আজমতের ভাষ্য, নির্বাচনে পরাজিত হওয়ায় তাকে ‘সান্ত্বনা দিয়ে দুঃখ না পাওয়ার জন্য’ বলেছেন প্রধানমন্ত্রী।
Published : 28 May 2023, 08:30 PM
গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে নৌকার পরাজয়ের তিন দিনের মাথায় গণভবনে গিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করেছেন গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. আজমত উল্লা খান।
রোববার দুপুরে গণভবনে এই সাক্ষাতের সময় তিনি বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে নিজের লেখা দুটি বই প্রধানমন্ত্রীকে উপহার দেন বলে প্রধানমন্ত্রীর উপ প্রেস সচিব হাসান জাহিদ তুষার জানান।
তুষার বলেন, “তিনি তার লেখা দুটি বই ‘বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বগুণ আদর্শ ব্যক্তি ও জাতি গঠনে অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত’ এবং ‘রাজনীতির মহাকবি স্বাধীন বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান’ প্রধানমন্ত্রীকে হস্তান্তর করেন এবং কিছুক্ষণ একান্তে কথা বলেন।”
আজমত পরে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ‘রাজনীতির মহাকবি স্বাধীন বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান’ বইটি প্রকাশিত হয় ২০২১ সালে। আর পরের বছর ২০২২ সালে প্রকাশিত হয় ‘বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বগুণ আদর্শ ব্যক্তি ও জাতি গঠনে অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত’ বইটি। প্রতিটি বই প্রায় ৬০০ পৃষ্ঠার।
নির্বাচনী হলফ নামায় আজমত লিখেছেন, এ দুটি বই থেকে তার বছরে এক লাখ টাকা আসে।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের প্রশ্নে আজমত জানান, রোববার বেলা ১২টার দিকে তিনি গণভবনে যান। প্রায় আধা ঘণ্টার মত তিনি সেখানে ছিলেন।
এই আওয়ামী লীগ নেতার ভাষ্য, নির্বাচনে পরাজিত হওয়ায় তাকে ‘সান্ত্বনা দিয়ে দুঃখ না পাওয়ার জন্য’ বলেছেন প্রধানমন্ত্রী। নির্বাচনে জামায়াত-বিএনপির বিভিন্ন কর্মকাণ্ড নিয়েও কথা বলেছেন।
“সংগঠনকে শক্তিশালী করার জন্য এবং জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে দলকে কীভাবে আরো শক্তিশালী করা যায়, সেই ব্যাপারে পরামর্শ দিয়েছেন,” বলেন আজমত।
টঙ্গী পৌরসভার ১৮ বছরের চেয়ারম্যান আজমত উল্লা খানকে ২০১৩ সালে গাজীপুর সিটির প্রথম নির্বাচনেও সমর্থন দিয়েছিল আওয়ামী লীগে। কিন্তু সেই নির্বাচনে ১ লাখ ৬ হাজার ভোটে হেরে যান বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী আবদুল মান্নানের কাছে।
এরপর ২০১৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী করে সাবেক উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলমকে, যিনি ২০১৩ সালেও মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন; পরে দলের চাপে আজমতকে সমর্থনের ঘোষণা দেন, যদিও তাতে দলীয় প্রার্থীর জয় আসেনি।
আজমত না পারলেও জাহাঙ্গীর বিএনপির প্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকারকে দুই লাখের বেশি ভোটে হারিয়ে মেয়র নির্বাচিত হয়েছিলেন। কিন্তু এক ঘরোয়া বৈঠকে বঙ্গবন্ধু ও একাত্তরের শহীদদের নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করার অভিযোগে তাকে দল থেকে বের করে দেওয়া হয়, বরখাস্ত করা হয় মেয়র পদ থেকেও।
এবারের নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগ দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ না করার শর্তে জাহাঙ্গীরকে ক্ষমা করে দিলেও নৌকার মনোনয়ন দেয় ২০১৩ সালে হেরে যাওয়া আজমতকেই।
তাতে ফের বিদ্রোহ করে বসেন এক সময়ের ছাত্রলীগ নেতা জাহাঙ্গীর, নিজের সঙ্গে মা জায়েদা খাতুনের নামেও মনোনয়নপত্র কেনেন। শেষ পর্যন্ত ঋণ খেলাপির অভিযোগে জাহাঙ্গীরের মনোনয়নপত্র বাতিল হয়, দল থেকেও ফের তাকে বহিষ্কার করা হয়।
তবে তার মায়ের প্রার্থিতা টিকে যায়। দলকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে মাকেই ভোটের খেলায় জিতিয়ে আনেন জাহাঙ্গীর।
আগের নির্বাচনে বিএনপি নেতার কাছে হারলেও এবার বিএনপিবিহীন নির্বাচন প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা আজমতের জন্য বড় সুযোগ হিসেবেই দেখছিলেন অনেকে। কিন্তু এবারও হেরে বসেছেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির এই সদস্য।
২৫ মের নির্বাচনে টেবিল ঘড়ি প্রতীকে জায়েদা পেয়েছেন ২ লাখ ৩৮ হাজার ৯৩৪ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আজমত উল্লা পেয়েছেন ২ লাখ ২২ হাজার ৭৩৭ ভোট। অর্থাৎ স্বতন্ত্র প্রাথী জায়েদার কাছে নৌকার প্রার্থী হেরেছেন ১৬ হাজার ১৯৭ ভোটে।
ভোটের চ্যালেঞ্জে মায়ের জয়ের পর জাহাঙ্গীর বলেছেন, গাজীপুরে নৌকার নয়, ব্যক্তির পরাজয় হয়েছে।
আর বিজয়ী প্রার্থীকে অভিনন্দন জানিয়ে আজমত উল্লা খান বলেছেন, “আমার রেজাল্ট যা হয়েছে, আমি রেজাল্ট মেনে নিয়েছি। এবং যিনি বিজয়ী হয়েছেন আমি তাকে অভিনন্দন জানাই।”