“দল থেকে টিকেট দেবে আবার দলই স্বতন্ত্র প্রার্থী দেবে, তাহলে ভোটটা কী হবে? এটা কি কোনো ভোট হবে?”
Published : 27 Nov 2023, 03:56 PM
বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হওয়া ঠেকাতে বিকল্প বা ডামি প্রার্থী রাখার যে পরামর্শ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দিয়েছেন, তাতে সত্যিকার অর্থে ‘নির্বাচন আর হবে না’ বলে মনে করছেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না।
বিএনপি ও সমমনাদের ডাকে ৪৮ ঘণ্টা অবরোধের দ্বিতীয় দিন জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে গণতন্ত্র মঞ্চের এক সংক্ষিপ্ত সমাবেশে তিনি এ কথা বলেন।
মান্না বলেন, “শেখ হাসিনার দল বলছে, সব জায়গায় ডামি প্রার্থী দিতে হবে। ডামি প্রার্থী দেবেন কেন? আবার বলেছেন, স্বতন্ত্রও দাঁড়াবার সুযোগ আছে। সবাই বলছে ব্যাপারটা কী? দল থেকে টিকেট দেবে আবার দলই স্বতন্ত্র প্রার্থী দেবে… তাহলে ভোটটা কী হবে? এটা কি কোনো ভোট হবে? তখন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলছেন, এটা আমাদের একটা কৌশল।”
এভাবে ‘ভোট হবে না’ মন্তব্য করে মান্না বলেন, “আমি আবারও বলি, এদের সব কিছুই কৌশল, অপকৌশল মানে ফোরটোয়েন্টি। ভোট হবে? হবে না। মানুষ ভোট দিতে যাবে? জিজ্ঞাসা করেন, সবাই বলবে না। ক্যাম্পিং করতে পারবেন? কোনো কোনো পার্টি এখনই বলছে যে, কি মুশকিলে পড়ে গেলাম এই জোটে বা এই নির্বাচনে অংশ নেওয়ার পরে এখন তো বাড়ি যাওয়ার পথই বন্ধ হয়ে গেছে… মানুষের ঘৃণা এত তীব্র।“
ক্ষমতাসীনদের উদ্দেশে মান্না বলেন, “আমি একটা বিষয়ে হুঁশিয়ার করতে চাই, ওই অফিসে বসে বসে ফরম ফিলাপ করেন, আমরা তো সেখানে গিয়ে প্রার্থীর ঘাড়ে ধরব না, সেটা আমাদের রাজনীতি নয়। আপনারা গোপনে গোপেন অনলাইনে আপনাদের মনোনয়নপত্র নির্বাচন কমিশনে জমা দেবেন সেটা ঠেকানোর পথ নাই। নির্বাচন কমিশন বলবে, এতোগুলো প্রার্থী আছে, তারপরে কোনো ক্যাম্পেইন নাই, তথাকথিত ভোটের দিনে রেজাল্ট ডিকলার্ড করে দেবেন, এই তো?”
সরকারের পদত্যাগ ও ‘একতরফা’ তফসিল বাতিলের দাবিতে দুপুরে গণতান্ত্রিক বাম ঐক্য, গণফোরাম-পিপলস পার্টি, জাতীয়তাবাদী সমমনা দল, ১২ দলীয় জোট, গণঅধিকার পরিষদ, লেবার পার্টিসহ আরও কয়েকটি দল বিজয় নগর-তোপখানা রোডে মিছিল করে। পরে জাতীয় প্রেসক্লাবের ক্লাবের সামনে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করে তারা।
সমাবেশ থেকে মান্না বলেন, “সারা বিশ্ব বলেছে, একটা অবাধ সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচন চাই, বাংলাদেশের বাচ্চাদের জিজ্ঞাসা করেন, তারা বলছে, ভোটের কোনো নজির নাই, বাংলাদেশের কোন গ্রাম-গ্রামাঞ্চলে ভোটের কোনো রকম নজির আমরা দেখতে পারছি না। শেষবারের মতো অনুরোধ করব, এতেও আবার বিবেক বাধে… তবু আবার বলি, বাঁচতে যদি চান, বন্ধ করে দেন। না হলে জনগণ এটা (নির্বাচন) বন্ধ করে দেবে।“
গণতন্ত্র মঞ্চ গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে ‘অভ্যুত্থান করার জন্য’ সব ধরনের ঝুঁকি নিয়ে রাজপথে থাকবে বলে জানিয়ে দেন মান্না।
বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক সমাবেশে বলেন, “এই নির্বাচনটা একতরফার নির্বাচন হচ্ছে, নীল-নকশার নির্বাচন হচ্ছে, সাজানো নির্বাচন হচ্ছে। নির্বাচনটা অংশগ্রহণমূলক দেখানোর যে চেষ্টা, সেটায় পর্যন্ত এখন তারা যাচ্ছে না। দেউলিয়া নৌকার ভেতরে পানি ঢোকা শুরু করেছে।“
গত দেড় দশক ধরে আওয়ামী লীগ ‘জনগণ ও ভোটের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে রয়েছে’ মন্তব্য করে সাইফুল বলেন, “নির্বাচনের নামে সরকার প্রতিটা আসন নতুন করে ৫ বছরের জন্য বরাদ্ধ দেবে। মানুষের অধিকার নিয়ে এই মশকরা করার সুযোগ কখনোই জনগণ দেবে না।”
চলতি সপ্তাহে আগামী দুই দিন বিএনপি যে কর্মসূচি দেবে, তাতে একাত্মতা জানাতে জনগণের প্রতি আহ্বান জানান সাইফুল হক।
বিএনপি, গণতন্ত্র মঞ্চসহ সমমনা জোটের ডাকা ৪৮ ঘণ্টা অবরোধ কর্মসূচি রোববার ভোর ৬টা থেকে শুরু হয়, যা মঙ্গলবার সকাল ৬টায় শেষ হবে।
সাইফুল হকের সভাপতিত্বে ও বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির রাজনৈতিক পরিষদের সদস্য আকবর খানের সঞ্চালনায় সংক্ষিপ্ত সমাবেশে ভাসানী অধিকার পরিষদের শেখ রফিকুল ইসলাম বাবুল, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, আবুল হাসান রুবেল, জেএসডির শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন, নাগরিক ঐক্যের শহীদুল্লাহ কায়সার, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের দিদারুল ভুঁইয়া, প্রতীম দাশ উপস্থিত ছিলেন।