ে পালিয়ে যায়।
পরে ঘটনাস্থল থেকে ৪ কিলোমিটার দূরে পাশের পেড়িয়া ইউনিয়নের দৌলতপুর গ্রামে চোখ বাঁধা অবস্থায় চুরি হওয়া গরুটি ফেলে চলে যায় চোরচক্রটি।
মর্মান্তিক এ ঘটনার পরদিনই থানায় হত্যা মামলা করেছেন নিহত তরুণীর বাবা আবদুল কাদের।
কিন্তু এক সপ্তাহের বেশি হলেও খুনিরা অধরা থাকায় ক্ষোভ প্রকাশ করে আবদুল কাদের বলেন, “চোরের দল আমার ফুটফুটে মেয়েটাকে নৃশংসভাবে গাড়ি চাপা দিয়ে হত্যা করেছে। কিন্তু ঘাতকরা এখনো ধরা পড়ল না। পুলিশ খুনিদের শনাক্ত পর্যন্ত করতে পারেনি। আমরা দ্রুত খুনিদের গ্রেপ্তার চাই। তাদের ফাঁসি চাই।”
কলেজ ছাত্রীর মা আছমা বেগম বলেন, “আমার তিন মেয়ে ও এক ছেলের মধ্যে পিংকী সবার বড়। আমার মেয়েটা ছোটবেলা থেকেই মেধাবী ও সাহসী।
“ভেবেছিলাম কয়েক মাস পর মেয়েকে বিয়ে দিয়ে দেব। আগামী মাসেই ছেলে পক্ষের আসার কথা ছিল। কিন্তু আমার সেই মেয়ে এখন কবরে। আমি খুনিদের বিচার চাই।”
পিংকীর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের উপাধ্যাক্ষ খন্দকার মুশফিকুল হক বলেন, “আমাদের শিক্ষার্থী পিংকী অনেক মেবাধী ছিল। এসএসসির মতো এইচএসসিতেও সে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে ভালো ফলাফল করতে পারত। দিনদুপুরে এমন ঘটনা মেনে নেওয়া যায় না। আমরা দ্রুত খুনিদের সনাক্ত ও বিচার চাই।”
মামলার সবশেষ অগ্রগতি জানতে চাইলে নাঙ্গলকোট থানার ওসি এ কে ফজলুল হক বলেন, মামলায় অজ্ঞাতনামা ৩ থেকে ৪ জনকে আসামি করা হয়েছে। ঘটনাস্থলে কোনো সিসি ক্যামেরা ছিল না।
“তবে আমরা ঘটনাস্থলের আশ-পাশের কয়েকটি সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজে সংগ্রহ করেছি। কিন্তু সেসব ফুটেজে পালিয়ে যাওয়া গাড়িটি দেখা গেলেও এটির নম্বরটি বোঝা যাচ্ছে না।”
তিনি বলেন, “আমাদের তদন্ত চলমান রয়েছে। আশা করছি দ্রুত সময়ের মধ্যে খুনি চোরচক্রকে গ্রেপ্তার করতে পারবো।”