ওবায়দুল কাদেরের ভাষায়, বিএনপি আবার ক্ষমতায় এলে গণতন্ত্রের ‘বস্ত্রহানী’ ঘটবে।
Published : 11 Jan 2023, 03:55 PM
বিএনপির নেতৃত্বে ‘যুগপৎ আন্দোলন’সহ সকল কর্মসূচি ‘ব্যর্থ হয়েছে’ দাবি করে আওয়ামী লীগ নেতারা বলেছেন, বিরোধী কোনো শক্তি মাথাচাড়া উঠলে তা ‘কঠোরভাবে দমন’ করা হবে।
বুধবার বিএনপির গণঅবস্থান কর্মসূচি চলাকালে বঙ্গবন্ধু এভিনিউসহ ঢাকার বিভিন্ন পয়েন্টে সমাবেশ করে এমন হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন ক্ষমতাসীন দলের নেতারা।
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সমাবেশে দলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপির আন্দোলন ‘ভুয়া’।
“আজকে খবর জানেন? পল্টনে মোটামুটি একটা সমাবেশ হয়েছে। ১২ দলীয় জোট দেখলাম বিজয় নগরে সমাবেশ করছে, সব মিলিয়ে ২৪ দল। ৭ দলীয় জোট প্রেসক্লাবের সামনে চেয়ার পেতে বসে আছে, মঞ্চে ২০ জন, সামনে সাংবাদিকসহ আরও ১৫ জন। ১টা পর্যন্ত ৩ দল উপস্থিত ছিল, চার দল নাই। ৭ দলীয় ঐক্যজোট, তার পর সমমনা ১২ দল, বিএনপির সমমনারা দেখলাম ওই এলাকা (পল্টন) জুড়েই আছে।
“তারা বসে আছে ফুটপাতের উপর, মঞ্চও সেখানে, শ্রোতাও সেখানে, সবাই ফুটপাতকেন্দ্রিক। তার পরে এলডিপি দেখলাম, সেই দৃশ্যপট, কয়েকজন হাতে গোণা বসে আছে। ৫৪ দল আজকে একজন শেখ হাসিনার বিরেুদ্ধে। কী হবে? ঘোড়ার ডিম পাড়বে। ৫৪টা ঘোড়ার ডিম পাড়বে, ৫৪টি ঘোড়ার ডিম পাড়বে ৫৪টি বিরোধী রাজনৈতিক দল। ভুয়া... ভুয়া... ভুয়া... এটা গরুর হাট।”
বিএনপিকে বাংলার মাটিতে আর ক্ষমতায় আসতে দেওয়া যাবে না মন্তব্য করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, “রাষ্ট্রকে মেরামত করবে? রাষ্ট্রকে আবার ক্ষমতা পেলে তারা ধ্বংস করবে। এই দেশের গণতন্ত্র বাঁচবে না, তারা ক্ষমতায় এলে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাঁচবে না। তারা ক্ষমতায় এলে স্বাধীনতার আদর্শ বাঁচবে না। তারা ক্ষমতায় এলে গণতন্ত্রের বস্ত্রহানী ঘটবে। এই অপশক্তি জঙ্গিবাদের পৃষ্ঠপোষক, সাম্প্রদায়িকতার পৃষ্ঠপোষক।
“বিএনপি নামক এই অপশক্তিকে বাংলার মাটিতে... এদের হাতে ক্ষমতা আমরা তুলে দিতে পারি না। বাংলাদেশের জনগণ শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ। কী দেখাবেন আপনারা? মুখে মিথ্যাচার আর বিষোদ্গার। আপনাদের নেই মেট্রোরেল, নেই পদ্মাসেতু, নেই বঙ্গবন্ধু টানেল, নেই উড়াল সেতু, নেই আন্ডার পাস, নেই এক দিনে শত সেতু। কে এসব করেছে? শেখ হাসিনা।”
আওয়ামী লীগের এ কর্মসূচির খবর সংবাদমাধ্যমে প্রকাশের ক্ষেত্রে সাংবাদিকদের ভূমিকারও সমালোচনা করেন সরকারের সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
তিনি বলেন, “আমাদের ঢাকা মহানগর দক্ষিণ এবং উত্তর বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভা করছে। আমি কোনো কোনো অনলাইনে দেখলাম যে পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি দিয়েছে আওয়ামী লীগ। পাল্টাপাল্টি কেন? ১০ জানুয়ারি তো বিএনপির হৃদয়েও নেই চেতনাতেও নেই। ১০ জানুয়ারি তারা করেনি।
“গতকাল আমাদের কেন্দ্র করেছে, আজকে মহানগর এবং অন্যান্য সংগঠন করছে। এটা আমাদের কর্মসূচি, এখানে পাল্টাপাল্টির কোনো বিষয় নেই। কার সাথে পাল্টাপাল্টি করব। কিসের পাল্টাপাল্টি করব? ১০ ডিসেম্বর তো এই নগরীতে বিজয় মিছিল হবে। ১০ জানুয়ারি তো এমনও কথা ছিল তারেক রহমান এসে নেতৃত্ব দেবেন। ১০ ডিসেম্বর এমনও কথা ছিল বেগম জিয়া জেল থেকে এসে বিজয় মিছিলের নেতৃত্ব দেবেন, সরকারের পতন অনিবার্য। কী হল? ১০ ডিসেম্বর ভুয়া, ৩০ ডিসেম্বর ভুয়া।”
আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের সমাবেশে দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বলেন, “যারা স্বাধীনতাকে নিয়ে, শেখ হাসিনার উন্নয়নকে নিয়ে ষড়যন্ত্র করবে, তাদেরকে রাজপথে দাঁত ভাঙা জবাব দেওয়া হবে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জনগণের ভোটের মাধ্যমে পঞ্চমবারের মত শেখ হাসিনাকে আবারও প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নির্বাচিত করব।”
সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কামরুল ইসলাম বলেন, “সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সৃষ্টি করতে চেষ্টা করছে বিএনপি। তারা অনির্বাচিত সরকার চায়। তাদের প্রতিহত করা হবে।”
সভাপতিমণ্ডলীর আরেক সদস্য আব্দুর রহমান বলেন, “বাংলাদেশে কোনো অপশক্তির জায়গা হবে না। বিএনপির সঙ্গে দেশের জনগণ নেই, তাদেরকে প্রত্যাখান করেছে। বিএনপি হল সাম্প্রদায়িক অপশক্তি।”
বিএনপি নতুন করে আবার দেশে বিশৃঙ্খলা করার ষড়যন্ত্র করছে মন্তব্য করে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ বলেন, “কোনো বিরোধী শক্তি বাংলাদেশে আর মাথাচাড়া দিয়ে ওঠতে পারবে না। কেউ মাথা চাড়া দিয়ে উঠলে আমরা তাদেরকে কঠোরভাবে দমন করব।
“বিএনপির লজ্জা থাকা উচিত, তারা কী করে আবার গণতন্ত্রের কথা বলে। এই স্বাধীন দেশে বিএনপি হল সাম্প্রদায়িক দল। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এখন বাংলাদেশ ঘুরে দাঁড়িয়েছে। এখন আবার বিএনপি ষড়যন্ত্র শুরু করছে।”
যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক দীপু মনি বলেন, “আজকে বাংলাদেশের যে অগ্রযাত্রা, সেই অগ্রযাত্রায় সারা বিশ্বে যখন প্রশংসায় পঞ্চমুখ, তখনই এ দেশে যারা স্বাধীনতার বিরোধিতা করেছেন, যারা যুদ্ধাপরাধীদের দোসর, যারা ২০১৩-১৪-১৫ সালে অগ্নি সন্ত্রাস করেছে, মানুষ হত্যা করেছে, সেই অপশক্তি আবারও মাঠে নেমেছে।
“আসুন আমরা সবাই জাতির পিতার সোনার বাংলার স্বপ্নকে বুকে নিয়ে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এই অগ্রযাত্রাকে অব্যাহত রাখতে অপশক্তিকে প্রতিহত করি। আজকে আমাদের এই প্রত্যায় হোক।”
ঢাকা মহানগর উত্তর যুবলীগের আয়োজনে রাজধানীর ফার্মগেটে বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের সভাপতি মণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক।
তিনি বলেন, “মির্জা ফখরুল সাহেব কারাগার থেকে বের হয়েছেন। তিনি কারাগার থেকে বের হয়ে বলেছেন, সরকারকে পতন না করে ঘরে ফিরবেন না। সরকারের পতন হবে না। কারণ এই সরকার জনগণের সরকার। এই সরকার শান্তির পক্ষের সরকার, এই সরকার উন্নয়নের সরকার। এই সরকারকে পতন ঘটনো যাবে না।
“আপনি (মির্জা ফখরুল) বলুন, যদি এই সরকারের পতন না ঘটাতে পারেন, তাহলে ওই নয়া পল্টনে কান ধরে উঠবস করে রাজনীতি থেকে বিদায় নেবেন। সেই ওয়াদা বাংলার জনগণের কাছে করতে হবে।”
যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দীন নাছিম বলেন, “যারা জাতির পিতাকে হত্যা করতে পারে, যারা জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যা করতে পারে, যারা জেলখানায় জাতীয় চার নেতাকে হত্যা করতে পারে। তারা আর যাই হোক, এ দেশের মঙ্গল কামনা করতে পারে না। ওরা খুনি। তাদেরকে ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিহত করতে হবে।”