বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে নতুন অর্থবছরে ছয় চ্যালেঞ্জের কথা তুলে ধরেছেন বিরোধী দলীয় নেতা।
Published : 25 Jun 2023, 09:18 PM
খাদ্য, জ্বালানি ও পরিবহন ভাড়া থেকে শুরু করে ইউটিলিটি বিল পর্যন্ত প্রায় সব কিছুরই উচ্চমূল্যে সাধারণ মানুষ যে ‘হিমশিম খাচ্ছে’, সে কথা মনে করিয়ে দিয়ে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সরকারের কার্যকর উদ্যোগ চেয়েছেন সংসদে বিরোধী দলীয় নেতা রওশন এরশাদ।
প্রস্তাবিত ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে রোববার তিনি বলেন, নতুন নতুন কর্মসংস্থানের বদলে কর্মহীনের সংখ্যা বাড়ছে, রাজস্ব আদায় বাড়ানো না গেলে এসব চ্যালেঞ্জ উৎরানো সম্ভব হবে না।
“রাজস্ব খাতে সংস্কারের পাশাপাশি সামষ্টিক অর্থনীতিতে বিশেষ করে ব্যালান্স অব পেমেন্ট, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়ানো, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সরকারকে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণের আহ্বান জানাচ্ছি।”
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল গত ১ জুন জাতীয় সংসদে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য সাত লাখ ৬১ হাজার কোটি টাকার এই বাজেট উত্থাপন করেন।
এবার রাজস্ব খাতে আয় ধরা হয়েছে ৫ লাখ ৩ হাজার ৯০০ কোটি টাকা। তাতে ঘাটতি থাকছে ২ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা, যা জিডিপির ৫.২ শতাংশের মত।
রওশন এরশাদ বলেন, “এই বাজেট একদিকে সম্প্রসারণমূলক বাজেট, আরেক দিকে বিশাল ঘাটতির বাজেট। চলতি অর্থ বছরে বাজেট বাস্তবায়নের অবস্থা ভালো নয়। আগামী অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ। এই জিডিপি অর্জন কঠিন হবে।”
মূল্যস্ফীতি ৬ শতাংশে নামিয়ে আনার লক্ষ্য পূরণও যে ‘বড় চ্যালেঞ্জ’ হবে, সে কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, “রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে দেশের অর্থনীতির গতি শ্লথ হয়েছে। রিজার্ভে টান পড়েছে। রপ্তানি আয় বাড়ানোর চেষ্টা করতে হবে।”
তিনি বলেন, “এবারের বাজেট এমন এক সময় হয়েছে যখন নানামুখী চ্যালেঞ্জ ও সমস্যায় বিশ্ব অর্থনীতি। … বাংলাদেশের অর্থনীতিতে বর্তমানে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাড়িয়েছে উচ্চমাত্রার মূল্যস্ফীতি। বর্তমানে মূল্যস্ফীতি গত একযুগে সর্বোচ্চ।
“মূল্যস্ফীতি ঠিকমত নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে অন্যান্য অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের ওর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সরকারের আশু হস্তক্ষেপ এখনই কামনা করছি।”
জাতীয় পার্টির প্রধান পৃষ্ঠপোষক রওশন মনে করেন, আগামী অর্থ বছরে ছয়টি প্রধান চ্যালেঞ্জ রয়েছে। এগুলো হল মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আনা এবং অভ্যন্তরীণ বিনিয়োগ বৃদ্ধি করা; গ্যাস, বিদ্যুৎ ও সারে ভর্তুকির জন্য অর্থের সংস্থান করা; বৈদেশিক সহায়তার অর্থ ব্যবহার এবং সরকারের উচ্চ-অগ্রাধিকার প্রকল্পগুলো নির্ধারিত সময়ের মধ্যে শেষ করা; শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতের প্রকল্প যথাসময়ে বাস্তবায়ন; ভ্যাট সংগ্রহের লক্ষ্য পূরণ এবং ব্যক্তি আয়করদাতার সংখ্যা বাড়ানো; এবং টাকার বিনিময় হার স্থিতিশীল ও বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সন্তোষজনক পর্যায়ে রাখা।
সরকারকে এ চ্যালেঞ্জগুলো গুরুত্ব সহকারে দেখার পরামর্শ দেন বিরোধী দলীয় নেতা।
সাধারণ মানুষ দিশেহারা: জিএম কাদের
প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে বিরোধী দলীয় উপনেতা জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের বলেন, নিত্য প্রয়োজনীয় অনেক পণ্যের দাম বেড়ে গেছে। ডলারের দাম বেড়েছে। সব জিনিসের দাম লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে।
“কিছু ভুল সিদ্ধান্তের কারণে সার্বিক সামষ্টিক অর্থনীতি দুর্বল হয়ে পড়েছে।”
তিনি বলেন, মুডিস বাংলাদেশের ঋণ মান কমিয়ে দেওয়ায় বাংলাদেশের জন্য বৈদেশিক ঋণ আহরণ কঠিন হয়ে গেছে। টাকা ছাপিয়ে অর্থায়ন করতে হচ্ছে।
“এতে মুদ্রাস্ফীতির ওপর চাপ বাড়বে। এখনই জনগণ দিশেহারা। সামনে চাপ আরো বাড়বে।”
টিআইএন প্রয়োজন এমন সেবা নিতে হলে আয় না থাকলেও ২ হাজার টাকা রিটার্ন দিতে হবে, এমন বিধানের সমালোচনা করে জিএম কাদের বলেন, “একদিকে এই কর চাপানো, অন্যদিকে ধনীদের সারচার্জের সীমা বাড়িয়ে ধনীদের রিলিফ আয় গরিবদের অত্যাচার করা হল।”