শেখ হাসিনা বলেন, “বিএনপি-জামায়াতের জ্বালাওপোড়াও, অগ্নিসন্ত্রাস এসবের বিরুদ্ধে যথাযথভাবে সাক্ষ্য দিতে হবে যাতে তাদের সাজা হয়, এদের কিন্তু ছেড়ে দেওয়া যাবে না।“
Published : 14 Feb 2024, 02:26 PM
যারা ‘সরকার উৎখাতের বিপ্লবে’ নেমেছিল, তারা ধীরে ধীরে ‘ক্ষয়িষ্ণু’ হয়ে পড়েছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এতদিন যারা সরকারের পায়ের নিচে ‘মাটি নেই’ বলে আসছিল, তাদের পায়ের নিচে এখন মাটি আছে কি না, সেই প্রশ্নও তিনি রেখেছেন।
বুধবার গণভবনে আওয়ামী লীগের সংরক্ষিত নারী আসনে মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ অনুষ্ঠানে কথা বলছিলেন শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, “যারা সরকারের পায়ের নিচে মাটি খোঁজে, তাদের পায়ের নিচে মাটি আছে কি না, সেটি সন্দেহ। শুনি যে সরকার নাকি উৎখাত করে ফেলবে। আমাদের পায়ের নিচে নাকি মাটিই নেই। এরা লম্বা লম্বা কথা বলে শুধু বিপ্লব করবে। বিপ্লব করতে করতে এরা ক্ষয়িষ্ণু হয়েছে।“
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন ঠেকাতে বিএনপি ও সমমনাদের আন্দোলন ঘিরে ঘটে যাওয়া নাশকতা প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, “বিএনপি-জামায়াতের জ্বালাওপোড়াও, অগ্নিসন্ত্রাস এসবের বিরুদ্ধে যথাযথভাবে সাক্ষ্য দিতে হবে, যাতে তাদের সাজা হয়, তার জন্য ব্যবস্থা নিতে হবে। এদের কিন্তু ছেড়ে দেওয়া যাবে না। কারণ এরা দেশের শত্রু, জাতির শত্রু, এরা আমাদের স্বাধীনতার শত্রু, এরা মুক্তিযুদ্ধের চেতনার শত্রু।
৭ জানুয়ারির নির্বাচনকে পঁচাত্তর পরবর্তী সময়ের সবচেয়ে ‘অবাধ ও সুষ্ঠু’ নির্বাচন হিসেবে বর্ণনা করেন শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, “প্রথমে তারা নির্বাচন ঠেকাবে, নির্বাচন ঠেকাতে পারেনি। তাদের প্রভুরা আছে, তাদেরও চেষ্টা ছিল, কিন্তু তারা সেটা পারেনি। কারণ বাংলাদেশের জনগণই আমাদের শক্তি। আর এই নির্বাচনের মধ্য দিয়ে জনগণ আওয়ামী লীগের ওপর আস্থা রেখেছে, আমাদের ভোট দিয়েছে, আমরা সরকারে এসেছি।“
দেশের উন্নতিতে শান্তিপূর্ণ পরিবেশকেই সবচেয়ে গুরুত্ব দিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, “মনে রাখতে হবে, কেউ যেন মাদক, অগ্নিসন্ত্রাস দুর্নীতি এবং কোনো রকম অপকর্ম যেন করতে না পারে, সেজন্য সবাইকে সজাগ থাকতে হবে। আমরা চাই, দেশের মানুষ শান্তিতে থাকুক।“
বিএনপির সমালোচনা করে তিনি বলেন, “বিএনপির একটি সন্ত্রাসী দল। তাদের সন্ত্রাসের শিকার আমাদের নেতা-কর্মীরা। আমরা কখনো প্রতিহিংসার রাজনীতি করি না। আমরা দেশের মানুষের কল্যাণে কাজ করে তাদের অপকর্মের জবাব দিই।”
‘কেউ জায়গা করে দেয় না, করে নিতে হয়’
নারীর ক্ষমতায়নে সরকারের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপ তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, “প্রতিটি ক্ষেত্রে নারীদের অগ্রযাত্রা চলছে। মেয়েদের যেখানে দিই, তারা সাফল্যের সঙ্গে কাজ করে। একটা সময় ছিল মা বাবা মেয়েদের বেশি পড়াতে চাইত না। এখন মেয়েরা সবক্ষেত্রে তাদের দক্ষতা দেখাচ্ছে। নারী পুরুষ একসাথে কাজ করলে দেশ এগিয়ে যাবে। মেয়েদের মধ্যে যে আত্মবিশ্বাস, শিক্ষা-দীক্ষায় মেয়েরা উন্নত হবে।”
