জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, “স্পিকার অনুমোদন দেন কি না- এটা আপনাদের জানার বিষয়। আমরা বলতে চাই, আমরাই অপজিশন পার্টি।”
Published : 17 Jan 2024, 11:12 PM
দ্বাদশ সংসদের সংসদ সদস্যরা শপথ নেওয়ার এক সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও সংসদে বিরোধী দল কারা হবে, কে তাদের নেতা হবেন, এসব বিষয়ে ধারণা পাওয়া যাচ্ছে না।
অথচ পাঁচ বছর আগে একাদশ সংসদ নির্বাচনের সংসদ সদস্যদের শপথের ঠিক এক সপ্তাহ পর বিরোধীদলীয় নেতা ও উপনেতা মনোনয়ন করে দিয়েছিলেন স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী।
৩০ জানুয়ারি দ্বাদশ সংসদের প্রথম অধিবেশন বসছে। বিরোধী দলের প্রশ্নে সিদ্ধান্তের উত্তর জানতে দৃশ্যত সেদিনের জন্য অপেক্ষায় থাকতে হচ্ছে।
সংবিধানের ব্যাখ্যা বলছে, স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যরা জোটবদ্ধ হয়ে বিরোধী দলের আসনে বসা সম্ভব। তবে আওয়ামী লীগের যেসব নেতা স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে ভোটে জিতেছেন, তারা এমন কোনো আগ্রহ দেখাচ্ছেন না।
জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলছেন, স্পিকার যে সিদ্ধান্তই দিন না কেন, সংসদে তারা বিরোধী দলে থাকবেন। সরকারের বিরোধিতায় থাকবেন উচ্চস্বর।
সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা মন্ত্রী এবং উপনেতা প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদা পান। বিরোধী দলীয় নেতা এবং উপনেতা (পারিতোষিক ও বিশেষাধিকার) অধ্যাদেশে তাদের সুযোগ সুবিধা নির্ধারণ করা রয়েছে। সংসদ ভবনে তাদের কার্যালয়ও রয়েছে।
বিরোধী দল হতে হলে ন্যূনতম কতজন সংসদ সদস্য থাকতে হবে সে বিষয়ে আইন বা জাতীয় সংসদের কার্যপ্রণালি বিধিতে উল্লেখ নেই। এই বিধির ২(১)(ট) ধারায় বলা আছে, ‘বিরোধী দলের নেতা অর্থ স্পিকারের বিবেচনামতে যে সংসদ সদস্য সংসদে সরকারি দলের বিরোধিতাকারী সর্বোচ্চসংখ্যক সদস্য লইয়া গঠিত ক্ষেত্রমত দল বা অধিসঙ্ঘের নেতা।’
বাংলাদেশের প্রথম ও ষষ্ঠ সংসদ নির্বাচনের পর সংসদে কোনো বিরোধী দল ছিল না।
প্রথম সংসদে আওয়ামী লীগের বাইরে পাঁচ জন স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য এবং একজন ছিলেন জাসদের, একজন ছিলেন জাতীয় লীগের।
১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির একতরফা ষষ্ঠ সংসদ নির্বাচনে বিএনপির বাইরে ১০টি আসনে স্বতন্ত্র এবং একটিতে ফ্রিডম পার্টির নেতা বঙ্গবন্ধুর খুনি খন্দকার আব্দুর রশীদকে বিজয়ী দেখানো হয়।
গত ৭ জানুয়ারির ভোটে আওয়ামী লীগ ২২৩ আসন পেয়ে টানা চতুর্থবারের মতো সরকার গঠন করেছে। এ নির্বাচনে জাতীয় পার্টি ১১টি এবং জাসদ, ওয়ার্কার্স পার্টি ও কল্যাণ পার্টি একটি করে আসন পেয়েছে। আর স্বতন্ত্ররা পেয়েছেন ৬২টি আসন।
সাবেক আইনমন্ত্রী শফিক আহমেদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “স্বতন্ত্র প্রার্থীরা আলাদাভাবে জোট করতে পারে, তখন ওই জোটে কতজন হবে, সেই হিসেবে তারাও বিরোধী দল হতে পারে।”
তবে সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ নেওয়ার পর নিজেদের বিরোধী দল হিসেবে ‘স্বীকৃতির’ প্রত্যাশার কথা জানিয়েছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের।
দলের মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা ১১টি আসন পেয়েছি। প্রধান বিরোধী দল হব কি না, স্পিকার অনুমোদন দেন কি না- এটা আপনাদের জানার বিষয়। আমরা বলতে চাই, আমরাই অপজিশন পার্টি।
“বিরোধীদলীয় নেতা, উপনেতা হলে মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদা পাওয়া যায়, সেটা অন্য বিষয়। কিন্তু আমরা সত্যিকারের বিরোধী দলের ভূমিকা রাখব এ সংসদে। সংখ্যার বিচারে নয়, সরকারের ত্রুটি বিচ্যুতি নিয়ে সোচ্চার থাকব।”
জাতীয় পার্টি নেতার বলেন, সংখ্যায় কম থাকলেও তাদের ‘স্বর’ উঁচু থাকবে। সরকারকে জবাবদিহি করতে বাধ্য করার জন্য যা যা করা দরকার, সংসদে তাই করবেন।
দ্বাদশ সংসদের বিরোধী দল নিয়ে আলোচনার মধ্যে সংরক্ষিত নারী আসনের ভোটও রয়েছে সামনে। আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব পদ্ধতিতে আওয়ামী লীগ ও জোটের শরিক মিলে পাবে ৩৮টি আসন, জাতীয় পার্টি পাবে ২টি, স্বতন্ত্রদের জন্য বরাদ্দ থাকছে ১০টি।
স্বতন্ত্রদের নিয়ে বিরোধী জোট করার বিষয়ে এখনও নিজেদের মধ্যে আলোচনা হয়নি বলে জানিয়েছেন ফরিদপুর-৪ আসনের মজিবুর রহমান চৌধুরী নিক্সন ও বরিশাল-৪ আসনের পঙ্কজ দেবনাথ।
একাদশ সংসদে যা হয়েছিল
একাদশ সংসদ নির্বাচনের পর ২০১৯ সালের ৩ জানুয়ারি শপথ নেন সংসদ সদস্যরা। এর এক সপ্তাহের মাথায় ১০ জানুয়ারি জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদকে সংসদের বিরোধী দলীয় নেতা এবং জি এম কাদেরকে উপনেতা হিসেবে দায়িত্ব পালনের অনুমোদন দেন স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী। সংসদ অধিবেশনে বসে ৩০ জানুয়ারি।
সেবার ২৯৮ আসনের মধ্যে আওয়ামী লীগ এককভাবে ২৫৭টি আসন পায়। তাদের জোটসঙ্গীদের মধ্যে জাতীয় পার্টি ২২টি এবং শরিক অন্য দলগুলো আটটি আসন পায়।
নির্বাচন শেষে মহাজোট থেকে বেরিয়ে যায় জাতীয় পার্টি।
বিএনপির নেতৃত্বে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট সব মিলিয়ে সাতটি আসন পায়।
আরও পড়ুন:
স্বতন্ত্ররাই বিরোধী দল কি না, জানতে অপেক্ষা করতে হবে: আইনমন্ত্রী
বিরোধী দলীয় নেতা হিসেবে এরশাদকে স্পিকারের ‘স্বীকৃতি’