ভোট চুরির সুযোগ থাকবে না বলেই বিএনপির শঙ্কা: প্রধানমন্ত্রী

দলটির নেতাকর্মীদের 'অবাধে ভোট' হওয়া নিয়ে উদ্বিগ্ন না হতেও আশ্বস্ত করেন তিনি।

গোলাম মুজতবা ধ্রুববিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 Sept 2022, 06:55 PM
Updated : 24 Sept 2022, 06:55 PM

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ভোট চুরি আর ভুয়া ভোটার তালিকা করে নির্বাচন করতে পারছে না বলেই নির্বাচন নিয়ে শঙ্কিত বিএনপি।

মানুষের ভোটের অধিকার নিশ্চিতের ব্যবস্থা বর্তমান সরকার করেছে বলে দলটির নেতাকর্মীদের আশ্বস্ত করে তিনি তাদের উদ্বিগ্ন না হওয়ার পরামর্শও দেন।

শনিবার স্থানীয় সময় সকালে নিউ ইয়র্কে বাংলাদেশের স্থায়ী মিশনে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি।

বাংলাদেশের আগামী নির্বাচন সবার কাছে গ্রহণযোগ্য করতে সরকারের নেওয়া পদক্ষেপের বিষয়ে সংবাদ সম্মেলনে এক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, একটা স্বচ্ছ নির্বাচনের বিষয় সামনে আসলেই বিএনপি শঙ্কিত হয়ে যায়।

এর কারণ তুলে ধরে তিনি বলেন, “চুরি করে, ভোট চুরি করে ক্ষমতায় যাওয়া আর ওই যে ১ কোটি ২৩ লক্ষ ভুয়া ভোটার লিস্টে রেখে ভোট করা- এই সুযোগটা পাচ্ছে না বলেই বোধহয় নির্বাচন নিয়ে তাদের এত শঙ্কা আছে।“

এসময় বিএনপির নেতাকর্মীদের আশ্বস্ত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “তবে শঙ্কা করার কিছু নেই।”

নির্বাচন কমিশন এখন আইনের মাধ্যমে গঠিত হচ্ছে জানিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, মানুষের ভোটের অধিকার যাতে নিশ্চিত হয় সেই ব্যবস্থা আওয়ামী লীগ সরকার করেছে।

নির্বাচন নিয়ে বিএনপির প্রহসনের কথা তুলে ধরতে গিয়ে সরকারপ্রধান ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনের প্রসঙ্গ তোলেন।

তিনি বলেন, খালেদা জিয়া ভোট চুরি করে ক্ষমতায় আসলেও জনগণ সেই নির্বাচন মেনে না নেওয়ায় ৩০ মার্চ চাপের মুখে পদত্যাগ করতে বাধ্য হন।

শেখ হাসিনা বলেন, “তাদের মুখ থেকে এখন নির্বাচন নিয়ে কথা শোনা…এটা তো আসলে জানি না এটা কতটুকু মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্যতা পাবে।”

এই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “বাংলাদেশের মানুষ কিন্তু খুব সচেতন। কেউ যদি তার অধিকার কেড়ে নেয় তাহলে তারা কিন্তু আন্দোলন করে সেটা আদায় করে।”

বর্তমানে নির্বাচন ‘যতটুকু স্বচ্ছতা’ পেয়েছে তা অতীতে ছিল না জানিয়ে তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, যারা নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন তুলতে চায় তারা কারা?

২০১৮ সালের নির্বাচনের প্রসঙ্গ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমার একটা প্রশ্নের উত্তর কি কেউ দিতে পারবেন? ৩০০ সিট আছে। একটা রাজনৈতিক দল যদি সেখানে সাড়ে সাতশ জনকে মনোনয়ন দেয় এবং নিজেরাই মারামারি করেন ও এর মাঝখানে সরে পড়েন। তবে সেই নির্বাচনটা তো আর নির্বাচন হয় না।

তারপরও দোষ হচ্ছে সরকারের, আওয়ামী লীগের মন্তব্য করে তিনি বলেন, “আওয়ামী লীগ এদেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য সংগ্রাম করেছে। এদেশের মানুষের ভোটের অধিকার, তাদের মৌলিক চাহিদার অধিকার, সাংস্কৃতিক অধিকার, রাজনৈতিক অধিকার, সামাজিক অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্যই কিন্তু আওয়ামী লীগ সারা জীবন সংগ্রাম করেছে।

