‘সরকারের প্রতি আস্থা’ বগুড়াতেও, জেনেছেন প্রধানমন্ত্রী

“আজকে আমি বগুড়ার খবর নিলাম। বগুড়ায় গ্রামে-গঞ্জে কিন্তু আমাদের সরকারের প্রতি আস্থার সৃষ্টি হয়েছে।”

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 March 2023, 04:21 PM
Updated : 13 March 2023, 04:21 PM

বিএনপির ভোটের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত দলটির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের বাড়ি বগুড়াতেও এখন সরকারের অবস্থান দৃঢ় বলে ‘জানতে পেরেছেন’ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

তিনি বলেছেন, জনগণ ভোট না দিলে ক্ষমতায় থাকবেন না, এ নিয়ে কোনো আফসোসও থাকবে না। তবে সাধারণ মানুষ মনে করে ‘এই সরকারের থাকা উচিত।’

সোমবার গণভবনে সংবাদ সম্মেলনে প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন সরকারপ্রধান।

কাতারে এলডিসিভুক্ত দেশগুলোর সম্মেলন যোগ দেওয়ার অভিজ্ঞতা জানাতে এ সংবাদ সম্মেলন করেন তিনি। বিদেশ সফর থেকে ফিরে বরাবরের মত সাংবাদিকদের সামনে আসেন প্রধানমন্ত্রী। এতে সফরের কর্মকাণ্ড নিয়ে বক্তব্য তুলে ধরার পর প্রশ্নোত্তরপর্বে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতিসহ উঠে আসা সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহ নিয়েও প্রশ্নের উত্তর দেন তিনি।

প্রশ্নোত্তর পর্বে আগামী জাতীয় নির্বাচন নিয়ে এক প্রশ্নে শেখ হাসিনা বলেন, “ইলেকশন, এটা জনগণের ইচ্ছা। জনগণ ভোট দিলে আছি, না হলে নাই। এ নিয়ে আফসোস নাই তো।”

জনগণ এ সরকারকেই চায় জানিয়ে তিনি বলেন, “আমরা কাজ করে মানুষের ভেতরে অন্তত আস্থা অর্জন করতে পেরেছি। আজকে আমি বগুড়ার খবর নিলাম। বগুড়ায় গ্রামে-গঞ্জে কিন্তু আমাদের সরকারের প্রতি আস্থার সৃষ্টি হয়েছে।

“আমার দল করে না অন্য দল করে। তাদের ‍মুখ থেকে আমি আজকে সেই তথ্যটা নিয়েছি।”

এরশাদ সরকারের পতনের পর থেকে বগুড়ার সাতটি আসনে বরাবরই বিএনপির অবস্থান ছিল দৃঢ়। তবে বগুড়া ১ ও বগুড়া ৫ আসনে ভোট বাড়িয়ে আসছিল আওয়ামী লীগ। ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে এ দুটি আসনে জয়ীও হন নৌকা মার্কার প্রার্থীরা। একাদশ সংসদ নির্বাচনে এ দুটির পাশাপাশি বগুড়া ২ আসনেও জেতে আওয়ামী লীগ।

বগুড়া থেকে নির্বাচিত সরকারদলীয় এক সংসদ সদস্যের সঙ্গে তার কী কথা, সংবাদ সম্মেলনে সেটিও তুলে ধরেন শেখ হাসিনা।

Also Read: এমন কোনো চাপ নাই, যেটা শেখ হাসিনাকে দিতে পারে: প্রধানমন্ত্রী

তিনি বলেন, “আমাদের একজন সংসদ সদস্য। আমি তাকে বললাম কী অবস্থা? (তিনি বললেন) সাধারণ মানুষ- গ্রামের মানুষের একটাই কথা, এই সরকারের থাকা উচিত। এটা সাধারণ মানুষের আকাঙ্ক্ষা। এর পরে কী হবে দেখা যাক।”

২০১৪ ও ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচন নিয়ে বিএনপির কারচুপির অভিযোগের বিষয়টি তুলে ধরে এর জবাবে প্রধানমন্ত্রী সামনে আনেন ২০০৮ সালের ডিসেম্বরের নবম সংসদ নির্বাচনের কথা।

তিনি বলেন, “২০০৮ সালের নির্বাচনে তারা প্রথমে ২৯টা সিট, তারপরে বাই ইলেকশনে একটাসহ ৩০টা। ২০ দলীয় জোট বিএনপির নেতৃত্বে তারা পেয়েছে ৩০টা সিট। আর ২৭০টা পেলাম আমরা মহাজোট, জাতীয় পার্টিসহ সব মিলিয়ে।

‘‘২০০৮ এর নির্বাচন যেটা সবচেয়ে অবাধ নির্বাচন- সেই নির্বাচনেই তাদের এই দুরাবস্থা।”

‘স্মার্ট বাংলাদেশ করব’

