Published : 16 May 2023, 05:47 PM
‘নির্বাচনকালীন সরকার’ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্যের জবাবে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন ‘নিরপেক্ষ-নির্দলীয়’ সরকারের অধীনে নির্বাচনই তাদের একমাত্র দাবি।
বিএনপির মহাসচিব বলেছেন, “আমরা যে যুদ্ধ করছি, সংগ্রাম-লড়াই করছি, সেই লড়াইটা হচ্ছে সত্যিকার অর্থেই প্রতিনিধিত্বমূলক একটি সংসদ তৈরি করার জন্য। এই সরকার ক্ষমতায় থাকলে এটা হবে না… আমরা বারবার করে সেটা বলেছি। আমরা বলছি যে, একটা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন হতে হবে।
“নির্বাচনকালীন সরকার আওয়ামী লীগ কি গঠন করবে না করবে… দ্যাট ইজ ইমমেটারিয়াল… সেটা আমাদের কাছে কোনো ব্যাপারই না। আমরা একটা নিরপেক্ষ সরকার চাই। সেই নিরপেক্ষ সরকার অবশ্যই নির্দলীয়ভাবে চাই, সেখানে কোনো দলীয় ব্যক্তিদেরকে আমরা চাই না।”
বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকী সামনে রেখে মঙ্গলবার নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দল ও অঙ্গসংগঠনগুলোর যৌথসভা বসেছিল। ওই সভা শেষে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন মির্জা ফখরুল।
সে সময়, ‘নির্বাচনকালীন সরকার হলেও বিএনপির সুযোগ নেই’- বলে প্রধানমন্ত্রী সোমবার যে বক্তব্য দিয়েছেন, সে বিষয়ে তার দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে নির্বাচন ও তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে দলের অবস্থান ফের স্পষ্ট করেন ফখরুল।
বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ ছয় দেশের কূটনীতিকদের বাড়তি নিরাপত্তা প্রত্যাহারের সরকারি সিদ্ধান্তেরও সমালোচনা করেন তিনি।
ফখরুল মনে করেন, উন্নয়ন সহযোগী রাষ্ট্রগুলোর বিষয়ে সরকারের এই সিদ্ধান্ত আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলদেশকে ‘এক ঘরে’ করে দেবে।
সংসদ থেকে পদত্যাগের সিদ্ধান্ত ‘সঠিক’ ছিল
২০১৪ সালের জানুয়ারিতে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে ‘সর্বদলীয় সরকার’ গঠন করেছিলেন, তাতে অংশ নেয়নি বিএনপি। এরপর বিএনপি ২০১৮ সালের ডিসেম্বরের একাদশ সংসদ নির্বাচনে আসে আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনেই। তবে এবার দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে আগের মত নির্দলীয় সরকারের দাবিতে ফিরে গেছে তারা। এই দাবি নিয়ে বিএনপি আন্দোলন চালিয়ে আসছে কয়েকমাস ধরে, যা অব্যাহত ছিল রোজার মাসেও।
সোমবার গণভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে শেখ হাসিনা বলেন “আমরা এইটুকু উদারতা দেখাতে পারি, পার্লামেন্টে সংসদ সদস্য যারা আছে, তাদের মধ্যে কেউ যদি ইচ্ছা পোষণ করে নির্বাচনকালীন সময়ে তারা সরকারে আসতে চায়, সেটা আমাদের মধ্যে আছে।
“এমনকি ২০১৪ সালে খালেদা জিয়াকেও আমরা আহ্বান করেছিলাম, তারা তো আসেনি। এখন তো তারা নাইও পার্লামেন্টে, কাজেই ওটা নিয়ে চিন্তারও কিছু নেই।”
প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের পরিপেক্ষিতে মির্জা ফখরুলের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, সংসদ থেকে বিএনপির এমপিদের পদত্যাগ করার সিদ্ধান্ত ভুল ছিল কিনা?
উত্তরে বিএনপি মহাসচিব বলেন, “কখনোই না। এটা (সংসদ থেকে পদত্যাগ করে বেরিয়ে আসা) অত্যন্ত সঠিক সিদ্ধান্ত। কারণ এই সংসদ জাতির আশা পূরণে ব্যর্থ হয়েছে তো বটেই, এই সংসদে তো জাতির প্রতিনিধিত্বই ছিল না। বিকজ দে আর নট ইলেকটেড।”
‘দায়িত্বহীনতা ও আত্মভরিতা’
বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ভারত, সৌদি আরবসহ ছয় দেশের কূটনীতিকদের বাড়তি নিরাপত্তা প্রত্যাহারের সরকারি সিদ্ধান্তটি মির্জা ফখরুলের কাছে মনে হয়েছে ‘চরম দায়িত্বহীনতা ও আত্মভরিতা’।
সংবাদ সম্মেলেনে এর প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেন, “ছয় রাষ্ট্রদূতের বাড়তি নিরাপত্তা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত… এটা আমার কাছে দুইটা জিনিস মনে হয়। একটা হচ্ছে, একটা চরম দায়িত্বহীনতা। কারণ এগুলোর ফলে যে আন্তর্জাতিক একটা সমস্যার সৃষ্টি হবে, সেই সমস্যাটা বাংলাদেশের জনগণকেই কিন্তু এটা ভোগ করতে হবে। ফলে এই সিদ্ধান্ত দায়িত্বহীনতা ছাড়া আমি কিছুই মনে করি না।
“দ্বিতীয়ত হচ্ছে যে আত্মভরিতা-অহংকার কোন জায়গায় গিয়ে পৌঁছাতে পারে, যেটা আপনার সবচেয়ে বড় ক্ষতি করতে পারে।“
ফখরুলের ভাষ্য, “দীর্ঘদিন ধরে নিরাপত্তা দিয়ে আসার পর হুট করে তা বাতিলের অর্থ হচ্ছে যে, সামথিং ইজ ভেরি রং উইথ দিজ কান্ট্রিজ।”
এ ঘটনা আন্তর্জাতিক সম্পর্কে ‘উত্তেজনা ও সংকট’ তৈরি করবে বলেও মনে করেন বিএনপি মহাসচিব।
“এটা আমাদের আন্তর্জাতিক সম্পর্কে ক্ষেত্রে নিঃসন্দেহে একটা উত্তেজনা সৃষ্টি করবে, একটা সমস্যা সৃষ্টি করবে, একটা সংকট সৃষ্টি করবে এ ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই। এটা আমরা নিশ্চিত করে বলতে পারি। এটা বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে অবশ্যই ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াবে,” বলেন ফখরুল।
বিএনপি উদ্বিগ্ন
উদ্বেগ প্রকাশ করে বিএনপি মহাসচিব বলেছেন, ছয় রাষ্ট্রদূতের বাড়তি নিরাপত্তা প্রত্যাহারের ঘটনা বাংলাদেশকে আরও ‘একঘরে’ করে তুলবে।
“কারণ সমস্যাটা শুধু সরকারের না, সমস্যাটা তো আমাদের বাংলাদেশের জনগণের। কারণ এটার যে আফটার ইফেক্টস, সেই আফটার ইফেক্টস বাংলাদেশের মানুষকে ভোগ করতে হবে।”
“আজকে ধরেন যুক্তরাষ্ট্র যদি এই বিষয়ে পাল্টা কোনো ব্যবস্থা নেয়, সেটা তো বাংলাদেশের মানুষের জন্য ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াবে। সৌদি আরব, যারা সবসময় বাংলাদেশকে সহযোগিতা করছে, তারা যদি কোনো ব্যবস্থা নেয়, সেটা আমাদের জন্য… এমনকি দেখলাম যে, ভারতও এর মধ্যে রয়েছে, তাদেরকে রাখা হয়েছে, জাপান আছে, অস্ট্রেলিয়া আছে…।“
‘উন্নয়ন সহযোগী’ রাষ্ট্রের কূটনীতিকদের ক্ষেত্রে এই সিদ্ধান্ত আন্তর্জাতিক সম্পর্কে বাংলাদেশের জন্য কোনো ‘শুভ ফল বয়ে আনবে না’ বলেও মন্তব্য করেন ফখরুল।
নির্বাচনকালীন সরকার হলেও বিএনপির সুযোগ নেই: প্রধানমন্ত্রী
কূটনীতিকদের সুরক্ষা স্বাগতিক দেশকেই নিশ্চিত করতে হবে: যুক্তরাষ্ট্র