“জনগণের ভোট চুরি করে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় কোনদিন আসেনি। যতবারই ক্ষমতায় এসেছে জনগণের ভোটের মাধ্যমে এসেছে।”

বিএনপিকে ইঙ্গিত করে সরকারপ্রধান যারা বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে এখন প্রশ্ন তুলছে তাদের দল সৃষ্টির ইতিহাস তুলে ধরেন।

তিনি বলেন, “যারা আজকে প্রশ্ন করে নির্বাচন নিয়ে তাদের হল ক্ষমতা অবৈধভাবে দখলকারীর দ্বারা সৃষ্ট দল। কোনো ভোট দিয়ে কখনও ক্ষমতায় আসতে পারে নাই। কাজেই তারা যদি প্রশ্ন করে সেই প্রশ্নটাকে এত গুরুত্ব দেওয়ার কী আছে আমি জানি না।”

২০১৪ সালের নির্বাচনে বিএনপির অংশ না নেওয়ার প্রসঙ্গ তুলে শেখ হাসিনা বলেন, তারা করেনি এজন্য যে তারা জানে যে একটা সঠিক নির্বাচনী পদ্ধতিতে নির্বাচনে করলে তাদের ক্ষমতায় আসার সম্ভাবনা থাকবে না। কারণ তারা তো হত্যা, ক্যু, ষড়যন্ত্রের মধ্য দিয়ে ক্ষমতায় আসতে অভ্যস্ত। এটা হলো বাস্তব।”

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার পর সেই সময়ে দেশের পরিস্থিতির কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, “সেই হত্যার পর মিলিটারি ডিক্টেটররা যখন ক্ষমতা দখল করতে শুরু করলো অবৈধভাবে সংবিধান লঙ্ঘন করে তখন মানুষের কোনো ভোটের অধিকার ছিল না। একটা মিলিটারি ডিক্টেটর সেনাপ্রধান সে আবার নিজেকে রাষ্ট্রপতি ঘোষণা দিয়ে দিল। সেখানে হ্যাঁ, না ভোট, রাষ্ট্রপতি ভোটের নামে প্রহসন এবং তারপর নিজস্ব দল গঠন।”

বিএনপির ক্ষমতায় থাকাকালে বাংলাদেশের সার্বিক অবস্থা তুলে ধরে তিনি জানান, হত্যা, ক্যু এর পাশাপাশি জঙ্গীবাদ সৃষ্টি, দুর্নীতিই ছিল তাদের নীতি। স্বাধীনতা বিরোধী, জাতির পিতার আত্মস্বীকৃত হত্যাকারীদের রাজনীতি করার সুযোগ করে দেয় জিয়াউর রহমান।

জিয়ার শাসনামলে গুম, খুন হওয়ার কথা তুলে ধরেন শেখ হাসিনা। বোমাবাজি, হত্যাযজ্ঞ, ভোটকেন্দ্র দখলই বিএনপির চরিত্র উল্লেখ করে এ ধারা পরিবর্তনে আওয়ামী লীগ সরকারের নেওয়া পদক্ষেপের বর্ণনা দেন তিনি।

আওয়ামী লীগই দীর্ঘ ‘সংগ্রামের’ মধ্য দিয়ে নির্বাচন পদ্ধতির সংস্কারের দাবি তোলে এবং আজকের সংস্কারগুলো তার দলের অবদান বলেও জানান তিনি।

জাতিসংঘের ৭৭তম সাধারণ পরিষদের অধিবেশন থেকে বাংলাদেশের জন্য কি নিয়ে ফিরছেন এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, “বন্ধুত্ব। বাংলাদেশের জন্য বন্ধুত্ব নিয়ে ফিরছি এবং বাংলাদেশ যে উন্নয়নের বিস্ময় এটাই বলতে চেষ্টা করে। আর সবচেয়ে বড় কথা হল আমরা শন্তি চাই, যুদ্ধ চাই না। সংঘাত চাই না। এই বার্তাটা অন্তত আমি সকলের কাছে পৌঁছে দিতে পেরেছি।”

সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যেসব দেশ ও সরকার প্রধানরা যোগ দিয়েছেন সবাই বাংলাদেশের প্রশংসা করেছে বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী।