নির্বাচনকালীন সরকার হলেও বিএনপির সুযোগ নেই: প্রধানমন্ত্রী

“এমনকি ২০১৪ সালে খালেদা জিয়াকেও আমরা আহ্বান করেছিলাম, তারা তো আসেনি। এখন তো তারা নাইও পার্লামেন্টে, কাজেই ওটা নিয়ে চিন্তারও কিছু নেই,” বলেন শেখ হাসিনা।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 15 May 2023, 02:32 PM
Updated : 15 May 2023, 02:32 PM

আসন্ন দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে ‘নির্বাচনকালীন সরকার’ গঠন করা হলেও সংসদে না থাকায় বিএনপির সেই সরকারে থাকার সুযোগ নেই বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

“আমরা এইটুকু উদারতা দেখাতে পারি, পার্লামেন্টে সংসদ সদস্য যারা আছে, তাদের মধ্যে কেউ যদি ইচ্ছা পোষণ করে নির্বাচনকালীন সময়ে তারা সরকারে আসতে চায়, সেটা আমাদের মধ্যে আছে।

“এমনকি ২০১৪ সালে খালেদা জিয়াকেও আমরা আহ্বান করেছিলাম, তারা তো আসেনি। এখন তো তারা নাইও পার্লামেন্টে, কাজেই ওটা নিয়ে চিন্তারও কিছু নেই।”

সাম্প্রতিক ত্রিদেশীয় সফরের অভিজ্ঞতা জানাতে সোমবার গণভবনে সংবাদ সম্মেলনে আসেন প্রধানমন্ত্রী। সেখানেই এক সাংবাদিকের প্রশ্নে নির্বাচনকালীন সরকার এবং বিএনপির প্রসঙ্গ আসে।

শেখ হাসিনা বলেন, “নির্বাচনকালীন সরকার, আমরা ওয়েস্টমিনস্টার টাইপ অব ডেমোক্রেসি ফলো করি, তারা যেভাবে করে আমরা সেভাবেই করব।”

নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে স্পষ্ট কোনো ব্যাখ্যা এখন সংবিধানে নেই। বর্তমান ব্যবস্থায় ক্ষমতাসীন সরকারের অধীনেই নির্বাচন হয়। ভোটের আগে সংসদ ভেঙে দেওয়ার প্রয়োজন হয় না, তবে তিন মাসের ক্ষণ গণনা শুরু হলে সংসদের স্বাভাবিক কার্যক্রম বন্ধ থাকে।

২০১৪ সালের জানুয়ারিতে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার অধীনে অপেক্ষাকৃত ছোট একটি মন্ত্রিসভা গঠন করেন; যার নাম দেওয়া হয় ‘সর্বদলীয় সরকার’।

ওই মন্ত্রিসভায় আওয়ামী লীগের শরিক দলগুলোর নেতাদের নেওয়া হয়। স্বল্প পরিসরের ওই মন্ত্রিসভা সরকারের দৈনন্দিন কার্যক্রম পরিচালনার দায়িত্ব পালন করে।

নির্বাচনকালীন সেই সরকারে বিএনপিকেও অংশ নেওয়ার আমন্ত্রণ জানায় আওয়ামী লীগ। তবে বিএনপি সে সময় এই প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়ে ভোট বর্জনের পাশাপাশি নির্বাচন ঠেকানোর চেষ্টা চালায়। তুমুল সহিংসতার মধ্যে নিম্ন ভোটার উপস্থিতিতে সেই নির্বাচন হয়।

এরপর বিএনপি ২০১৮ সালের ডিসেম্বরের একাদশ সংসদ নির্বাচনে আসে আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনেই। তবে এবার দশম সংসদ নির্বাচনের আগের মত নির্দলীয় সরকারের দাবিতে ফিরে গেছে তারা। সরকার এবারও সেই দাবি নাকচ করছে।

এর মধ্যে হঠাৎ করেই নির্বাচনকালীন সরকারের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা তৈরি হয়েছে। গত ৭ মে নির্বাচনকালীন সরকারে বিএনপিকে অংশ নেওয়ার প্রস্তাব বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ইতিবাচক সাড়া দেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।

সেদিন তিনি বলেন, “কোনো বিষয়ে সিদ্ধান্ত যদি নিতে হয়, তাহলে সংবিধানের মধ্যেই থাকতে হবে। সংবিধানে ছাড় দেওয়ার কোনো সুযোগ থাকলে আপনি যেটা বললেন, এটাতে কোনো অসুবিধা নেই।

