বিএনপির সঙ্গে জোট বাঁধার কথা নাকচ করে দিয়েছেন রওশন।
Published : 27 Nov 2022, 06:46 PM
দ্বন্দ্ব দূর করতে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের সঙ্গে আলোচনায় বসবেন বলে জানিয়েছেন দলের প্রধান পৃষ্ঠপোষক রওশন এরশাদ।
আগামী নির্বাচনে জাতীয় পার্টি আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোটে যাবে কি না, তা নিশ্চিত না করলেও বিএনপির সঙ্গে জোটের সম্ভাবনা নাকচ করেছেন তিনি।
চিকিৎসার জন্য দীর্ঘদিন বিদেশে থাকা রওশন রোববার দুপুরে দেশে নেমে শাহজালাল বিমানবন্দরের ভিআইপি লাউঞ্জে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন।
দীর্ঘ পাঁচ মাসের চিকিৎসা শেষে থাইল্যান্ড থেকে দেশে ফিরলে বিমানবন্দরে তাকে শুভেচ্ছা জানাতে উপস্থিত হন কাদেরের অনুসারী হিসেবে পরিচিত নেতা এবং দলের কো-চেয়ারম্যান এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার ও শফিকুল ইসলাম সেন্টু। রওশনের রাজনৈতিক উপদেষ্টা গোলাম মসীহসহ অন্য নেতা-কর্মীরাও ছিলেন। জি এম কাদের যাকে বহিষ্কার করেছেন, সেই মশিউর রহমান রাঙ্গাঁও ছিলেন। তবে দলের চেয়ারম্যান জি এম কাদের, মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নুসহ জ্যেষ্ঠ নেতাদের কেউ ছিলেন না।
জি এম কাদেরের সঙ্গে আলোচনায় বসবেন কি না- জানতে চাইলে রওশন বলেন, “আমরা বৈঠক করব, আলোচনা করব।”
কাদের কেন বিমানবন্দরে আসেননি- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “অসুবিধা আছে, তাই আসেনি।”
আগামী জাতীয় নির্বাচন এককভাবে করবেন কি না- এ প্রশ্নের জবাবে বিরোধীদলীয় নেতা রওশন বলেন, “সেটা সময় বলে দেবে।”
এর আগে সাংবাদিকদের সামনে লিখিত বক্তব্য পড়েন রওশন। তিনি বলেন, “আমার সুস্থতা কামনায় দোয়া করার জন্য পার্টির নেতাকর্মী এবং দেশবাসীকে ধন্যবাদ জানাই। ব্যাংককে আমার চিকিৎসার সময় সহযোগিতা এবং স্বাস্থ্যের খোঁজ-খবর নেওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানাই। আমি থাইল্যান্ডে বাংলাদেশ দূতাবাসকেও ধন্যবাদ জানাই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন সময় সহায়তা ও সহযোগিতার জন্য।”
লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, “আগেও বলেছি, আজও বলছি- আমি সবসময়ই জাতীয় পার্টির ঐক্য চাই। আমি আবারো বলছি, পার্টিকে বিভক্ত করার প্রশ্নই উঠে না। আমি ঢাকায় ফিরে এসেছি, আমি পার্টির সব এমপি, প্রেসিডিয়াম এবং অন্যান্যদের সঙ্গে যে কোনো বিভ্রান্তি ও ভুল বোঝাবুঝি দূর করতে বসবো।
“আমি নিশ্চিত, সেই ভুল বোঝাবুঝি দূর করে ঐক্যবদ্ধভাবে শিগগিরই রাজনৈতিক কর্মসূচিতে ফিরতে পারবো, ইনশাআল্লাহ।”
জাতীয় পার্টির জন্য যারা কষ্ট করেছেন, জেল খেটেছেন এবং জীবন উৎসর্গ করেছেন, তাদের প্রতি ব্যক্তিগত কৃতজ্ঞতাও প্রকাশ করেন তিনি।
রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে জি এম কাদের মনোনীত প্রার্থী মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তফাকে দলের প্রার্থী হিসেবে স্বীকৃতি দেন রওশন এরশাদ। তিনি বলেন, “হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের স্নেহধন্য, পুত্রতুল্য এবং তার পছন্দের যোগ্য ও দক্ষ প্রার্থীকেই আসন্ন রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে লাঙ্গলের মেয়রপ্রার্থী ঘোষণা করছি।
“তিনি হলেন সাবেক মেয়র ও দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য, জনমানুষের প্রিয় নেতা মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তফা। তার নির্বাচন ও বিজয়ের মধ্যদিয়ে জাতীয় পার্টি ঐক্যবদ্ধ ও শক্তিশালী দল হিসেবে নতুন করে প্রতিষ্ঠা পাবে, ইনশাল্লাহ।”
রওশন বলেন, “মনে রাখবেন, রংপুর জাতীয় পার্টির প্রাণ। এটা প্রয়াত রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের বাড়ি। তাই আসনটি যে কোনো মূল্যে ধরে রাখতে হবে এবং জাতীয় পার্টির প্রতীক ‘লাঙল’ নিয়ে নির্বাচনে জয়ী হবে, এমন যোগ্য প্রার্থীকে মনোনয়ন দেব, এজন্য সব নেতাকর্মীকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।”
দেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে রওশন বলেন, “বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায়, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের শান্তি, স্থিতিশীলতা ও উন্নয়ন বজায় রাখতে সর্ববাত্মক চেষ্টা করে যাচ্ছেন। দুর্নীতি, অর্থনীতিতে অব্যবস্থাপনা এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের মূল্যবৃদ্ধির মতো কিছু ত্রুটি রয়েছে।
“আমি নিশ্চিত যে, প্রধানমন্ত্রী এসব বিষয়ে অবগত আছেন এবং আমি তাকে অনুরোধ করব এই বিষয়গুলোকে আরো ঘনিষ্ঠভাবে সমাধান করতে এবং তার মন্ত্রিপরিষদের সদস্যদের আরও আন্তরিক ও সক্রিয় হতে হবে।
“বর্তমান ভূ-রাজনীতি বিশেষ করে ইউক্রেনের যুদ্ধ গুরুতর অর্থনৈতিক সমস্যার সৃষ্টি করেছে। এর প্রভাব পড়েছে আমাদের দেশেও। তাই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় আমাদের সবাইকে আরো সতর্ক হওয়া উচিত এবং সরকারকে সহযোগিতা করা উচিত।”
লিখিত বক্তব্যে বিএনপির প্রসঙ্গও টানেন রওশন। বিএনপির সঙ্গে কোনো জোট হতে পারে না বলে সাফ জানিয়ে দেন তিনি। বলেন, “বিএনপির অধীনে জাতীয় পার্টি খুবই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ এবং আমি ও আমার নাবালক সন্তানসহ দলের হাজার হাজার নেতাকর্মী জেল খেটেছিলেন।
“তখন আমাদের জনসভাও করতে দেওয়া হয়নি। ঢাকাসহ বিভিন্নস্থানে অনেক জনসভায় হামলা চালিয়ে কতশত নেতাকর্মীকে হত্যা করা হয়েছিল। সেই অন্ধকার দিনগুলো আমরা ভুলব কী করে? তাছাড়া আমরা তাদের শাসনামলে ‘হাওয়া ভবনের’ দুর্নীতি, অব্যবস্থাপনা ও অপতৎপরতা দেখেছি।
“জনগণ উন্নতি ও শান্তি জন্য পরিবর্তন চায়। জাতীয় পার্টিই দিতে পারে সেই শান্তি। অবশ্যই বিএনপি নয়। বিএনপির সঙ্গে জোটের প্রশ্নই আসে না,” বলেন তিনি।