বিশ্বকাপ কাভার করতে আসা লা গেজেত্তা দেল্লো স্পোর্তের এই সাংবাদিকও জানালেন তিনি এবার আর্জেন্টিনার পক্ষে।
Published : 13 Dec 2022, 11:17 AM
কাতার ন্যাশনাল কনভেনশন সেন্টারে (কিউএনসিসি) দেখা ফাবিও বিয়াঞ্চির সঙ্গে। বেশ হাসিখুশি স্বভাবের মানুষ। আলাপচারিতার এক ফাঁকে দৃষ্টি যায় তার গলায় ঝোলানো কার্ডের দিকে। লেখা লা গেজেত্তা দেল্লো স্পোর্ত। কৌতুহল আরও বাড়ে। কাতার বিশ্বকাপে ইতালি নেই বলে নয়, এই পত্রিকাটির পাতায় ১৯৩০ সালের ঐতিহাসিক প্রথম বিশ্বকাপের সংবাদ ছাপা হয়েছিল মাত্র ২০ লাইনের ছত্রে, এক কলামে, তাই।
কিউএনসিসির অবস্থার কাতারের রাজধানী দোহার প্রাণকেন্দ্রে ন্যাশনাল লাইব্রেরির পাশে। এখানে কাতার বিশ্বকাপ কাভার করতে সারা বিশ্ব থেকে আসা গণমাধ্যকর্মীদের কাজের জায়গা। মিলনমেলাও বলা যায়। দিনভর এদিক-ওদিক ঘুরে সংবাদ কুড়িয়ে এনে এখানে সাজাতে থাকেন সবাই। কাজের ব্যস্ততার ফাঁকে একটু বাইরে গিয়ে আড্ডা দেন। সেই আড্ডাতে গিয়েই পরিচয় বিয়াঞ্চির সঙ্গে।
স্বাভাবিকভাবে উঠে আসে চারবারের চ্যাম্পিয়ন ইতালির বিশ্বকাপের বাছাই পার হতে না পারার প্রসঙ্গ। ভীষণ হতাশার ভঙ্গিতে ফাবিও মাথা নাড়েন এদিক-ওদিক। কারণ জানাতে গিয়ে বলেন আলেসান্দ্রো দেল পিয়েরো, রবের্ত বাজ্জিওদের উত্তরসূরির অভাব।
“একটা ভালো মানের স্ট্রাইকার নেই আমাদের, তাহলে কীভাবে হবে? যাই বল না কেন, দিন শেষে ফুটবল গোলের খেলা, জিততে হলে গোলই লাগে, ইম্মোবিলে (সিরো), ইনসিনিয়েদের (লরেন্সো) দিয়ে হবে না। নতুন করে ভাবতে হবে।”
বাংলাদেশে যারা ক্রীড়া সাংবাদিক, ইতালির ফুটবলের খোঁজ-খবরের জন্য লা গেজেত্তা দেল্লো স্পোর্ত-এর কথা জানেন। বিষয়টা জানাতে ফাবিওর মুখে হাসি খেলে যায়। তিনিও জানতে চান কোন মাধ্যমে কাজ করি। বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম বাংলাদেশের প্রথম ইন্টারনেট সংবাদপত্র ও নিউজ এজেন্সি, শুনে স্বভাবসুলভ হাসি লেগে থাকে ফাবিও চোখে-মুখে। পরক্ষণেই আবার হতাশা। ইন্টারনেটের এই যুগে যে ধুঁকছে তার প্রিয় পত্রিকা।
“লা গেজেত্তা দেল্লো স্পোর্ত আর নেই আগের মতো, এখন এর ছাপা কমেছে। বেশ কিছু দিন ধরেই এটা কমছে। বলতে পার, পত্রিকার যুগ একটু একটু করে ক্ষয়ে যাচ্ছে। যেমনটা ক্ষয়ে যাচ্ছে ইতালি (কষ্টের হাসি)।”
১২৬ বছরের পুরান, ঐতিহ্যবাহী লা গেজেত্তা। ইতালিয়ান ফুটবলের আর্কাইভ। তার ক্ষয়ে যাওয়ার খবর শুনে বিষণ্ণতা ভর করে মনে। আলোচনা এগিয়ে নিতে প্রসঙ্গ পাল্টাতে হয়। জিজ্ঞেস করি, অন্য কথায় আসা যাক, এবারের বিশ্বকাপে তুমি তাহলে কার পক্ষে?
“আর্জেন্টিনো, আর্জেন্টিনা।”
কিছুটা শিশুতোষ চিৎকারে বলে ওঠে ফাবিও। এই সমর্থনের কারণ জানাতে ইতালিয়ানদের সঙ্গে আর্জেন্টিনার হাজার বছরের পুরান সম্পর্ক, অভিবাসী হওয়ার অতীতের গল্পে ফিরে গেলেন। লিওনেল মেসির দাদা-পরদাদাদের শেকড়ও যে ইতালিতে গাঁথা!
“খেয়াল করেছ? ইতালিয়ানো, আর্জেন্টিনো, শব্দে কি দারুণ মিল। এটা আজকের নয়, অনেক অনেক বছরের পুরান এই সম্পর্ক। এবার তাই আমি আর্জেন্টিনার পক্ষে।”
আলোচনা ঠিকই থামাতে হয়। দুজনকে ফিরতে হয় নিজেদের ডেস্কে। ডুব দিতে হয় প্রতিবেদন লেখায়। কিন্তু কানে বাজতে থাকে দারুণ দ্যোতনা ছড়ানো শব্দযুগল, “ইতালিয়ানো, আর্জেন্টিনো।”