“বিএনপি যদি বলে ‘আমরা নির্বাচনে আসব’… নির্বাচনে আসলে তখন এক কথা। তারা নির্বাচন করবেই না তত্ত্বাবধায়ক ছাড়া। তারা এই সংসদকে চায় না। মন্ত্রিসভা, প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ চায়। এসব শর্তারোপের মধ্যে আমরা কীভাবে বলব যে, আপনারা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় নিতে আসুন বা অন্য কোনো মন্ত্রণালয় আপনাদের দিচ্ছি? তাদের তো সম্পূর্ণ উত্তর আর দক্ষিণ মেরুর অবস্থান।” 

দুই দিন পর এক প্রতিক্রিয়ায় বিএনপি মহাসচিব সাংবাদিকদের জানান, নির্বাচনকালীন সরকারে যোগ দেওয়ার বিষয়টি তাদের ভাবনায় নেই।

তিনি বলেন, ‘‘আপনারা কি বিশ্বাস করেন? ২০১৮ সালে শেখ হাসিনাকে বিশ্বাস করে আমরা তার সঙ্গে সংলাপে বসেছিলাম। সেই সংলাপে যে সমস্ত কথা তিনি দিয়েছিলেন সেগুলোর একটাও তারা রক্ষা করেননি।

“সুতরাং ওবায়দুল কাদের সাহেবের কথায় আস্থা রাখা, বিশ্বাস করা– এটার প্রশ্নই উঠতে পারে না। এগুলোকে আমি মনে করি, এটা আরেকটি চক্রান্ত জনগণকে বিভ্রান্ত করবার। তারা বলবে যে এই তো আমরা প্রস্তাব দিয়েছি, ওরা শুনছে না, যাচ্ছে না…।”

এর জবাবে ১০ মে কাদের বলেন, “বিএনপিকে সংলাপ এবং নির্বাচনকালীন সরকারে ডাকা হয়নি। এখানে প্রলোভনের ফাঁদের প্রশ্ন আসে কেন?

ওই আলোচনার সূত্র ধরে সোমবার এক সাংবাদিকের প্রশ্নে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের বর্তমান অবস্থান স্পষ্ট করেন।

নির্বাচনের আগে কোনো চাপ আছে কি না– এমন প্রশ্নের উত্তরে শেখ হাসিনা বলেন, “নির্বাচন আসতেছে, আমি কি ভয় পাব? কেনো ভয় পাব? আমি জনগণের জন্য কাজ করছি জনগণ যদি ভোট দেয় আছি, না দিলে নাই। আমাদের যে টার্গেট, সেটার মধ্যে বাংলাদেশ ডেভেলপিং কান্ট্রির মর্যাদা পেয়েছে।

“আর ইলেকশন করব এই কারণে যে, আমি ২৪-এ করতে পারি নাই করোনাভাইরাসের কারণে, আমি ২৬-এ করে দিয়ে যেতে চাই।”

অর্থনীতির বিভিন্ন সূচকে অগ্রগতি বজায় রেখে ২০২৪ সালে জাতিসংঘের তালিকায় স্বল্পোন্নত থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের কথা ছিল বাংলাদেশের। কিন্তু করোনাভাইরাস মহামারীর ধাক্কায় সৃষ্ট ক্ষতির কারণে সেই লক্ষ্য দুবছর পিছিয়ে ২০২৬ সাল করা হয়েছে, সে কথাই শেখ হাসিনা বলছিলেন।

আন্দোলনের টাকা কোথা থেকে আসে?

বিএনপির আন্দোলনের প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “তারা মাইক লাগিয়ে আন্দোলন করেই যাচ্ছে, সরকার হটাবে, আমরা তো তাদের কিছু বলছি না। আমরা যখন বিরোধী দলে ছিলাম আমাদেরকে কি নামতে দিয়েছে? গ্রেনেড হামলা করেও হত্যা করার চেষ্টা করেছে। ২১ হাজার নেতাকর্মী আমাদের হত্যা করেছে। আগুনে পুড়িয়ে পুড়িয়ে মানুষ হত্যা করেছে।”

