চীনা সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, চারটি প্রধান হাসপাতাল বাংলাদেশিদের জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে।
Published : 12 Mar 2025, 11:42 PM
বাংলাদেশ ও চীনের কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তিতে দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতার অংশ হিসেবে চীনের কুনমিং-এ বাংলাদেশি নাগরিকদের জন্য চিকিৎসা সেবা উন্মুক্ত করেছে চীন সরকার।
কুনমিং-এ বাংলাদেশের কনসাল জেনারেল অফিসের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সোমবার চায়না ইস্টার্নের একটি ফ্লাইটে ঢাকা থেকে প্রথম চিকিৎসা-সন্ধানী দল কুনমিং চাংশুই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছায়।
বিমানবন্দরে দলটিকে অভ্যর্থনা জানান চীনে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মো. নাজমুল ইসলাম, কুনমিং-এ নিযুক্ত বাংলাদেশের কনসাল জেনারেল মো. খালেদ, ইউনান পররাষ্ট্র দপ্তরের মহাপরিচালক ইয়াং শাওচেং এবং ইউনান স্বাস্থ্য কমিশনের উপ-মহাপরিচালক ওয়াং জিয়াঙ্কুনসহ সংশ্লিষ্ট হাসপাতালগুলোর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
প্রথম দলে চিকিৎসা-সেবা নিতে যাওয়া ব্যক্তিদের পাশাপাশি চিকিৎসক, সাংবাদিক ও ট্যুর অপারেটরদের একটি প্রতিনিধিদলও রয়েছে।
এ সফরের মাধ্যমে বাংলাদেশিদের জন্য উন্নত চিকিৎসার নতুন সম্ভাবনা তৈরি হবে বলে আশা প্রকাশ করেন রাষ্ট্রদূত মো. নাজমুল ইসলাম।
তিনি বলেন, “যৌক্তিক খরচে উন্নত চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করার পাশাপাশি দুই দেশের মানুষের মধ্যে সম্প্রীতি ও পারস্পরিক সহযোগিতার নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হলো।”
চীনা সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, কুনমিং-এর চারটি প্রধান হাসপাতাল বাংলাদেশি নাগরিকদের জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে।
এর মধ্যে রয়েছে – ১. কুনমিং মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন ফার্স্ট অ্যাফিলিয়েটেড হাসপাতাল, যেখানে সাধারণ রোগের উন্নত চিকিৎসা সুবিধা পাওয়া যাবে। ২. ইউনান ফার্স্ট পিপলস হাসপাতাল, যা বহুমুখী চিকিৎসা সেবার জন্য পরিচিত। ৩. ফু-ওয়াই কার্ডিওভাস্কুলার হাসপাতাল, যেখানে হৃদরোগ সংক্রান্ত চিকিৎসা দেওয়া হবে। ৪. ইউনান ক্যান্সার হাসপাতাল, বিশেষায়িত ক্যান্সার চিকিৎসা কেন্দ্র।
বাংলাদেশি নাগরিকরা সরাসরি এ হাসপাতালের আন্তর্জাতিক ওয়ার্ডে যোগাযোগ করে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের মতামত নিতে এবং চিকিৎসার জন্য নিবন্ধন করতে পারবেন। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত করেছে, বাংলাদেশিরা চীনা নাগরিকদের জন্য নির্ধারিত ফি অনুযায়ী চিকিৎসা সেবা পাবেন।
এছাড়া চিকিৎসা-পর্যটন সহজ করতে বাংলাদেশ ও ইউনানের মধ্যে সরাসরি বিমান সংযোগ বাড়ানোর পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। কুনমিং ও চট্টগ্রামের মধ্যে সরাসরি ফ্লাইট চালু এবং ঢাকা-কুনমিং রুটে একাধিক ফ্লাইট চালুর জন্য সরকারি পর্যায়ে আলোচনা চলছে।
রাষ্ট্রদূত মো. নাজমুল ইসলাম বলেন, “চীনে উন্নত চিকিৎসার জন্য বাংলাদেশিদের আগ্রহ বাড়ছে। কুনমিং-এ এই সুযোগ সৃষ্টি হওয়ায় বাংলাদেশি রোগীদের জন্য নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলেছে।”
ইউনান পররাষ্ট্র দপ্তরের মহাপরিচালক ইয়াং শাওচেং বলেন, “বাংলাদেশ ও ইউনানের জনগণের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক আরও গভীর করতে এ চিকিৎসা সহযোগিতা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।”
গত জানুয়ারি মাসে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তার চীন সফরে বাংলাদেশিদের জন্য অপেক্ষাকৃত কম খরচে উন্নত চিকিৎসা সেবা উন্মুক্ত করার প্রস্তাবটি দেশটির সরকারের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে উত্থাপন করেন।
প্রতিবছর বাংলাদেশ থেকে হাজারো মানুষ উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে যান। কুনমিং-এ এই উদ্যোগের ফলে চীনে চিকিৎসা নেওয়ার হার বাড়বে বলে আশা করছে দুই দেশের সরকার।