মারধরের শিকার ওই সাংবাদিক বর্তমানে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি আছেন।
Published : 21 Mar 2025, 08:13 PM
বাবার অপচিকিৎসা বিষয়ে থানায় অভিযোগ করায় ময়মনসিংহে এক সাংবাদিকের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে।
শুক্রবার পর্যন্ত ওই সাংবাদিক ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নাক-কান-গলা বিভাগে ভর্তি আছেন বলে কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি মো. শফিকুল ইসলাম খান জানান।
এর আগে বৃহস্পতিবার সকালে আহত অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি হন তিনি।
আহত মো. মঞ্জুরুল ইসলাম ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের ৩১ নম্বর ওয়ার্ডের চর ঈশ্বরদিয়া খালপাড় এলাকার মোসলেম উদ্দিনের ছেলে।
তিনি দৈনিক রূপালী বাংলাদেশ পত্রিকার নিজস্ব প্রতিবেদক ও স্থানীয় দৈনিক ব্রহ্মপুত্র এক্সপ্রেসের জ্যৈষ্ঠ প্রতিবেদক।
‘মারধরের ফলে’ সাংবাদিক মঞ্জুরুল ইসলামের মাথায় আঘাত লাগায় ডান কানে ৪০ শতাংশ কম শুনছেন বলে জানিয়েছেন হাসপাতালের চিকিৎসকরা।
মঞ্জুরুল ইসলাম বলেন, তার বাবা ৭-৮ দিন ধরে দাঁতের ব্যথায় ভুগছিলেন। গত ১২ মার্চ বিকালে তার বাবাকে নগরীর শম্ভুগঞ্জ পশ্চিম বাজার এলাকার অ্যাডভান্সড ডেন্টাল সলোশন নামক একটি দন্ত চিকিৎসালয়ে নেওয়া হয়।
সেখানে নিজেকে চিকিৎসক দাবি করা শিমু আক্তার কোনো প্রকার পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়াই খারাপ দাঁতের পরিবর্তে মোসলেম উদ্দিনের ভালো দাঁত ফেলে দিয়ে কিছু ওষুধ লিখে দেন।
এ অবস্থায় মোসলেম বাড়িতে ফিরে আরো বেশি করে দাঁতের ব্যথা অনুভব করেন। ওষুধ খেয়েও কোনো কাজ হচ্ছিল না।
ওইদিন রাতেই তিনি বুঝতে পারেন, খারাপ দাঁতের পরিবর্তে তার ভালো দাঁত ফেলে দিয়েছেন শিমু আক্তার।
পরে ১৩ মার্চ বিকালে অটোরিকশায় করে শম্ভুগঞ্জ বাজার মোড় এলাকার রিচ হেলথ সেন্টার নামে আরেকটি দন্ত চিকিৎসালয়ে নিয়ে যাওয়া হয় মঞ্জুরুল ইসলামের বাবা মোসলেম উদ্দিনকে।
সেখানে চিকিৎসক আমিনুল ইসলামও কোনো পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়াই মঞ্জুরুল ইসলামের বাবাকে অটোরিকশায় বসিয়ে রেখেই দাঁত ফেলে দিয়ে ওষুধ লিখে দেন। কিন্তু সেই ওষুধ খেয়েও দাঁতের ব্যথা কমেনি। এভাবেই তিনি ৩-৪ দিন দাঁতের ব্যথায় ভোগেন।
সাংবাদিক মঞ্জুরুল ইসলামের অভিযোগ, বিষয়টি আমিনুল ইসলামকে জানালে উল্টো বিভিন্ন হুমকি-ধামকি পান।
পরে বাবার ‘অপচিকিৎসার’ কথা উল্লেখ করে গত বুধবার কোতোয়ালি মডেল থানায় শিমু আক্তার ও আমিনুল ইসলামের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দেন মঞ্জুরুল ইসলাম।
এর কিছুক্ষণ পর শম্ভুগঞ্জ প্রেস ক্লাবের সভাপতি আনোয়ার হোসেন ফোন করে রাতে চা পানের দাওয়াত দেন মঞ্জুরুল ইসলামকে।
ফোন পেয়ে মঞ্জুরুল ওই প্রেস ক্লাবের নিচে যান।
মঞ্জুরুলের অভিযোগ, প্রেস ক্লাবের নিচে দাঁড়াতেই চিকিৎসক আমিনুল ইসলামের লোকজন থানায় অভিযোগ দেওয়ার কারণে তাকে গালাগালি শুরু করেন।
কিছুক্ষণ পর প্রেস ক্লাবের সভাপতি আনোয়ার হোসেন সেখানে আসেন। এসেই মঞ্জুরুল ইসলাম ও তার বাবার দাঁতের চিকিৎসা করা আমিনুল ইসলামসহ কয়েকজনকে নিয়ে ক্লাবে তার কক্ষে প্রবেশ করেন।
কক্ষে ঢোকার সঙ্গে সঙ্গে আমিনুল ও তার লোকজন মঞ্জুরুলকে বেধড়ক কিল-ঘুষি মারা শুরু করেন। খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে তাকে উদ্ধার করে।
আহত মঞ্জুরুল ইসলাম বলেন, “নিজের বাবার অপচিকিৎসার বিচার চাইতে গিয়ে সন্ত্রাসীদের আক্রমণের শিকার হব, কোনোদিন ভাবতে পারিনি। আমার ওপর করা অন্যায়ের বিচার চাই।”
এ বিষয়ে আমিনুল ইসলাম বলেন, “সাংবাদিকের বাবা আমার পূর্ব পরিচিত। তিনি সবসময় আমার পরামর্শ নিয়ে থাকেন। কিন্তু হাতুড়ে চিকিৎসকের কাছে গিয়ে দাঁত ফেলে ব্যথা ভালো না হওয়ায় উনি আমার কাছে আসেন। আমি উনাকে যথাযথ সেবা দিই। কিন্তু তারপরও উনার ছেলে আমাকে ভুয়া ডাক্তার লিখে থানায় অভিযোগ দেন।”
তিনি বলেন, “আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ দেওয়ার কারণ জানতে চাইলে ওই সাংবাদিক প্রেস ক্লাবে উচ্চবাচ্য করেন। তখন আমার পরিচিতরা ঠেলা-ধাক্কা দেয়। পরে পুলিশ এসে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করে।”
তবে মঞ্জুরুল ইসলামের বাবার চিকিৎসার বিষয়ে জানতে অ্যাডভান্সড ডেন্টাল সলোশনের শিমু আক্তারকে ফোন করা হলে তার নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়।
এ বিষয়ে আনোয়ার হোসেন বলেন, “চিকিৎসক আমিনুল ইসলাম আমার ক্লাবের সদস্য। সাংবাদিক মঞ্জুরুল ইসলামকে আমিই চা পানের দাওয়াত দিয়েছিলাম। পরে আমার রুমেই আমিনুল তার লোকজন নিয়ে সাংবাদিককে মারধর করেন।“
এ বিষয়ে কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি মো. শফিকুল ইসলাম খান বলেন, “মারধরের পর ওই সাংবাদিক নিজেই ফোন করে বিষয়টি জানিয়েছেন। তিনি এখনো হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। মারধরের বিষয়ে আজ অথবা কাল তিনি অভিযোগ করবেন। অভিযোগ পেলে অবশ্যই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”