এ মৌসুমে এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে শুক্রবার ৪০ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
Published : 20 Apr 2024, 12:31 PM
বৈশাখের শুরু থেকেই তাপপ্রবাহে বিপর্যস্ত হয়ে উঠছে খুলনা অঞ্চলের মানুষের জনজীবন। থার্মোমিটারের পারদ চড়ছে প্রতিদিনই। প্রচণ্ড গরমে মানুষের দুর্ভোগের সঙ্গে হাসপাতালেও বাড়ছে রোগীর সংখ্যা।
খুলনা আবহাওয়া অধিদফতরের সহকারী আবহাওয়াবিদ মো. আমিরুল আজাদ বলেন, খুলনা অঞ্চলের ওপর দিয়ে মাঝারি থেকে তীব্র দাবদাহ বয়ে যাচ্ছে। এর মধ্যে আকাশে মেঘ না থাকায় সূর্যের কিরণের তীব্রতা বেড়েছে।
তিনি জানান, প্রতি বছর এপ্রিল মে মাসে তাপদাহ থাকে। তবে এ মৌসুমে এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে শুক্রবার ৪০ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
আমিরুল আজাদ বলেন, এই দাবদাহ থাকতে পারে আরও কয়েকদিন। মাঝে মাঝে কালবৈশাখি ঝড়ে সাময়িক স্বস্তি মিললেও তাপমাত্রা কমবে, তেমন আভাস নেই। তবে বৃষ্টি হলে গরম কিছুটা কমবে।
এদিকে বাতাসের আর্দ্রতা বেশি থাকায় ভ্যাপসা গরমে জনজীবনে অস্বস্তি নেমে এসেছে। ঘরে-বাইরে কোথাও স্বস্তি নেই। প্রখর রোদে পথ-ঘাট সব কিছুই উত্তপ্ত।
এ অবস্থায় সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন কৃষক-শ্রমিকসহ খেটে খাওয়া মানুষ। তারা গামছা ভিজিয়ে শরীর মুছে কেউবা মাথায় পানি ঢেলে কেউবা আবার লেবুর শরবত খেয়ে গরম নিবারণের চেষ্টা করছেন।
শহরের কয়েকজন ইজিবাইক ও রিকশাচালক বলেন, বাহিরে রোদের তাপে শরীর পুড়ে যাচ্ছে। সকাল ও বিকালের পর থেকে যাত্রী পেলেও দুপুরে বেশির ভাগ রাস্তাঘাট ফাঁকা থাকছে। তারপরও পেটের দায়ে তাদের ঘর থেকে বের হতেই হয়।
বড়বাজার, সোনাডাঙ্গা, রূপসা, নিরালা, গল্লামারী মোড়ের কয়েকজন শরবত বিক্রেতা বলেন, গরমের কারণে শরবত বিক্রি বেড়েছে। পিপাসা ও একটু স্বস্তি পেতে ঠাণ্ডা লেবুর শরবত পান করছেন লোকজন।
নগরের বয়রা এলাকার গৃহবধূ লিজা খাতুন বলেন, গরমে ছেলে-মেয়ে নিয়ে হাঁপিয়ে উঠেছি। তারা বাইরে বের হতে পারছে না। পড়াশোনাও ব্যাহত হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতেই রোববার থেকে খুলছে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এতে তীব্র গরমে শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি আরও বাড়াবে।
লিজা আরও বলেন, “এখনই এত গরম; গরমের বাকি সময় তো সামনে পড়েই আছে।”
ময়লাপোতা মোড়ের পথচারী বেসরকারি ব্যাংক কর্মকর্তা রেজাউল করিম বলেন, প্রখর রোদে ছাতা ছাড়া বাহিরে বের হওয়া বেশ কষ্টকর। একটু পর পর পানির পিপাসা লাগছে। তারপরও বাসায় ছেলে-মেয়েদের জন্য তরমুজ কিনতে বের হয়েছি।
