“দল হিসাবে জামায়াতের নিবন্ধন সংবিধান ও গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের পরিপন্থী। অতএব কোনোভাবেই দলটি সভা-সমাবেশ করার অনুমতি পেতে পারে না।”
Published : 26 Jun 2023, 09:33 PM
জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন নিয়ে মামলার চূড়ান্ত নিষ্পত্তি না পর্যন্ত দলটির মিছিল-সমাবেশসহ সব ধরনের রাজনৈতিক কর্মসূচি পালনের উপর নিষেধাজ্ঞা চেয়ে আপিল বিভাগে আবেদন হয়েছে।
এক দশক বাদে রাজধানীতে পুলিশের অনুমতি নিয়ে জামায়াতের সমাবেশ করার কয়েক সপ্তাহের মধ্যে সোমবার আপিল বিভাগের চেম্বার আদালতে এই আবেদন হয়।
মাওলানা সৈয়দ রেজাউল হক চাঁদপুরীর পক্ষে এ আবেদন দায়ের করেন ব্যারিস্টার তানিয়া আমীর।
তরীকত ফেডারেশনের নেতা রেজাউল হক চাঁদপুরীসহ কয়েকজনের আবেদনে এক দশক আগে নির্বাচন কমিশনে জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল করেছিল হাই কোর্ট।
তারপর থেকে জামায়াত দলীয় পরিচয়-প্রতীক নিয়ে কোনো নির্বাচনে অংশ নিতে পারছে না।
হাই কোর্টের দেওয়া ওই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করে জামায়াত। সেই আবেদন আপিল বিভাগে বিচারাধীন।
বিচারাধীন এই আপিলের নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত জামায়াতে ইসলামী যেন সভা-সমাবেশ, মিছিলসহ কোনো ধরনের রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করতে না পারে, সেই বিষয়ে এই নিষেধাজ্ঞা চাওয়া হয় নতুন আবেদনে।
আগামী ৩১ জুলাই সেই আবেদনের উপর আপিল বিভাগে শুনানি হওয়ার কথা। সোমবার (২৬ জুন) নতুন আবেদন দিয়ে এটিসহ দুটি আবেদনের উপর শুনানির দিন ধার্যের আবেদন করেন আইনজীবী তানিয়া আমীর।
আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি মো. আবু জাফর সিদ্দিকী আবেদনটি শুনানির জন্য প্রধান বিচারপতির বেঞ্চে পাঠিয়ে দেন।
আবেদনে বলা হয়েছে, জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল সংক্রান্ত হাই কোর্টের রায় এখনও বহাল রয়েছে। রায় বহাল থাকাবস্থায় গত ১০ জুন দলটি ঢাকায় সভা-সমাবেশ করেছে।
“উচ্চ আদালতের রায়ের পর দলটির এ ধরনের কর্মসূচি পালন বেআইনি। একইসঙ্গে উচ্চ আদালতের রায়ের লঙ্ঘন। কারণ রায়ে বলা হয়েছে, দল হিসাবে জামায়াতের নিবন্ধন সংবিধান ও গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের পরিপন্থী। অতএব কোনোভাবেই দলটি সভা-সমাবেশ করার অনুমতি পেতে পারে না।”
সভা-সমাবেশ করে নিবন্ধন দাবি করে জামায়াত নেতাদের বক্তব্য দেওয়াও আদালত অবমাননার শামিল বলে দাবি করা হয় আবেদনে।
তানিয়া আমীর বলেন, “মিছিল-মিটিং করে তারা আদালতের আদেশের কার্যকারিতা ফলহীন করতে চায়, যার বিরুদ্ধে আমরা আজ আদালতে গিয়েছি।”
এক দশক পর ঢাকায় জামায়াতের সমাবেশ, সরকার ও বিরোধীদের নিয়ে ঐক্যের ডাক
একাত্তরে বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধিতাকারী দল জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষনেতারা আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে শুরু হওয়া যুদ্ধাপরাধের দায়ে দণ্ডিত হন।
এক দশক আগে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের রায় আসার পর মামলার চূড়ান্ত নিষ্পত্তি করে দলটির অধিকাংশ শীর্ষনেতাকে ফাঁসিতে ঝোলান হয়।
তারমধ্যে জামায়াতকে ইসির নিবন্ধন দেওয়াকে চ্যালেঞ্জ করে আদালতে যান তরীকত ফেডারেশনের তৎকালীন মহাসচিব রেজাউল হক চাঁদপুরী, জাকের পার্টির মহাসচিব মুন্সি আবদুল লতিফসহ ২৫ জন।
সেই আবেদনে ২০১৩ সালের অগাস্টে হাই কোর্টের বিচারপতি এম মোয়াজ্জাম হোসেন নেতৃত্বাধীন তিন বিচারপতির বৃহত্তর বেঞ্চ রাজনৈতিক দল হিসেবে জামায়াতকে নিবন্ধন দেওয়া অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেয়।
পূর্ণাঙ্গ রায় হাতে পাওয়ার পর ২০১৮ সালে নির্বাচন কমিশন জামায়াতের নিবন্ধন বাতিলের প্রজ্ঞাপন জারি করে।
নিবন্ধন বাতিলের পর জামায়াত সংসদ নির্বাচনে তাদের জোটসঙ্গী বিএনপির নির্বাচনী প্রতীক নিয়ে ভোটে অংশ নিয়েছিল। দীর্ঘ সময় বিএনপির সঙ্গে থাকা জামায়াত এখন আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের সঙ্গে জোটে নেই।