Published : 01 Nov 2024, 09:13 PM
কালীপূজা ঘিরে মাদারীপুরের কালকিনিতে ২২০ বছরের পুরনো কুণ্ডুবাড়ির মেলা জমে উঠেছে। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত ক্রেতা-দর্শনার্থীদেরা ভিড় করছেন সেখানে; তাদের পদচারণায় মুখর হয়ে উঠেছে মেলা প্রাঙ্গণ।
মেলা আয়োজনে নানা বাধা-বিপত্তির পরে অবশেষে তিন দিনের জন্য অনুমতি দেয় জেলা প্রশাসন। তবে মেলা আয়োজনে প্রতিবার ইজারা দেওয়া হলেও এবার তা বাতিল করা হয়েছে।
মাদারীপুরের জেলা প্রশাসক ইয়াসমিন আক্তার বলেন, “কালীপূজা উপলক্ষে কালকিনি উপজেলার ভুরঘাটা এলাকার কুণ্ডুবাড়িতে মেলার আয়োজন হয়ে আসছে। মেলাটি কালকিনি পৌরসভা থেকে ইজারা প্রদান করে আয়োজন করা হতো।
“আমরা এবার ইজারা প্রথা বাতিল করে দিয়েছি এবং মন্দির কর্তৃপক্ষের উদ্যোগে ৩১ অক্টোবর থেকে তিন দিন মেলা আয়োজন করার অনুমতি দিয়েছি ।”
সরেজমিনে দেখা গেছে, ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের ভুরঘাটার কুণ্ডুবাড়ির মন্দির প্রাঙ্গণ থেকে চারপাশের সরকারি ও বেসরকারি প্রায় তিন একর জমির ওপরে মেলা বসেছে। সেখানে বিভিন্ন স্টলে বাহারি জিনিসের পসরা সাজিয়ে বসেছেন দোকানিরা। মেয়েদের হাতের পার্স (ব্যাগ) থেকে শুরু করে প্রসাধনী, বাচ্চাদের খেলনা থেকে দা-কাঁচি; এমনকি ঘর সাজানোর আসবাবপত্রও মিলছে সেখানে। রয়েছে চটপটি-ফুচকাসহ বিভিন্ন ধরনের খাবারের দোকানও।
বরিশালের গৌরনদী থেকে মেলায় আসা আসমা সুলতানা বলেন, “প্রতি বছরই এই মেলায় কেনাকাটা করতে আসি। বিশেষ করে শিশুদের জন্য খেলনা-সামগ্রী কিনি। এবারও অনেক কিছু কিনেছি।”
গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ার সাদুল্লাপুর থেকে আসা সুমন বালা বলেন, “আমি তো প্রতি বছরই মেলায় আসি। গত চার-পাঁচ বছর ধরে নিয়মিত আসছি। পূজা দেখি। মা কালীর মন্দিরে প্রার্থনা করি। ফেরার পথে টুকটাক কেনাকাটা করি। এবারও আমার ভাজিতার জন্য পুতুল আর খেলনা গাড়ি কিনেছি।”
মেলায় ঘুরতে ঘুরতে কথা হয়, মাদারীপুর শহর থেকে আসা সোহাগ বেপারী নামের একজনের সঙ্গে। মেলায় ভিড় থাকলেও সার্বিক ব্যবস্থাপনা দেখে তিনি উচ্ছ্বসিত বলে জানান।
সোহাগ বলছিলেন, “মেলায় প্রচুর ভিড়ের কারণে ঢুকতে সমস্যা হুচ্ছিল। ঢোকার পর কেনাকাটার পাশাপাশি চটপটি-ফুচকা খেয়েছি। এখানে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা পাহারা দিচ্ছে। দেখে মনে স্বস্তি লাগছে।”
এবার মেলার স্টল বরাদ্দ পেতে কোনো বরাদ্দ লাগেনি বলে জানালেন ব্যবসায়ী রহমান শেখ। মেলায় ‘চাঁদাবাজিও না থাকায়’ প্রশাসনকে ধন্যবাদও জানিয়েছেন তিনি।
তবে মেলার সময় কম হয়ে গেছে বলে আক্ষেপ করেছেন রহমান শেখ। বলছিলেন, “গত বিশ বছর ধরে ঢাকা থেকে কুণ্ডুবাড়ির মেলায় আসি। আসবাবপত্র বেচার জন্য। এ বছর বিদ্যুৎ সুবিধাও পাচ্ছি বিনামূল্যে। মেলার সময় আরও দুদিন বাড়িয়ে দিলে আমাদের জন্য ভাল হতো।”
মন্দির প্রাঙ্গণে কথা হয় কুণ্ডুবাড়ি কালীমন্দির ব্যবস্থাপনা কমিটির অন্যতম সদস্য কালীপদ কুণ্ডুর ছেলে স্বপন কুণ্ডুর সঙ্গে। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে বিভিন্ন ধর্মের মতানুসারীরা এই মেলাতে আসেন এবং উপভোগ করেন বলে তিনি জানান।
স্বপন বলেন, ২২০ বছর আগে ১৮০৫ সালে শ্রী শ্রী কালী মায়ের মন্দির প্রতিষ্ঠা করা হয়। প্রতিষ্ঠার সময় থেকে দিপাবলী ও কালীপূজা উপলকক্ষে দীননাথ কুণ্ডু ও মহেশ কুণ্ডু এই মন্দির ঘিরে কুণ্ডু মেলা শুরু করেন। এরই ধারাবাহিকতায় আমাদের বংশীয় নামানুসারে কুণ্ডুবাড়ির মেলা নামকরণ করা হয়।
“মেলাটি আমাদের দেশের সর্ববৃহৎ মেলাগুলোর একটি ঐতিহ্যবাহী একটি মেলায় পরিণত হয়েছে। মূলত কালীপূজার সময়কে ঘিরে এই মেলার আয়োজন করা হয়।”
তিনি বলেন, “প্রতি বছর কালীপূজার সময় সাত দিন ধরে কুণ্ডুবাড়ির মেলা হয়। ক্রেতাদের ভিড়ে কোনো কোনো বছর তো ১৫ দিন পর্যন্তও চলে। ৩১ অক্টোবর থেকেই দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে প্রচুর ক্রেতা দর্শনার্থীরা আসছেন। এবার মেলা আয়োজনের সময় কম মেলায় স্টল বেশি বসেনি।
“তবে এবারে কোনো প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো ইজারা না থাকায় দোকানিদের টাকা-পয়সার খরচ নেই। তারা নির্বিঘ্নে ব্যবসা করছে। পুলিশ ও সেনাবাহিনী সার্বক্ষনিক মেলায় ডিউটি দিচ্ছে।”
মেলায় যে কোনো ধরনের শৃঙ্খলা ঠেকাতে পর্যান্ত আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন রয়েছে বলে জেলা প্রশাসক ইয়াসমিন আক্তার জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, “দর্শনার্থী ও ক্রেতাদের সুবিধার জন্য সব ধরনের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এমনকি যারা এখানে দোকান থাকবেন, তারাও যাতে কোনো ধরনের হয়রানির শিকার না হয় সেদিকেও আমাদের নজর রয়েছে।”
মাদারীপুর জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি অধ্যাপক প্রাণতোষ মণ্ডল বলেন, কুণ্ডুবাড়ির কালীপূজা ও মেলায় এখনও কোনো ধরনের বিশৃংখলার খবর পাইনি। প্রশাসন কঠোর অবস্থানে রয়েছে।
মেলায় ক্রেতা-দর্শনার্থীদের ভিড় বাড়ছে দাবি করে তিনি বলেন, “এমন সুন্দর পরিবেশই আমাদের দাবি ছিল।”