সব ধরনের প্রস্তুতির পাশাপাশি ১৪৫টি ভোট কেন্দ্রে স্থাপন করা হয়েছে এক হাজার ২৪২টি সিসি ক্যামেরা ।
Published : 03 Jan 2023, 04:36 PM
ভোট গ্রহণ বাতিল হওয়া গাইবান্ধা-৫ (সাঘাটা-ফুলছড়ি) আসনের উপনির্বাচনের পুনর্ভোট হতে যাচ্ছে বুধবার। এই ভোটগ্রহণের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে নির্বাচন কমিশন ও প্রশাসন।
এর আগে সোমবার মধ্যরাতে এই উপ-নির্বাচনের প্রচারণা শেষ হয়েছে।
জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. আবদুল মোত্তালিব জানান, সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠানের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। মঙ্গলবার সকালে ফুলছড়ি ও সাঘাটা উপজেলা নির্বাচন কার্যালয় থেকে ইভিএমসহ নির্বাচনী সব সরঞ্জাম সংশ্লিষ্ট কেন্দ্রের প্রিজাইডিং কর্মকর্তাদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
অনেক প্রিজাইডিং কর্মকর্তা মঙ্গলবার বিকালেই আইনশৃংখলা বাহিনী ও ভোটগ্রহণ সহযোগি কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্ট কেন্দ্রে পৌঁছে ভোটগ্রহণের জন্য কেন্দ্র প্রস্তুত করেছেন।
তিনি জানান, এ উপ-নির্বাচনে পাঁচজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তারা হচ্ছেন, আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী মাহমুদ হাসান রিপন, জাতীয় পার্টি (জাপা) মনোনীত এএইচএম গোলাম শহীদ রঞ্জু, বিকল্পধারা মনোনীত জাহাঙ্গীর আলম, স্বতন্ত্র প্রার্থী নাহিদুজ্জামান নিশাত এবং সৈয়দ মাহবুবুর রহমান।
তবে গত ২৫ ডিসেম্বর বগুড়া প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে ভোট কারচুপির আশঙ্কায় এই নির্বাচন থেকে তিনি সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন নাহিদুজ্জামান নিশাদ।
নির্বাচন কর্মকর্তা আরও জানান, এ আসনে মোট ভোটার তিন লাখ ৩৯ হাজার ৭৪৩ জন। উপ-নির্বাচনে ১৪৫টি কেন্দ্রের ৯৫২টি বুথে ইভিএমে ভোটগ্রহণ করার জন্য ১৪৫ জন প্রিজাইডিং কর্মকর্তা, ৯৫২ জন সহকারী প্রিজাইডিং কর্মকর্তা ও এক হাজার ৯০৪ জন পোলিং কর্মকর্তা দায়িত্ব পালন করছেন।
ফুলছড়ি থানার ওসি কাওসার আলী বলেন, নিরাপত্তার জন্য প্রতি কেন্দ্রে দুই জন কর্মকর্তাসহ চার জন পুলিশ সদস্য এবং ১২ জন আনছার ও ভিডিপি সদস্য দায়িত্ব পালন করছেন। তবে তার উপজেলার চরাঞ্চলের ১০টি কেন্দ্রে ১০ জন করে পুলিশ সদস্য ও ১৬ জন করে আনছার ও ভিডিপি সদস্য দায়িত্ব পালন করবেন।
সাঘাটা থানার ওসি রাজু সরকারও জানান, তার উপজেলার চরাঞ্চলের তিনটি কেন্দ্রে ১০ জন করে পুলিশ সদস্য ও ১৬ জন করে আনছার ও ভিডিপি দায়িত্ব পালন করবেন।
গাইবান্ধার পুলিশ সুপার কামাল হোসেন বলেন, “অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে সব প্রস্তুতি পুলিশ প্রশাসনের রয়েছে। র্যাবের নয়টি টিম, চার প্লাটুন বিজিবি, এবং অস্ত্রধারী আনসার সদস্য ছাড়াও এক হাজার ২৮৫ জন পুলিশ নিরাপত্তা প্রদানে দায়িত্ব পালন করছেন।”
গাইবান্ধা জেলা প্রশাসক মো. অলিউর রহমান বলেন, “গাইবান্ধা-৫ আসনটি ফুলছড়ি ও সাঘাটা উপজেলার ১৭টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত। প্রতি ইউনিয়নে একজন করে মোট ১৭ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও দুইজন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্ব পালন করছেন।”
এই উপ-নির্বাচনের নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা ও ঢাকা আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা ফরিদুল ইসলাম জানান, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোট গ্রহণের জন্য সব ধরনের প্রস্তুতির পাশাপাশি ১৪৫টি ভোট কেন্দ্রে এক হাজার ২৪২টি সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে। যা পর্যবেক্ষণের জন্য উচ্চ পর্যায়ের মনিটরিং সেল গঠন করেছে নির্বাচন কমিশন।
আসনের সংসদ-সদস্য ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বী গত ২৩ জুলাই মারা যান। নির্বাচন কমিশন আসনটি শূন্য ঘোষণার পর গত ১২ অক্টোবর উপ-নির্বাচনের দিন ধার্য হয়। কিন্তু ভোট গ্রহনের দিন অনিয়ম করায় ভোট গ্রহণ স্থগিত করা হয়। এই অনিয়ম তদন্ত করার জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়। তদন্ত কাজ শেষে গত ৬ নভেম্বর পুনরায় আগামী ৪ জানুয়ারি গাইবান্ধা-৫ আসনের উপ-নির্বাচনে তারিখ ঘোষণা দেন নির্বাচন কমিশন।
ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বী মিয়া গত ২৩ জুলাই মারা গেলে তার সংসদীয় আসন গাইবান্ধা-৫ (সাঘাটা-ফুলছড়ি) শূন্য ঘোষণা করা হয়।
গত ১২ অক্টোবর এ আসনের উপ-নির্বাচনের ভোটগ্রহণের মধ্যে সিসি ক্যামেরায় এক-তৃতীয়াংশ কেন্দ্রে অনিয়মের দৃশ্য দেখে মাঝপথে ঢাকা থেকে নির্বাচন বন্ধের নির্দেশ দেয় ইসি।
বাংলাদেশে নির্বাচন কমিশনের ইতিহাসে অনিয়মের কারণে কোনো সংসদীয় আসনের নির্বাচন পুরোপুরি (সব কেন্দ্র) বন্ধ করার ঘটনা সেটাই প্রথম।
গত ৬ ডিসেম্বর গাইবান্ধা-৫ আসনের উপনির্বাচনের পুনর্ভোটের জন্য ৪ জানুয়ারি নতুন তারিখ ঠিক করে নির্বাচন কমিশন।