Published : 10 Mar 2024, 05:47 PM
সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে ভোট গণনার সময় হট্টগোল ও হাতাহাতির মামলায় বিএনপি-জামায়াতপন্থি নীল প্যানেলের সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী রুহুল কুদ্দুস কাজলকে ৪ দিনের রিমান্ডে পেয়েছে পুলিশ।
রোববার বিকালে শুনানি শেষে এ আদেশ দেন ঢাকা মহানগর হাকিম মোহাম্মদ নুরুল হুদা চৌধুরী।
এদিন কাজলকে আদালতে হাজির করে ৭ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন তদন্ত কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের পরিদর্শক আবুল কালাম আজাদ। আসামিপক্ষ থেকে করা হয় জামিন আবেদন।
শুনানিতে কাজলের প্রধান আইনজীবী মাসুদ আহমেদ তালুকদার বলেন, “রুহুল কুদ্দুস কাজল সুপ্রিম কোর্ট বারের তিনবারের নির্বাচিত সম্পাদক, বাংলাদেশ বার কাউন্সিল কমিটির নির্বাচিত সদস্য; এ ছাড়া বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য। বিএনপির আইনজীবী ফোরামের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব। ২০০৪ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত লন্ডনে অবস্থিত বাংলাদেশি দূতাবাসে ফার্স্ট সেক্রেটারি হিসাবে কূটনৈতিক দায়িত্ব পালন করেন।
“তার বিরুদ্ধে মামলার একটি ধারাও প্রযোজ্য হয় না। ভিডিও ফুটেজ দেখলেই পুলিশ তা নিশ্চিত হতে পারবে। তিনি মারধরের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না। তিনি ফলাফল ঘোষণার সময় উপস্থিত থাকবেন, এটা স্বাভাবিক। তিনি সেখানে অবৈধ অনুপ্রবেশ করেননি। তিনি কাউকে হত্যার উদ্দেশ্যে মারধর তো দূরের কথা, কারোর গায়ে হাতও দেননি। ঘটনা ঘটিয়েছে অ্যাডভোকেট যূথীর (নাহিদ সুলতানা যুথী) বহিরাগত লোকজন।”
আদালত পুলিশের সাধারণ নিবন্ধন কর্মকর্তা এস আই নিজাম উদ্দিন ফকির এ বক্তব্যের বিরোধিতা করেন।
আসামির পক্ষে শুনানিতে অংশ নেন গোলাম মোস্তফা খান, মোসলেহ উদ্দীন জসীম, আবুল কালাম খান, নূরুজ্জামান তপনসহ আরো কয়েকজন আইনজীবী। প্রায় দুইশত আইনজীবী কাজলের পক্ষে এ সময় এজলাসে উপস্থিত ছিলেন।
শনিবার বিকালে রাজধানীর তোপখানা রোডের চেম্বার থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময় কাজলকে গ্রেপ্তার করা হয়।
ভোট গণনাকে কেন্দ্র করে হট্টগোল ও হাতাহাতির ঘটনায় নির্বাচন সাব কমিটির কো-অপ্ট সদস্য সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল মো. সাইফুর রহমান সিদ্দিকী সাইফ শুক্রবার রাতে ওই মামলাটি করেন, যাতে হত্যাচেষ্টার অভিযোগ আনা হয়েছে।
২০ জনের নামে করা ওই মামলার এক নম্বর আসামি সম্পাদক পদের স্বতন্ত্র প্রার্থী নাহিদ সুলতানা যুথী। তিনি যুবলীগ চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশের স্ত্রী। আর রুহুল কুদ্দুস কাজলকে মামলায় দুই নম্বর আসামি করা হয়েছে।
এজাহারভুক্ত অন্য আসামিদের মধ্যে আছেন- মো. জাকির হোসেন ওরফে মাসুদ, শাকিলা রৌশন, কাজী বশির আহম্মেদ, চৌধুরী মৌসুমী ফাতেমা (কবিতা), সাইদুর রহমান জুয়েল, যুবলীগ নেতা জয়দেব নন্দী, মাইন উদ্দিন রানা, মশিউর রহমান সুমন, কামাল হোসেন, আসলাম রাইয়ান।
অজ্ঞাতপরিচয় আরো ৩০ থেকে ৪০ জনকে মামলায় আসামি করা হয়েছে।
এ মামলার পাঁচ আসামি আইনজীবী কাজী বশির আহমেদ, তুষার, তরিকুল, এনামুল হক সুমন ও ওসমান চৌধুরীকে শনিবার তিন দিনের রিমান্ডে পায় পুলিশ।
সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির ২০২৪-২৫ সালের নির্বাচনের ভোটগ্রহণ হয় বুধ ও বৃহস্পতিবার। ৭ হাজার ৮৮৩ জন আইনজীবীর মধ্যে ৫ হাজার ৩১৯ জন ভোট দেন। ঝামেলা বাধে ভোট গণনা নিয়ে।
আইনজীবীরা বলছেন, বৃহস্পতিবার ভোটগ্রহণ শেষে সম্পাদক পদের স্বতন্ত্র প্রার্থী নাহিদ সুলতানা যুথী রাতেই ভোট গণনা শেষ করে ফলাফলের দাবি জানান।
কিন্তু বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ মনোনীত প্যানেল থেকে সম্পাদক পদপ্রার্থী শাহ মঞ্জুরুল হকসহ অন্যরা শুক্রবার বিকালে ভোট গণনার দাবি জানান।
এ নিয়ে বাগবিতণ্ডার এক পর্যায়ে দুই পক্ষ হট্টগোল এবং হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়ে। সে সময় সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল আবু সাইদ একটি পক্ষের হাতে মারধরের শিকার হন। এমন বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির পর থেকেই থেমে যায় ভোট গণনা ও ফলাফল।
এরপর কড়া নিরাপত্তার মধ্যে শনিবার বেলা পৌনে ৩টায় আবার ভোট গণনা শুরু হয়, যা শেষ রাত সাড়ে ১০টার দিকে। সব হিসাব-নিকাশ শেষে রাত দেড়টার দিকে ফলাফল ঘোষণা শেষ হয়।
তাতে সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন বিএনপি নেতৃত্বাধীন জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ঐক্য প্যানেলের (নীল প্যানেল) এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন। সম্পাদক হয়েছেন আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের (সাদা প্যানেল) প্রার্থী আইনজীবী শাহ মঞ্জুরুল হক।
আরও পড়ুন
সুপ্রিম কোর্ট বারের সভাপতি খোকন, সম্পাদক মঞ্জুরুল
সুপ্রিম কোর্ট বার নির্বাচনে হট্টগোল: রুহুল কুদ্দুস কাজল গ্রেপ্তার
সুপ্রিম কোর্ট বার নির্বাচনে হট্টগোল: গ্রেপ্তার ৫ আইনজীবী রিমান্ডে
সুপ্রিম কোর্ট বার নির্বাচনে হট্টগোল: ২০ জনের নামে মামলা, গ্রেপ্তার ৫