‘গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায়’ আইএমএফের সহযোগিতা চাইল বিএনপি

ফখরুলের ভাষায়, সংকট উত্তরণের পথ একটাই, আর সেটা সরকারে ‘চলে যাওয়া’।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 Feb 2023, 12:47 PM
Updated : 28 Feb 2023, 12:47 PM

দেশে গণতন্ত্র ‘নেই’ অভিযোগ করে ‘গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠায়’ আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল বা আইএমএফের সহযোগিতা চেয়েছে বিএনপি। 

দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর মনে করেন, বর্তমান সরকার দেশে ‘অর্থনৈতিক নৈরাজ্য’ তৈরি করেছে। আইএমএফের ঋণ এর সমাধান নয়, সমাধান সরকারের সরে যাওয়ার মধ্যে।

দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে মঙ্গলবার গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে আসেন বিএনপি মহাসচিব। তিনি বলেন, “বিএনপি আশা করে, বাংলাদেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠা ও আর্থিকখাত ‍কার্যকর সংস্কার সাধনে একটি প্রকৃত গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার জন্য আইএমএফ বিশেষ সহযোগিতার হাত বাড়াবে।”

রিজার্ভের ওপর চাপ কমাতে আইএমএফ থেকে ৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার ঋণ নিচ্ছে বাংলাদেশ। এরই মধ্যে কিস্তির ৪৭ কোটি ডলার এসে গেছে। ২ দশমিক ২ শতাংশ সুদে নেওয়া এই ঋণ আসবে সাত কিস্তিতে। শেষ কিস্তি আসবে ২০২৬ সালে।

সরকারের রাজনৈতিক সদিচ্ছা থাকলে দেশের অবস্থা এমন ‘শোচনীয়’ হত না’ বলে মনে করেন ফখরুল। তিনি বলেন, “অনেকে মনে করেন, আইএমএফের ঋণে সংকট কাটবে না। এই ঋণ বরং ‘আলিগার্কদের’ পেটে যাবে, কষ্ট বাড়বে সাধারণ জনগণের।”

অলিগার্ক হলেন তারাই যারা ব্যাপক অর্থ বিত্তের অধিকারী, মূলত রাষ্ট্রের সঙ্গে নানা কর্মকাণ্ডে জড়িত থেকে বিত্তশালী হয়েছেন।

‘ওনলি ওয়ে’

ফখরুল বলেন, “ব্যাংকি ও রাজস্ব খাতের সংস্কার এবং নীতি সংস্কার করে খেলাপি ঋণ পুনরুদ্ধার না করলে, দুর্নীতি ও অর্থ পাচার রোধে ব্যর্থ হলে, যে সূত্র হতেই ঋণের টাকা আসুক, নানা কৌশলে শেষ পর্যন্ত ‘অলিগার্করাই’ বরং তা লুণ্ঠন করে দেবে।”

সরকার ‘পতন ছাড়া’ সংকট কাটবে না মন্তব্য করে তিনি বলেন, “এই সরকারকে সরে যেতে হবে। এই সরকার সরে গেলেই দেশে যে ট্রাস্ট (বিশ্বাস), এটা সৃষ্টি হবে। তখন এইগুলো সমস্যা সমাধানের জন্য যোগ্য যারা কাজ করতে পারেন, তাদের নিয়ে এসে সমস্যা সমাধান অত্যন্ত দ্রুত করা সম্ভব হবে।

“এরা সেন্ট্রাল ব্যাংককে প্রশ্নবিদ্ধ করে ফেলেছে, এরা পুরো ইকোনমি সিস্টেম, মনিটরি সিস্টেম সব কিছু নষ্ট করে ফেলেছে। ব্যাংকগুলো দেউলিয়া হয়ে যাচ্ছে প্রায়। ভুল ধারণা, ভ্রান্ত ধারণার মধ্যে সরকার দেশের অর্থনীতিকে সচল রাখার চেষ্টা করছে, হুইচ ইজ নট ট্রু। ওনলি ওয়ে, এই সরকারে চলে যাওয়া।”

ফখরুলের ভাষ্য, বিদ্যুৎ ও গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি, রিজার্ভ কমে যাওয়া, ডলার সংকট, টাকার অবমূল্যায়ন, ব্যাংকিং ও আর্থিক খাতে অব্যবস্থাপনা, ‘ভুল নীতি’, ‘লাগামহীন দুর্নীতি’, বিদেশে অর্থপাচার, খেলাপি ঋণ বৃদ্ধি পাওয়া, আয় বৈষম্য, ‘সুশাসনের অভাব’ এবং গণতন্ত্র না থাকার কারণে দেশে ‘অর্থনৈতিক নৈরাজ্য সৃষ্টি হয়েছে’।

দেশের অর্থনৈতিক সংকটের কথা সরকার স্বীকার করছে না মন্তব্য করে তিনি বলেন, “…এর প্রধান কারণ হচ্ছে তাদের কোনো জবাবদিহিতা নেই। তারা জনগণের দ্বারা নির্বাচিত নয়, তারা ভোট করে নির্বাচিত হয়ে আসেনি। যদি নির্বাচিত হয়ে আসত তাহলে তাকে পার্লামেন্টে জবাবদিহি করতে হত। জনগণের সামনে জবাবদিহি করতে হত।

“এখানে তারা (সরকার) সবসময় একটা মিথ্যা প্রচার করে, ভয়-ভীতি-ত্রাস সৃষ্টি করে, গণমাধ্যমকে নিয়ন্ত্রণ করে তারা সার্বক্ষণিকভাবে একটি মিথ্যা প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে গোয়েবেলসের মত। যারা ফ্যাসিস্ট হয়, যারা ডিক্টেটর হয় তাদের জন্য এই প্রচারণা জরুরি হয়- একটা মিথ্যা ধারণার মধ্যে জনগণকে রাখতে চায়।”

‘নাই আর নাই’

চারদিকে শুধু আর ‘নাই আর নাই’ এবং ‘হাহাকার’ দেখতে পাওয়ার কথা জানিয়ে ফখরুল বলেন, “সমগ্র দেশটিই যেন এক ‘নাই’ এর রাজ্যে পরিণত হয়েছে।

“নিত্যপণ্যের উচ্চমূল্যের যাতাকলে মানুষের নাভিশ্বাস উঠেছে। একথায় দেশের অর্থনীতি এক মহাসংকটে নিমজ্জিত।”

নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধি, ব্রয়লার মুরগির দাম ২০০ টাকা ছাড়িয়ে যাওয়ার মধ্যে খাদ্য মূল্যস্ফীতির হার কীভাবে ৭ দশমিক ৭৬ শতাংশ হয়, তারও সমালোচনা করেন ফখরুল।

সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য ইসমাইল জবিউল্লাহ ও ভারপ্রাপ্ত দপ্তর সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স উপস্থিত ছিলেন।