অবিলম্বে নতুন নির্বাচন দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
Published : 12 Mar 2024, 02:52 PM
‘সরকারি দলের লোকজনের হাতাহাতি-মারামারিতে’ সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে ‘জালিয়াতির তামাশা’ হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
ফলাফল প্রত্যাখান করে অবিলম্বে নতুন করে ওই নির্বাচন দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন তিনি।
মঙ্গলবার রাজধানীর নয়া পল্টনে এক সংবাদ সম্মেলনে রিজভী বলেন, “আমরা সবসময় বলে আসছি যে, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও তাদের ছত্রছায়ায় দেশের কোথাও কোনো অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্ভব নয়। তারা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে না। সর্বশেষ প্রমাণিত হল সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনেও।
“এটা নির্বাচন নয়, সরকার ও সরকারি দলের সংঘাত, মারামারি, জালিয়াতির তামাশা হয়েছে। বিএনপির পক্ষ থেকে আমি দৃঢ় কণ্ঠে বলতে চাই, ৬ ও ৭ মার্চ সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনের ফলাফল প্রত্যাখান করছি এবং অবিলম্বে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির তথাকথিত নির্বাচনী ফলাফল বাতিল করে নির্বাচনের নতুন তারিখ ঘোষণা করতে হবে।”
ভোট গণনার সময় মারামারির ঘটনায় গ্রেপ্তার ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল, ব্যারিস্টার ওসমান চৌধুরীসহ বিএনপি সমর্থক আইনজীবীদের অবিলম্বে মুক্তি দেওয়ারও দাবি জানান রিজভী।
গত বুধ ও বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্ট বার নির্বাচনের ভোটগ্রহণ হয়। সম্পাদক পদের স্বতন্ত্র প্রার্থী নাহিদ সুলতানা যুথী রাতেই ভোট গণনা শেষ করে ফলাফলের দাবি জানান। কিন্তু বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ মনোনীত প্যানেল থেকে সম্পাদক পদপ্রার্থী শাহ মঞ্জুরুল হকসহ অন্যরা শুক্রবার বিকালে ভোট গণনার দাবি জানান।
এ নিয়ে বাগবিতণ্ডার এক পর্যায়ে দুই পক্ষ হট্টগোল এবং হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়ে। সে সময় সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল আবু সাইদ একটি পক্ষের হাতে মারধরের শিকার হন। এমন বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির পর থেকেই থেমে যায় ভোট গণনা ও ফলাফল। পরে ওই ফলাফল ঘোষণা করা হয় শনিবার রাতে।
তাতে সভাপতি নির্বাচিত হন বিএনপি নেতৃত্বাধীন জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ঐক্য প্যানেলের (নীল প্যানেল) প্রার্থী এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন। সম্পাদক হন আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের (সাদা প্যানেল) প্রার্থী আইনজীবী শাহ মঞ্জুরুল হক।
সমিতির পরিচালনা পর্ষদের ১৪টি পদের মধ্যে সভাপতি এবং তিনটি সদস্য পদে বিএনপি সমর্থক নীল প্যানেলের জয় হয়। আর আওয়ামী লীগ সমর্থক সাদা প্যানেল পায় সহ সভাপতি, সম্পাদক, কোষাধ্যক্ষসহ দশটি পদ।
ভোট গণনার সময় হট্টগোল ও হাতাহাতির মামলায় নীল প্যানেলের সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী রুহুল কুদ্দুস কাজলসহ সাতজনকে গ্রেপ্তার করে রিমান্ডে নেয় পুলিশ।
সরকারের সমালোচনা করে রিজভী বলেন, “রাষ্ট্রক্ষমতা দখলে রাখতে আওয়ামী লীগ যে সকল কূটকৌশল অবলম্বন করছে, তার সব কিছুই তারা সদ্য সমাপ্ত সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি নির্বাচনে প্রয়োগ করেছে।”
সরকার রাজনীতিকে ‘উপসংহারহীন পরিস্থিতির দিকে ঠেলে নিয়ে’ যাচ্ছে মন্তব্য করে রিজভী বলেন, “হাঙ্গামা, সংঘর্ষ, অস্ত্রের মুখে যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশের স্ত্রী স্বতন্ত্র প্রার্থী নাহিদ সুলতানা যুথীকে সম্পাদক পদে নির্বাচিত ঘোষণা, পরে আবার শেখ হাসিনা ও মেয়র তাপসের প্রার্থীকে সম্পাদক পদে বিজয়ী ঘোষণার মাধ্যমে দেশের সর্বোচ্চ আইনাঙ্গনের আইনজীবীদের মর্যাদা ধুলোয় লুটিয়ে দিয়েছে।“
এই ভোট নিয়ে রিজভীর ভাষ্য, “ভোট জালিয়াতি ও নিজেদের অপকর্মের ঘটনা থেকে মানুষের দৃষ্টি নীল প্যানেলের সম্পাদক প্রার্থী ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজলকে সম্পূর্ণ পূর্বপরিকল্পিত মিথ্যা সাজানো মামলায় গ্রেপ্তার করে রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে।
“ভোটে যার সেক্রেটারি নির্বাচিত হওয়ার কথা তাকে পোরা হয়েছে জেলে! আর যার নিশ্চিত পরাজিত হওয়ার কথা তাকে শেখ হাসিনার নির্দেশে বসানো হয়েছে সম্পাদকের চেয়ারে। ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজলকে যে মামলায় আটক করা হয়েছে সেই মামলায় এক নম্বর আসামি যুথীকে গ্রেপ্তারতো দূরের কথা তার নাম নিতেও ভয় পাচ্ছে পুলিশ।”
রিজভী বলেন, “পরশ-তাপস দুই ভাইয়ের মারামারি এবং পারিবারিক ক্ষমতার দ্বন্দ্ব সামাল দিতে এবং সম্পাদক পদ দখলের জন্য কারারুদ্ধ করা হয়েছে কাজলকে।”
সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী অ্যাডভোকেট জয়নাল আবেদীন, অ্যাডভোকেট নিতাই রায় চৌধুরী, ব্যারিস্টার বদরুদ্দোজা বাদল, ব্যারিস্টার কায়সার কামাল, অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম সজল, অ্যাডভোকেট আবদুল জাব্বার ভুঁইয়াসহ আইনজীবীরা সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন:
সুপ্রিম কোর্ট বারের সভাপতি খোকন, সম্পাদক মঞ্জুরুল
সুপ্রিম কোর্ট বার নির্বাচনে হট্টগোল: রুহুল কুদ্দুস কাজল ৪ দিনের রিমান্ডে