দ্বাদশ জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত ৪৮টি আসনের জন্য ১ হাজার ৫৪৯ জনের মনোনয়ন ফরম তোলাকে ‘নারী জাগরণ’ হিসেবে বর্ণনা করেন শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, “অনেকে জানেন পাবেন না, তারপরও কেনা মানে যোগ্যতার জানান দেওয়া। সবাই-ই যোগ্য। তবে কঠিন একটা কাজ আমাদের ওপর পড়ল। এখনও যদি কেউ পেছনে পড়ে থাকে, তাদের টেনে তোলার দায়িত্ব আজকের এই নেতৃত্বের।”
নারী নেতৃত্বের প্রতি প্রধানমন্ত্রীর আহ্বান, “সংগঠন করতে হবে। মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে, তাদের আস্থা অর্জন করবে হবে। কেউ জায়গা করে দেয় না, জায়গা করে নিতে হয়।“
তৃণমূলে গিয়ে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “যারা মনোনয়ন পাবে না, তাদের নিজেকের আরও তৈরি করতে হবে।“
পরে প্রতিটি বিভাগে থেকে মনোনয়নন প্রত্যাশীদের সঙ্গে পরিচিত হন আওয়ামী লীগ সভপতি।
তিনি বলেন, “এত মনোনয়নপ্রত্যাশী থেকে মনোনয়ন বাছাই করা, এটা একটা কঠিন কাজ। প্রত্যেকটি বিভাগ থেকেই নিতে হবে। বহু নারী নেতৃত্বে গড়ে তুলে তাদের সংসদে নিয়ে এসেছি। সংগঠনটা করতে হবে। নির্বাচনে কেউ মনোনয়ন পাবে কেউ পাবে না, এজন্য মন খারাপ করার কোনো কারণ নেই। এবার না হলে আগামীতে হবে। একবার না পারিলে দেখ শতবার।“
শেখ হাসিনা পঁচাত্তরপরবর্তী সময়ে দলীয় নেতা-কর্মীদের ওপর ‘জুলুম-হামলার’ কথাও এ সময় তুলে ধরেন।
“কতজনের বাবাকে গুলি করে মেরে ফেলা হয়েছে। পঁচাত্তরের পর কি নিদারুণ কষ্টে তাদের জীবন পার করতে হয়েছে সেটা আমি জানি। আমাকে সেসব খবরও নিতে হয়। বহু পরিবারের মেয়েদের আমি তুলে এনেছি। তারা হারিয়ে যাচ্ছিল রাজনীতি থেকে।“
‘গণতান্ত্রিক ধারায় রাষ্ট্র পরিচালনা করায়’ জনগণ বারবার ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগকে নির্বাচিত করেছে মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, “একটা রাষ্ট্র চালাতে অনেক মেধাবী মানুষের দরকার হয়।
শেখ হাসিনা বলেন, দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে প্রয়োজনে ‘জীবন দিতে’ তিনি প্রস্তুত।
সরকারের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের ফলে বিদেশে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ‘উজ্জ্বল’ হয়েছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদে ৫০টি সংরক্ষিত আসনের মধ্যে ৪৮টিই এবার যাচ্ছে আওয়ামী লীগের ভাগে। সংসদে নৌকা প্রতীকে জয় পাওয়া ২২৫ এমপির হিসাবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী আনুপাতিক হারে নিজেরা পাচ্ছে ৩৮টি সংরক্ষিত আসন। ৬২ স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যের মধ্যে মতৈক্য হওয়ায় তাদের ভাগের ১০ আসনেও আওয়ামী লীগই প্রার্থী দেবে। বাকি দুটি সংরক্ষিত আসন পাচ্ছে প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টি।