ওয়াশিংটনে বাংলাদেশ দূতাবাসে জাতীয় শোক দিবসের অনুষ্ঠান চলাকালে মারামারিতে জড়িয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রবাসী নেতাকর্মীরা।
Published : 16 Aug 2015, 03:35 PM
এ সময় একপক্ষের চেয়ারের বাড়িতে মাথা কেটে গেছে এক যুবলীগ নেতার। পুলিশ এসে গ্রেপ্তার করে নিয়ে গেছে দুইজনকে।
দূতাবাসের প্রেস সেক্রেটারি শামীম আহমদ বলেন, “১৫ অগাস্ট জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে দূতাবাস ভবনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে একজনের বক্তব্যকে কেন্দ্র করে এ অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে। পুলিশ এসে পরিস্থিতি শান্ত করলে পরে বাকি অনুষ্ঠান হয়।”
চেয়ারের আঘাতে মাথা কেটে যাওয়ায় যুবলীগ কর্মী রাজুকে স্থানীয় হাওয়ার্ড হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।
আর ভার্জিনিয়া স্টেট আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জি আই রাসেল এবং ওয়াশিংটন মেট্রো আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি সাদেক খানকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
ওয়াশিংটন ডিসিতে কর্মরত সাংবাদিক হারুন চৌধুরী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, শনিবার সন্ধ্যায় প্রাবসীদের অংশগ্রহণে শান্তিপূর্ণভাবেই সবকিছু চলছিল। আলোচনার এক পর্যায়ে মেরিল্যান্ড অঙ্গরাজ্য আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ সেলিমের বক্তব্যকে কেন্দ্র করে স্থানীয় আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের মধ্যে তুমুল হট্টগোল শুরু হয়ে যায়। পরে তা হাতাহাতি ও মারিমারিতে গড়ায়।
শেখ সেলিম তার বক্তব্যে কয়েকজনের নাম উল্লেখ করে বলেন, “কয়েক মাস আগ পর্যন্ত যারা জামায়াত-বিএনপির কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত ছিলেন, যারা এই ওয়াশিংটন ডিসিতে বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের অভ্যর্থনা জানিয়েছেন, তারাও এখন বঙ্গবন্ধুর দরদী সেজেছেন এবং এ অনুষ্ঠানে বক্তব্য রেখেছেন।”
এক পর্যায়ে পরিস্থিতি সামল দিতে রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ জিয়াউদ্দিন পুলিশ ডাকতে বাধ্য হন। কূটনৈতিক এলাকায় সার্বক্ষণিক টহলে থাকা পুলিশ অনুষ্ঠানস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয়।
ওয়াশিংটন মেট্রো আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা শিব্বির আহমেদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “যারা কখনোই আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে ছিলেন না, তেমন কয়েকজনকে নিয়ে সম্প্রতি ওয়াশিংটনে মহিলা আওয়ামী লীগ এবং যুবলীগের কমিটি গঠনের পর চাপা উত্তেজনা চলছিল। দূতাবাসের অনুষ্ঠানে তারই বহিঃপ্রকাশ ঘটল।”
এ অনুষ্ঠান শুরু হয় বঙ্গবন্ধুর জীবন ও কর্ম নিয়ে একটি প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শনের মধ্য দিয়ে। উপস্থিত সবার বুকেই ছিল শোকের কালো ব্যাজ।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক আনিস আহমেদ অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধুর ওপর লেখা একটি প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। এরপর ভয়েস অব আমেরিকার সাংবাদিক সরকার কবীরুদ্দিন বঙ্গবন্ধুর ওপর একটি কবিতা আবৃত্তি করেন।
নিউ ইয়র্কে শোক দিবস
আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য নূহ-উল-আলম লেনিন এ অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে বলেন, “একাত্তরের পরাজিত শত্রুরা জাতির পিতাকে নৃশংসভাবে হত্যার মাধ্যমে বাঙালি জাতিরাষ্ট্রের চারটি মূল স্তম্ভকে বদলে ফেলতে চেয়েছিল। পাকিস্তানি ধ্যান-ধারণায় ফিরে যেতে চেয়েছিল। তাই তারা মার্শাল ল’ জারি করে অবৈধ পন্থায় সংবিধান সংশোধন করে, যা ছিল বেআইনি ও সংবিধানপরিপন্থি।”
তিনি বলেন, “আওয়ামী লীগ বিশাল বিজয়ের মাধ্যমে ২০০৯ সালে ক্ষমতায় এসে সংবিধানে থাকা এসব অবৈধ পরিবর্তন বাতিল করে। জাতির পিতার নেতৃত্বে ১৯৭২ সালের সংবিধান অনুযায়ী রাষ্ট্র পরিচালনার চার মূলনীতি পুনঃপ্রবর্তন করে। এর মধ্য দিয়ে সেই অপশক্তি আবার পরাজিত হয়েছে।”
অনুষ্ঠানে ১৯৭৪ সালে জাতিসংঘে বঙ্গবন্ধুর দেওয়া ভাষণের ভিডিও দেখানো হয়। ওই বছরই বাংলাদেশ জাতিসংঘের সদস্যপদ পেয়েছিল।
অন্যদের মধ্যে জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রদূত ড. মোমেন ও লেখক বেলাল বেগ অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন।