'দুর্নীতিবাজ, হত্যাকারীদের' সঙ্গে কিসের আলোচনা, প্রশ্ন প্রধানমন্ত্রীর

“আবার মানবাধিকারের কথাও বলে- এটা কেমন ধরনের কথা, সেটাই আমি জিজ্ঞেস করি,” বলেন তিনি।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 Nov 2022, 02:52 PM
Updated : 26 Nov 2022, 02:52 PM

দেশে গণতন্ত্র থাকার কারণে যাদের ইচ্ছে আছে তারা নির্বাচন করবে মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেছেন, আর যাদের নির্বাচন করার শক্তি নেই তারা ‘হয়ত করবে না’। তবে দেশের মানুষ নির্বাচন করবে, ভোটও দেবে।

শনিবার বিকালে ঢাকায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বাংলাদেশ মহিলা আওয়ামী লীগ এর ত্রিবার্ষিক সম্মেলন ২০২২ এর অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখছিলেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, “অনেকেই বলেন ডায়লগ করতে হবে, আলোচনা করতে হবে। কাদের সাথে? ওই বিএনপি খালেদা জিয়া, তারেক জিয়া। সাজাপ্রাপ্ত আসামি। যারা গ্রেনেড হামলা করে আমাকে হত্যার চেষ্টা করেছে। যে খালেদা জিয়া বক্তৃতা দিয়েছিল- শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী তো দূরের কথা বিরোধী দলের নেতাও কোনদিন হবে না, হতে পারবে না। আর আওয়ামী লীগ, ১০০ বছরেও ক্ষমতায় যাবে না।

“আল্লাহতাআলা এই ধরনের গর্বভরা কথা পছন্দ করে না” মন্তব্য করে তিনি বলেন, “আর বাংলাদেশের মানুষ তো একেবারেই পছন্দ করে না। সেজন্য খালেদা জিয়ার মুখের কথা তার বেলায়ই লেগে গেছে।”

বিএনপির ভোট চুরির সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন, “এখন ওই দুর্নীতিবাজ, সাজাপ্রাপ্ত, এতিমের অর্থ আত্মসাৎকারী আর অর্থ পাচারকারী, অস্ত্র পাচারকারী, গ্রেনেড হামলাকারী, আইভি রহমানের হত্যাকারী আর তার…জিয়াউর রহমান ছিল আমার বাবার হত্যাকারী। এদের সাথে ডায়লগ করতে হবে, আলোচনা করতে হবে।

“আবার মানবাধিকারের কথাও বলে- এটা কেমন ধরনের কথা সেটাই আমি জিজ্ঞেস করি।”

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ভোট চুরির কারণে তাকে দেশের মানুষ টেনে নামিয়েছিল উল্লেখ করে ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনের প্রসঙ্গ বক্তব্যে তুলে ধরেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।

মহিলা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, “ভোটের অধিকার সকলের। যেকোনো নির্বাচনে আমাদের মহিলারা শান্তিপূর্ণভাবে ভোট দেবে। তার গণতান্ত্রিক অধিকার, সাংবিধানিক অধিকার প্রয়োগ করবে।

“আর নির্বাচনে স্থানীয় সরকারে ২০ পারসেন্ট কোটা আছে। ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা পরিষদ, জেলা পরিষদ সব জায়গায় মেয়েদের কোটা রাখা আছে। সেখানে আমাদের মেয়েরা সরাসরি নির্বাচনও করতে পারে কোটার ভিত্তিতেও করতে পারে। সেই সুযোগটা আমরা করে দিয়েছি।”

সন্তানকে সঠিক পথে পরিচালিত করতে মায়ের ভূমিকার কথা মনে করিয়ে দিয়ে সন্তান যেন জঙ্গিবাদ, মাদক ও সন্ত্রাসের সঙ্গে না জড়িয়ে পড়ে সেজন্য মায়েদের সজাগ থাকার আহ্বান জানান সরকারপ্রধান।

ছেলে মেয়ের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক থাকলে তারা কখনও বিপথ যাবে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, ছেলে মেয়ে যেন নিজের মনের কথা মায়ের কাছে খোলা মনে বলতে পারে সেই ধরনের সম্পর্ক গড়ে তুলতে হবে। তারা কখন, কোথায় যাচ্ছে, কার সঙ্গে মেশে, কী করে সেই দিকেও নজর রাখতে হবে।

নারীদের কল্যাণে আওয়ামী লীগ সরকারের নেওয়া নানা পদক্ষেপের কথা তুলে ধরার পাশাপাশি বাংলাদেশে নারীর ক্ষমতায়ন আন্তর্জাতিকভাবেও স্বীকৃতি পেয়েছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “গ্লোবাল জেন্ডার গ্যাপ রিপোর্ট ২০২১ অনুযায়ী বিশ্বের জেন্ডার বৈষম্যসূচকে ১৫৩টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থা এখন ৬৫। আর দক্ষিণ এশিয়ায় আমরা কিন্তু এক নম্বরে আছি। যার জন্য নারী উন্নয়ন এবং জেন্ডার বৈষম্য আমরা দূর করতে সক্ষম হয়েছি।”

সমাবেশে করোনাভাইরাস মহামারীর জন্য বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দা এবং রাশিয়া-ইউক্রেইন যুদ্ধের ফলে নিধেধাজ্ঞার কারণে প্রত্যেকটা জিনিসের দাম ও পরিবহন খরচ বেড়ে যাওয়ার কথাও তুলে ধরে অর্থনীতি গতিশীল রাখতে তার সরকারের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপ তুলে ধরেন তিনি।

বিশ্বব্যাপী খাদ্যমন্দা দেখা দেওয়ার কথা তুলে ধরে দেশের খাদ্য উৎপাদন বাড়াতে ‘এক ইঞ্চি জমিও যেন অনাবাদি না থাকে’ আবারও সেই নির্দেশনা দিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, “অনেক দেশে দুর্ভিক্ষ দেখা দিয়েছে। আমাদের দেশে যেন এটা না হয়।”

জাতির পিতা মাটি ও মানুষ গড়তে চেয়েছিলেন উল্লেখ করে সেভাবেই দেশ গড়ার কথা জানিয়ে শেখ হাসিনা অনুরোধ করে বলেন, “প্রত্যেকেই যে যা পারেন কিছু উৎপাদন করেন। সেটা আমাদের জন্য কল্যাণকর হবে।”

তিনি বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতা দিয়ে গেছেন এবং তিনি দেশকে উন্নত, সমৃদ্ধ করতে চেয়েছিলেন। তাকে নির্মমভাবে হত্যার পর দেশে খুনি ও যুদ্ধাপরাধীরা রাজত্ব করেছিল। আওয়ামী লীগই একমাত্র এদেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছে।

“পরপর আমরা তিনবার ক্ষমতায় এসেছি। আজকে গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত আছে বলেই বাংলাদেশ আজ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছে, বিশ্বে মর্যাদা পেয়েছে,” বলেন তিনি।

নারী পুরুষ সম্মিলিতভাবে বাংলাদেশের এ অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখার আহ্বান জানান তিনি।

নারীদের দায়িত্বের কথা মনে করিয়ে দিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, “আপনারাও রাজনৈতিকভাবে, সামাজিকভাবে, সাংস্কৃতিকভাবে আপনারা আপনাদের অধিকার নিয়ে কাজ করবেন। দেশের উন্নয়নে অবদান রাখবেন।”              

সমাবেশে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বক্তব্য রাখেন।