২০১৩-১৫ সালে বিএনপির আন্দোলনের সময় জ্বালাও-পোড়াওয়ের কথা মনে করিয়ে দিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, “নির্বাচন ঠেকাতে পাঁচশ স্কুল পুড়িয়ে দিয়েছে, সাড়ে তিন হাজার লোক আগুনে পোড়া, তিন হাজার আটশটি গাড়ি পুড়িয়েছে, ছয়টি রেল পুড়িয়েছে, নয়টা লঞ্চ পুড়িয়েছে, ৭০টা সরকারি অফিস পুড়িয়েছে।

“তারপর জ্বালাও-পোড়াও এগুলো করে গেছে। আন্দোলন করুক, মানুষ আনুক, এতে কোনো সমস্যা নাই। শুধু জ্বালাও পোড়াও যদি করতে আসে, কোনো মানুষকে যদি পোড়ায়, তাকে ছাড়ব না। মানুষের ক্ষতি আর করতে দেব না। পোড়া মানুষগুলোর কষ্ট দেখলে আপনাদের কষ্ট হয় না? এক একটা পরিবার আজকে কি দুরাবস্থায় আছে কেউ কি খবর নিয়েছেন, খবর রাখেন?”

বিএনপির আন্দোলনের অর্থায়ন নিয়ে প্রশ্ন তুলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আর কার কথায় আন্দোলন করছে, কোথা থেকে টাকা পাচ্ছে? বাংলাদেশের মানুষ কি অন্ধ হয়ে গেছে? চোখে দেখে না? হাজার হাজার কোটি টাকা তো লোপাট করে নিয়েই গেছে।

“আর কাদের মদদে করছে সেটা একটু খোঁজ নেন না। এত টাকা কোথায় পাচ্ছে, এই যে লোক নিয়ে আসে, প্রতিদিন মাইক লাগিয়ে বক্তব্য দিচ্ছে এগুলো তো বিনা পয়সায় আর হচ্ছে না। কত টাকা পাচ্ছে, কত লোক আনছে, মোটর সাইকেলে কত লোক চড়বে, সেসব হিসাব তো আছে। সেগুলো আপনারা দেখেন না কেন? জিজ্ঞাসা করেন। প্রতিদিন তাদের এই আন্দোলন।”

রাস্তা বন্ধ করে আন্দোলন করার প্রসঙ্গ তুলে ধরে সরকার প্রধান বলেন, “গাজীপুরে রাস্তা বন্ধ করে মিটিং হল; কোন এক সংবাদপত্রে প্রশ্ন তুলেছে? প্রতিদিন বিএনপি যে অর্থনৈতিক হার্ট অব দ্য সিটি, সেইখানে বিএনপি যে তাদের অফিসের সামনে রাস্তা বন্ধ করে মিটিং করে, এই যে জ্ঞানী লোক কথা বললেন, এই দৃশ্য চোখে পড়ে না? প্রেসক্লাবের সামনে, পুরানা পল্টনে, সব জায়গায় রাস্তা বন্ধ করে আন্দোলন করে, এটা চোখে পড়ে না?

“যারা এই কথাগুলো বলেছে, তাদের কাছে আমার প্রশ্ন, এটা তো নির্বাচনী প্রচার, নির্বাচনী প্রচারে এমন হতে পারে। বিএনপি রাস্তা বন্ধ করে আন্দোলন করে, আমি জানি এই আন্দোলন করে কোথাও থেকে লাভবান হচ্ছে। যত পারে আন্দোলন করুক, আমার কোনো ব্যাপার না। আমি আমার জনগণের সঙ্গে আছি। জনগণের জন্য কাজ করে যাচ্ছি, জনগণের আস্থা বিশ্বাসই আমার একমাত্র শক্তি।”

দেশের মানুষকে ভালো রাখার জন্যই কাজ করে যাচ্ছেন মন্তব্য করে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, “আমার তো হারাবার কিছু নেই, বাবা মা, ভাই, সব হারিয়েছি। আমার কী আর হারাবার আছে? আমি আমার দেশের জন্য কাজ করে যাচ্ছি। যারা আমার দুর্বলতা খোঁজে, মানি লন্ডারিং করেছে তো খালেদা জিয়ার দুই ছেলে। ৪৪ কোটি টাকা তো উদ্ধার করে নিয়ে আসছি।

“এখনও বিএনপির বহু নেতারা টাকা বিদেশের ব্যাংকে জমা আছে, কারও কারও টাকা ফ্রিজ করা আছে। মানি লন্ডারিং করে কারা টাকা বিদেশে নিয়ে যেয়ে বড় বড় নাম কিনেছে, সেটাও খুঁজে বের করেন আপনারা। এটা করতে তো আপনাদের দেখি না।”