অপরদিকে প্রচুর দাবদাহ ও ভ্যাপসা গরমের কারণে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন বাসিন্দারা। বেড়েছে তাপপ্রবাহজনিত রোগ।
নগরের সরকারি-বেসরকারি কয়েকটি হাসপাতালে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জ্বর, কাশি, শ্বাসকষ্ট, ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছেন মানুষ। এছাড়া অ্যাজমা, হাঁপানিসহ শ্বাসকষ্টের রোগীদের ভোগান্তি বেড়েছে। বেশি ভোগান্তির শিকার হচ্ছে নবজাতক, শিশু, গর্ভবতী নারী ও প্রবীণরা।
স্থানীয়রা বলছেন, বেশিরভাগ বাড়িতে অন্তত একজন সদস্য জ্বর, গলাব্যথা, কাশিসহ বিভিন্ন অসুস্থতায় ভুগছেন।
খালিশপুর এলাকার বাসিন্দা মো. নুরুজ্জামান বলেন, “আমার চার বছরের শিশুটি পাঁচ দিন ধরে জ্বর ও কাশিতে ভুগছে। ঘরোয়া চিকিৎসায় জ্বর ভালো না হওয়ায় এখন খুলনা শিশু হাসপাতালের একজন শিশু স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের কাছে চিকিৎসা নিচ্ছি।”
তিনি আরও বলেন, “বাসায় আমার মাও জ্বরে ভুগছেন।”
খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আরএমও সুহাস রঞ্জন হালদার বলেন, ঈদের পর থেকে প্রতিদিন জ্বর, কাশি এবং ডায়রিয়াসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত রোগী বেড়েছে। তবে বেশিরভাগ রোগীদের হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার দরকার হচ্ছে না, কারণ তাদের লক্ষণগুলো হালকা।
এদিকে প্রচণ্ড তাপপ্রবাহের কারণে অতি প্রয়োজন ছাড়া বাইরে বের না হতে পরামর্শ দিচ্ছে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ।
খুলনার সিভিল সার্জন (ভারপ্রাপ্ত) ডা. শেখ মোহাম্মাদ কামাল হোসেন বলেন, “এ তাপমাত্রা শিশু থেকে বয়স্ক সবার জন্যই ঝুঁকিপূর্ণ। তাপপ্রবাহের কারণে হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি থাকে। এ কারণে অতি প্রয়োজন ছাড়া এ সময় বাইরে বের না হওয়াই ভালো।”
এ সময় বেশি বেশি পানি ও ফলমূল খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, “অতিরিক্ত ঘাম ঝরলে স্যালাইন পানি পান করতে হবে। বাহির থেকে ঘাম অবস্থায় ঘরে ফিরে সঙ্গে সঙ্গে গোসল এবং ঠান্ডা জাতীয় পানি পান করা যাবে না। কিছু সময় অপেক্ষা করতে হবে শরীরটা যেন অ্যাডজাস্ট হয়।”
অপরদিকে প্রচণ্ড তাপদাহে কৃষি উৎপাদন কমারও আশঙ্কা করছেন কৃষি সংশ্লিষ্টরা। তাপপ্রবাহ প্রলম্বিত হলে চলতি মৌসুমের ধানসহ অন্যান্য ফল-ফসলের সামগ্রিক উৎপাদন হ্রাস এবং একইসঙ্গে বাড়তি খরচের আশঙ্কা করছেন তারা।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর খুলনার উপপরিচালক কাজী জাহাঙ্গীর হোসেন চলমান তাপপ্রবাহে কৃষকদের পরামর্শ দিয়ে বলেন, তাপপ্রবাহের ক্ষতি থেকে ধান রক্ষার জন্য ধানের শীষে দানা শক্ত না হওয়া পর্যন্ত জমিতে অবশ্যই ৫-৭ সেন্টিমিটার পানি ধরে রাখুন। এ সময় জমিতে যেন পানির ঘাটতি না হয়।