আগামী জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগের স্লোগান ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ নিয়েও কথা বলেন শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, “এটি আমরা নির্বাচনী ইশতাহারেই ঘোষণা দেব। পরবর্তীতে হবে স্মার্ট বাংলাদেশ। প্রযুক্তিতে উন্নত স্মার্ট বাংলাদেশ করব- সেটাই আমার পরবর্তী লক্ষ্য। সেই ক্ষেত্রে আমাদের যুব সমাজকে এগিয়ে আসতে হবে।

“স্মার্ট বাংলাদেশ করার জন্য কী কী করণীয়, সেটা তো আমরা করেই দিয়েছি। যা সময় সময়ে পরিবর্তনশীল, পরিবর্তন হবে, পরিবর্ধন হবে, সংশোধন হবে- যেটা যখন যে রকম প্রয়োজন সেই রকম করা হবে। বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে।”

সরকার যে দীর্ঘমেয়াদী লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে, সেটিও তুলে ধরেন সরকারপ্রধান।

তিনি বলেন, “আমরা এখানেই থেমে থাকিনি। ২১০০ সালের বাংলাদেশ- ডেল্টা প্লান সেটাও কিন্ত করে দিয়েছি।

“সেই প্লানটা করে দিয়েছি এই কারণে যে, এটা একটা ব-দ্বীপ। জলবায়ু অভিঘাতে সবসময় ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। যদিও আমরা চেষ্টা করে যেসব উদ্যোগ নিয়েছি তাতে বাংলাদেশের খুব ক্ষতি হবে না।”

এ পরিকল্পনার অংশ হিসেবে উপকূলীয় সাইক্লোনের সহনশীল ঘর নির্মাণ, বন্যা উপদ্রুত এলাকায় আশ্রয়কেন্দ্র করার কথাও জানান তিনি।

তিনি বলেন, “বন্যাপ্রবণ এলাকা, নদী ভাঙন এলাকায় ঘরগুলো এমনভাবে করে দেওয়া হচ্ছে যে, নদী ভাঙার সম্ভাবনা দেখেই তারা যাতে খুব দ্রুত ঘরগুলো সরিয়ে নিয়ে যেতে পারে।

“নদীগুলো ড্রেজিং করা, নদীর নাব্যতা ও ধারণক্ষমতা বাড়ানো এবং সেই সঙ্গে নৌ চলাচলের পথের উন্নয়ন… উন্নয়নের নৌপথ, সড়কপথ, বিমান পথ, রেলপথ সবই উন্নয়ন করে দিচ্ছি। এক দিনের শত সেতু উদ্বোধন, এক দিনে শত সড়ক উদ্বোধন কোনো কেউ করতে পেরেছে? কেউ করতে পারেনি।

‘‘মেট্রোরেল, টানেল। এখন তো পাতাল রেলেরও যুগ আসবে। পদ্মা সেতু করেছি। সমগ্র বাংলাদেশ কিন্তু একটা যোগাযোগ নেটওয়ার্কের ভেতরে এসেছে।”

‘বিএনপি তো গঠনতন্ত্রই মানে না’

‘ছায়া সরকার’ গঠনে বাংলাদেশে বিরোধীদলের উদ্যোগ না থাকার বিষয়ে একটি প্রশ্ন রাখেন একজন সাংবাদিক।

জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “শ্যাডো গভর্নমেন্ট (ছায়া সরকার) কে করবে? যে দল বেশি লাফায়, সেই দলের দুই নেতাই হচ্ছেন সাজাপ্রাপ্ত আসামি (বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান)। সাজাপ্রাপ্ত আসামিরা না পারবে ইলেকশন করতে, না পারবে ক্ষমতায় আসতে।”

তারেক রহমানকে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান করে বিএনপি নিজের গঠনতন্ত্র ভঙ্গ করেছে বলেও মনে করেন তিনি।

তিনি বলেন, “তাদের গঠনতন্ত্রে আছে যে, সাজাপ্রাপ্ত আসামি দলের নেতা হতে পারে না। তারা সেই সাজাপ্রাপ্ত আসামিকে দলের নেতা বানিয়ে দিয়েছে। তাহলে এই দলের কাছে কী আশা করবেন?”

২০১৮ সালের ৮ জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় রায় হওয়ার আগে বিএনপি তার গঠনতন্ত্র পরিবর্তন করে। এর আগে পর্যন্ত ছিল, ফৌজদারি মামলা সাজাপ্রাপ্ত কেউ দলের নেতৃত্বে থাকতে পারবেন না।

তবে সাজা হওয়ার রাতে যুক্তরাজ্যে অবস্থানরত তারেক রহমানকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ঘোষণা করে বিএনপি। তিনিও তার মায়ের মতো জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় সাজা পান। তিনি বিদেশে অর্থপাচার, একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলা ও বঙ্গবন্ধুকে কটূক্তির মামলাতেও সাজাপ্রাপ্ত।